ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কর্তৃক উপাধ্যক্ষের বেতন স্থগিত

# দৌলতপুর মুহসিন মহিলা কলেজ #
# বরখাস্তকৃত প্রাক্তন অধ্যক্ষের দূর্নীতি ঢাকতে অবৈধ এই উদ্যোগ #
স্টাফ রিপোর্টার : নগরীর দৌলতপুরে মুহসিন মহিলা কলেজের বরখাস্তকৃত প্রাক্তন অধ্যক্ষ মো আব্দুল লতিফ এর দূর্নীতি ঢাকতে গিয়ে বর্তমান অবৈধ ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নওরোজী কবির কলেজের সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত উপাধ্যক্ষ মো মাহফুজার রহমান এর বেতন স্থগিত করেছেন । সরেজমিনে গিয়ে জানা যায় কলেজের অভ্যন্তরীণ অডিটে সাবেক অধ্যক্ষ মো আব্দুল লতিফ এর বিরুদ্ধে ১কোটি একুশ লক্ষ বিরাশি হাজার ছয় শত চুয়াত্তর টাকা আত্মসাৎ ও প্রশাসনিক অন্যান্য অনিয়মের প্রমান পাওয়ায় তাকে কলেজ পরিচালনা পর্ষদ গত ৩১ জুলাই-২৫ সাময়িক বরখাস্ত করে এবং একই দিনে কলেজের উপাধ্যক্ষ মো মাহফুজার রহমান কে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব প্রদান করা হয়। যা ইতিপূর্বে দৈনিক প্রবাহ সহ বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়। এদিকে মো আব্দুল লতিফ বরখাস্ত থাকা অবস্থায় ১৪ আগষ্ট-২৫ কলেজের ব্যবসায় সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ের সহকারী অধ্যাপক নওরোজী কবির কে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব দিয়ে একটি চিঠি প্রদান করেন । এব্যাপারে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গত ১০ সেপ্টেম্বর-২৫ অবহিত করণ পত্রের মাধ্যমে জানানো হয়েছে অত্র কলেজে নওরোজী কবির’র ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করার কোন সুযোগ নেই এবং তার এই দায়িত্ব গ্রহণ বিধি বহির্ভূত। তবে একই পত্রে উপাধ্যক্ষ মোঃ মাহফুজার রহমান বিধি সম্মত ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় জানিয়েছে । তারপরও অজানা কারণে গত ১৭ নভেম্বর-২৫ কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সভায় উপস্থিত সদস্যদের মতামতকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি তোয়াক্কা না করে কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি অধ্যাপক ইকবাল হোসেন ও নওরোজী কবির জোর করে তার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে ভুতাপেক্ষা নিয়োগ অনুমোদন করেন । জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিষেধ থাকা সত্বেও কেমন করে নওরোজী কবির এর ভুতাপেক্ষা নিয়োগ অনুমোদন করা হলো জানতে চাইলে কলেজের সভাপতি অধ্যাপক ইকবাল হোসেন বলেন, আমি অনেক কিছু ইচ্ছা করলেও পারিনা। কলেজের যেকোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার পূর্বে আমাকে অবহিত করতে হবে নিয়ম থাকলেও বর্তমান পরিচালনা পর্ষদের সদস্য সচিব নওরজি কবির আমাকে অবহিত করেন না। আমি যেটি তাকে নির্দেশনা দিচ্ছি তিনি সেটি না করে নিয়ম ভঙ্গ করছেন। তিনি আরো বলেন , সভাপতি অনুমোদন ব্যতি রেখে আইনের বহির্ভূত এমপিও ভুক্ত একজন শিক্ষকের বেতন বন্ধ করা যায় না। তবে আমি সব সময় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে থেকে তদারকি করতে পারিনা। তিনি বলেন সবকিছুর পিছনেই রাজনীতি চলছে। তবে এমন হঠকারী ভাবে উপাধ্যক্ষের বেতন বন্ধ করায় কলেজের শিক্ষক কর্মচারীর মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে ।
এদিকে উপাধ্যক্ষ পদে মোঃ মাহফুজার রহমান এর এমপিও সম্পন্ন হয়ে বেতন আসলেও বিধি বহির্ভূত ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দাবিদার নওরোজী কবির উপাধ্যক্ষের বেতন কোন কারণ ছাড়াই স্থগিত করে ইএফটিতে কলেজের অন্য সকলের বেতন সাবমিট করেছেন । এই বিষয়ে কলেজ পরিচালনা পর্ষদের শিক্ষকদের সর্বোচ্চ ভোটে নির্বাচিত শিক্ষক প্রতিনিধি সহকারী অধ্যাপক মোঃ জগলুল আলম সভাপতি সাথে বিধি বহির্ভূত ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নওরোজী কবিরকে পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্ত ব্যতিত কোন শিক্ষক কর্মচারির বেতন স্থগিত করার সুযোগ নেই বলায় তাকে শোকজ করেছেন। জানা যায় নওরোজী কবির বিভিন্ন জায়গায় বলেছেন, উপাধ্যক্ষের বেতন হলে তিনি ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পাবেন ফলে সাবেক অধ্যক্ষ মো আব্দুল লতিফ এর সমস্যা হয়ে যাবে । এসব ব্যাপারে দৈনিক প্রবাহের প্রতিনিধির প্রশ্নের জবারে নওরোজী কবির বলেন, কলেজ পরিচালনা পর্ষদের বর্তমান সভাপতি ১৫ আগষ্ট আমাকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কি