স্থানীয় সংবাদ

চিতলমারীতে ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগে স্কুল শিক্ষকের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু

বাগেরহাট প্রতিনিধি ঃ নানা অজুহাতে শ্রেনী কক্ষে একা পেয়ে দশম শ্রেনীর শিক্ষার্থীকে যৌন হয়রানীর অভিযোগে বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার চরবানিয়ারী মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক তুহিন শুভ্র গোলদারের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মাকর্তার নির্দেশে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বুধবার থেকে এ তদন্ত শুরু করেছেন। অভিযোগ উঠেছে দীর্ঘদিন ধরে দশম শ্রেণীর এক শিক্ষার্থীকে ওই শিক্ষক যৌন হয়রানি করে আসছে। বিষয়টি মৌখিকভাবে ও প্রধান শিক্ষককে লিখিতভাবে বলেও কোন প্রতিকার না পাওয়ায় ওই শিক্ষার্থীর বাবা গত ১৬ নভেম্বর শিক্ষকের বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন শিক্ষার্থী। লিখিত এ অভিযোগ দিলেও বহাল তবিয়াতে রয়েছে অভিযুক্ত শিক্ষক তুহিন শুভ্র গোলদার। এখানে অভিযোগ ওঠে বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রঞ্জন কুমার বাড়ৈ ও স্থানীয় কয়েকজন কতিথ প্রভাবশালী ব্যক্তি বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেন বলে শিক্ষার্থীর পিতা জানান। অবশেষে লিখিত অভিযোগের প্রায় ১০ দিন পরে বুধবার এ বিষয়ের তদন্তের জন্য ওই শিক্ষার্থী ও তার পরিবার এবং অভিযুক্ত শিক্ষকদের ডেকেছেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা। দশম শ্রেণীর ওই শিক্ষার্থীর নিজ হাতে লেখা অভিযোগপত্রে জানা গেছে, তাদের ব্যবসা শিক্ষা বিভাগে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কম। মাঝে মধ্যে সে একা থাকায় শিক্ষক তুহিন শুভ্র গোলদার তার সাথে অশ্লীল ও নোরা আচরণ করেন। এরই ধারাবাহিকতায় গত ১৪ আগস্ট তার ব্যবসা শিক্ষা বিভাগের ৪৫ মিনিটের ক্লাস চলছিল। ওই দিন সে ক্লাসে একা থাকায় শিক্ষক তুহিন শুভ্র গোলদার তার সাথে জোর করে ধস্তধস্তি করেন। তখন সে ক্লাস থেকে বেরিয়ে কমন রুমে গিয়ে কান্না করতে থাকে। এ সময় তার এক সহপাঠি সব কিছু শুনে অপর সহকারি শিক্ষক রওশনারার কাছে বিষয়টি খুলে বলে। বিষয়টি শুনে ওই শিক্ষক ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রঞ্জন কুমার বাড়ৈ ও ইসলাম ধর্মীয় শিক্ষক আশ্রাফুজ্জামানকে জানান। শিক্ষকেরা বিষয়টি চেপে যাওয়ার জন্য শিক্ষার্থীকে চাপ প্রয়োগ করেন। তার কিছুদিন পর শিক্ষকরা ছাত্রীটির কাছে লিখিত অভিযোগপত্র চায়। পরে ওই শিক্ষার্থী ৭ সেপ্টেম্বর প্রধান শিক্ষক বরাবরে লিখিত অভিযোগ দেয়। এ বিষয়ে ২ নভেম্বর শিক্ষার্থীর বাবা স্কুলে গেলে প্রধান শিক্ষক ও ধর্মীয় শিক্ষক অভিযোগপত্রের কথা অস্বীকার করেন। তার বাবা মোবাইলের ফোন রেকডের্র মাধ্যমে তার করা লিখিত অভিযোগটি উদ্ধার করেন। এক পর্যায়ে শিক্ষার্থীর পিতা গত ১৬ নভেম্বর চিতলমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর শিক্ষক তুহিন শুভ্র গোলদারের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেন। ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থী সংবাদকর্মীদের জানান, শিক্ষক তুহিন শুভ্র গোলদার তার বাবার মতো। দিনের পর দিন যৌন হয়রানি সহ্য করতে না পেরে সে অভিযোগ করেছে। সে সুবিচার চায়। যাতে আর কোন শিক্ষার্থী এ রকম পরিস্থিতির সম্মূখিন না হয়। শিক্ষার্থীর পিতা বলেন, ‘নোটিশের মাধ্যমে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ মফিজুর রহমান আমাদের ডেকেছেন। আমরা বুধবার বেলা ১১ টায় স্বপরিবারে এসে বিকেল ৩টা পর্যন্ত অফিসের বারান্দায় বসেছিলাম। দফায় দফায় তিনি আমাদের কথা শুনেছেন। আমি আমার মেয়ের যৌন হয়রানীর বিচার চাই। এ দিকে চরবানিয়ারী মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক তুহিন শুভ্র গোলদার জানান, তিনি নির্দোষ। তাঁকে ফাঁসিয়ে একটি চক্র অর্থ আদায়ের চেষ্টা চালাচ্ছে। অভিযোগের তদন্তকারী কর্মকর্তা মোঃ মফিজুর রহমান বলেন, শিক্ষার্থীর পিতার অভিযোগের প্রেক্ষিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার লিখিত নির্দেশে বিষয়টির প্রাথমিক তদন্ত শুরু করা হয়েছে। এ ঘটনায় অধিকতর তদন্ত হবে। তদন্ত শেষে বিস্তারিত জানা যাবে। এ বিষয়ে চিতলমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ সাজ্জাদ হোসেন জানান, বিষয়টি স্পর্শকাতর। তাই সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তাকে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তদন্ত রির্পোট হাতে পেয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button