তফসিল ঘোষণায় গণআকাঙ্খা পুরণ পরবর্তী চ্যালেজ্ঞ স্বচ্ছ নির্বাচন : মিয়া গোলাম পরওয়ার

# ডুমুরিয়া-ফুলতলায় গণসংযোগ ভোটার সমাবেশ ও মহিলা সমাবেশ #
স্টাফ রিপোর্টার ঃ বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামির সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার মধ্য দিয়ে জুলাই আগষ্ট গণঅভ্যূত্থানের গণ আকাঙ্খা পূরণের একটি ধাপে আমরা উপনীত হচ্ছি। এরপরের বড় চ্যালেজ্ঞ সেই নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ হওয়া। নির্বাচন কমিশন, সরকার, সকল রাজনৈতিক দল ও জনগন- সব স্টেক হোল্ডারকে কম্বাইন্ডলি ফেস করে এই চ্যালেজ্ঞ মোকাবেলা করতে হবে।
তিনি বলেন, একটা দল যারা নিজেদের বড় মনে করে। ভোটের আগেই মনে করে ক্ষমতায় চলে গেছি। আমার নির্বাচনী এলাকায় প্রচারণায় গিয়ে নানা আশঙ্কার কথা শুনতে পাচ্ছি। তারা এবার ভোট কেন্দ্রে যেতে দেবেনা। ভোট দিতে বাঁধা দেবে। ব্যালটে বাইরে এনে সিল মেরে নেবে। তিনি বলেন, চব্বিশের আগস্টেই আমার সেই বাংলাদেশকে বিদায় দিয়েছি। সেই বাংলাদেশ আর আমার দেখতে চাইনা। ১৪, ১৮, ২৪ এ জনগন ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেনি। আমার এখন জনগনকে সচেতন করছি। আমরা জামায়াতের পক্ষ থেকে প্রশাসনকে লিখিত ভাবে জানিয়ে এসেছি, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে হবে। সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। ভোট গ্রহণের সাথে সম্পৃক্ত সবাইকে পক্ষপাতহীন হতে হবে। বুধবার (১০ ডিসেম্বর) সকাল ১০টায় খুলনা-৫ আসনের ডুমুরিয়া উপজেলা শরাফপুর ইউনিয়নের মাদারতলায় সড়ক দূর্ঘটনায় নিহত সজিব রায়ের পরিবারের সাথে সমবেদনা ও আহত শিমুল মন্ডল, তনয় মন্ডল এবং সাগর মন্ডলের সাথে সাক্ষাৎ করে চিকিৎসার সার্বিক খোঁজ খবর নিয়ে আর্থিক সহায়তা করে এলাকায় গনসংযোগকালে তিনি এ সব কথা বলেন।
এর আগে সকাল ৮ টায় খুলনা-৫ আসনের ফুলতলা উপজেলাধীন শিরোমণির ডাকাতিয়া পশ্চিম পাড়ায় অনুষ্ঠিত ভোটার সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী দেশের সকল ধর্ম, বর্ণ গোত্রের মানুষের কাছে সবচেয়ে আস্থার দলে পরিণত হয়েছে। জামায়াত ঘোষিত ন্যায় ও ইনসাফের দেশ গড়তে হিন্দু, মুসলিম, খ্রিষ্টানসহ সকল সম্প্রদায়ের মানুষ আজ ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। আর এই ঐক্যবদ্ধ হওয়াটা কেউ কেউ মেনে নিতে পারছেনা। কোথাও কোথাও হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের হুমকি-ধামকি দিচ্ছে। এই হুমকি-ধামকির মানে হলো কর্তৃত্ববাদী শাসনের অবসান হলেও কেউ কেউ আবার কর্তৃত্ববাদী শাসন ফিরিয়ে আনার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। এই ধরণের অপচেষ্টা আগামী