নোটিশ পাঠিয়েছে ওইটা আমার জানার বিষয় নয়। আমি ইএফটি’তে বেতন শীটে উপাধ্যক্ষর নাম দেইনি। উল্লেখ্য, বর্তমান সভাপতি অধ্যাপক ইকবাল হোসেন ১৫ অক্টোবর-২৫ সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তাহলে কিভাবে ১৫ আগষ্ট নওরোজী কবিরকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিয়োগ দিলেন? নওরোজী কবিরের একতরফা দাপটে কলেজের সর্বস্তরের শিক্ষক কর্মচারী আতঙ্কে আছে এবং তার ভয়ে কেউ মুখ খুলতে চায় না । কেউ কোন যৌক্তিক কথা বলতে গেলেই তিনি বহিরাগতদের কলেজে ডেকে এনে সেই শিক্ষককে অপদস্ত করান । ইতোমধ্যে কলেজ পরিচালনা পর্ষদের একজন শিক্ষক প্রতিনিধির সাথে এরূপ অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটানো হয়েছে বলে সত্যতা পাওয়া গেছে । একাধিক শিক্ষক ও ছাত্রী অভিভাবক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এমন সভাপতি কলেজের উন্নয়ন তো দুরের কথা নিজ স্বার্থে কলেজের ক্ষতিই করবে । মোঃ আব্দুল লতিফ এর আর্থিক দূর্নীতি নিয়ে বিজ্ঞ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এর আমলী আদালত, দৌলতপুরে মামলা চলমান যার নং- সিআর ২৩৯/২৫ ।
এদিকে গত ১৩ জুন- ২৫ আলাদা আলাদা তিনটি নিয়োগ বোর্ডের মাধ্যমে কলেজে ৭ টি শুন্য পদে নিয়োগ পরীক্ষা গৃহীত হয় । পরীক্ষার ২/৩ দিন পরে অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে মো তানভীর আহমেদ ও ল্যাব সহকারী (পদার্থ বিজ্ঞান) পদের হাদিউজ্জামান এই দুজন প্রার্থী তাদের প্রার্থীত পদে নিয়োগ পরীক্ষায় অনিয়মের অভিযোগ এনে সভাপতি বরাবর আবেদন করেন। তাদের অভিযোগের ভিত্তিতে নিয়োগ আপাতত বন্ধ রেখে কলেজ পরিচালনা পর্ষদ তদন্ত কমিটি গঠন করে তদন্ত করায় । কিন্তু তদন্ত কমিটি তাদের প্রতিবেদনে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায় নাই বলে মতামত দিয়ে কলেজ কতৃপক্ষের নিকট তাদের তদন্ত প্রতিবেদন প্রদান করেন । একই সাথে উক্ত দুজন নিয়োগ প্রার্থী দৌলতপুর সিনিয়র সহকারী জজ আদালত, খুলনাতে একই অভিযোগ করে মামলা রুজু করেন যার নং- দেওয়ানী ১১৫/২৫ এবং নিয়োগ কার্যক্রম স্থগিত চেয়ে আদালতে দরখাস্ত দাখিল করেন । কিন্তু আদালত নিয়োগ কার্যক্রম স্থগিত চেয়ে দরখাস্ত নামঞ্জুর করে দিয়ে আদেশ দেন । ফলে কলেজ পরিচালনা পর্ষদ সার্বিক বিষয় আলোচনা করে পদ ভিত্তিক নিয়োগের জন্য সুপারিশ প্রাপ্ত সকলকে নিয়োগ প্রদান করেন । কাগজ পত্র যাচাই করে দেখা যায় বরখাস্তকৃত সাবেক অধ্যক্ষ মো আব্দুল লতিফ অধ্যক্ষ থাকা অবস্থায় জুলাই মাসের ১৬ তারিখের আগেই সকলকে যোগদান করিয়েছেন। ইতোমধ্যে চলমান অডিটে সাবেক অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে সীমাহীন দূর্নীতির প্রমাণ প্রকাশ্যে আসলে তিনি কৌশলে তা ম্যানেজ করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে সাবেক সভাপতি শেখ কামরুজ্জামান এর বিরুদ্ধে মিথ্যা ভিত্তিহীন রটনা রটানো শুরু করেন এবং নিয়োগ নিয়ে মুখরোচক কথা প্রচার করতে থাকেন। এরপর উক্ত অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদের প্রার্থী জনাব মো তানভীর আহমেদ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর একই বিষয় নিয়ে অভিযোগ করলে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিষয়টি তদন্তের জন্য প্রতিনিধি মনোনয়ন করে কলেজে চিঠি পাঠায়। একই বিষয় নিয়ে বিচারিক আদালতে বিচারাধীন রয়েছে বিধায় কলেজ পরিচালনা পর্ষদের তৎকালীন সভাপতি শেখ কামরুজ্জামান হাইকোর্টে রিট করেন এবং মহামান্য হাইকোর্ট জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্ত সংক্রান্ত উক্ত অফিস আদেশ স্থগিত করেন এবং একই বিষয় নিয়ে অন্য কোন কতৃপক্ষের তদন্ত করার আইনগত সুযোগ নেই জানিয়ে আদেশ দান করেন ( রিট নং- ১৫১৩০/২০২৫) । তদন্ত স্থগিত থাকা সত্বেও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড মো নুরুল ইসলাম ও প্রোক্টর ডক্টর ফারুক আহম্মদ গত ৭/১১/২৫ তারিখ কলেজে এসে তদন্ত করে গেছেন। কলেজের সার্বিক পরিবেশ নিয়ে শিক্ষক কর্মচারী, শিক্ষার্থী, ছাত্রী অভিভাবক সহ এলাকার সাধারণ মানুষের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে । তারা সকলেই আশু সমাধানের জন্য যথাযথ কতৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন । অন্যথায় মুহসিন মহিলা কলেজটিতে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হওয়া সহ বড় ধরনের বিশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করছে।