নির্বাচনে জনগণ ব্যালট বিপ্লবের মাধ্যমে রুখে দেবে। বিভিন্ন সময়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর জুলুম নির্যাতনের কথা তুলে ধরে গোলাম পরওয়ার আরও বলেন, স্বাধীনতার ৫৪ বছরে একটি দল আপনাদের শুধু তাদের ভোট বাক্স হিসেবে ধরতো। তারা আপনাদের ভোট নিয়ে ক্ষমতায় গিয়ে আবার আপনাদের বাড়ি-ঘর দখল, ঘের দখলসহ বিভিন্ন ধরণের জুলুম নির্যাতন চালিয়েছিল। বর্তমানে আরেকটি দল পুরানো ধাঁচে আপনাদের ভাবতে শুরু করেছে। আগষ্ট পরবর্তী সময়ে আপনাদের উপর বিভিন্ন প্রকার জুলুম নির্যাতন তারা করছে। কিন্তু আপনারা কি বলতে পারবেন দেশ স্বাধীনের পর থেকে জামায়াতের কেউ আপনাদের উপর জুলুম, নির্যাতন, নিষ্পেষন চালিয়েছে। বরং যখনই সুযোগ পেয়েছে জামায়াত আপনাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। তাই আগামী নির্বাচনে সকল হুমকি-ধামকি উপেক্ষা করে আপনারা পাড়া মহল্লায় বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে দাড়িপাল্লার পক্ষে ভোট চাইবেন। তাহলে জামায়াত ঘোষিত নতুন বাংলাদেশে আপনারা সবচেয়ে বেশি ভালো থাকতে পারবেন, সবচেয়ে বেশি নিরাপদ থাকতে পারবেন যেমনটি ছিলো খোলাফায়ে রাশেদার যুগে অমুসলিমরা।
চিত্তরঞ্জন গাইনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন খুলনা জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মুন্সী মিজানুর রহমান, সহকারি সেক্রেটারি মুন্সী মঈনুল ইসলাম, অধ্যাপক মিয়া গোলাম কুদ্দুস ও প্রিন্সিপাল গাওসুল আযম হাদী, জেলা কর্মপরিষদ সদস্য হাফেজ আমিনুল ইসলাম, এডভোকেট আবু ইউসুফ মোল্যা। মানষ রায়ের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন মনিলাল মন্ডল, কালীপদ গাইন, নিতাই চন্দ্র মন্ডল, প্রণব রায়, খোকন চন্দ্র রায় প্রমুখ। এসময় এলাকাবাসীর কাছে সাম্প্রতিক সময়ে পাশ হওয়া শিরোমণির চিংড়ীখালি মোড় থেকে ডাকাতিয়ার পশ্চিম পাড়া পর্যন্ত রাস্তা কার্পেটিং এর খোঁজ খবর নেন।
বেলা ১১টায় আসাননগরে গনসংযোগ ও উঠান বৈঠকে প্রধান অতিথির বক্তৃতা করেন তিনি। ওয়ার্ড সেক্রেটারি আসাবুর রহমান এর সভাপতিত্বে হারুন অর রশীদের পরিচালনায় এতে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন খুলনা জেলা জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি মুন্সি মঈনুল ইসলাম, জেলা কর্মপরিষদ সদস্য এডভোকেট আবু ইউসুফ মোল্লা, উপজেলা আমীর মাওলানা মোক্তার হোসেন, নায়েবে আমীর মাওলানা হাবিবুর রহমান, খুলনা জেলা আইনজীবী সমিতি সাবেক সহ-সভাপতি এডভোকেট আবুল খায়ের সরদার, উপজেলা হিন্দু কমিটির সেক্রেটারি অধ্যক্ষ দেব প্রসাদ মন্ডল। বক্তব্য রাখেন ইউনিয়ন সভাপতি আব্দুল হাকিম, সরদার আবদুল ওয়াদুদ, মাওলানা আজহারুল ইসলাম, হিন্দু কমিটির ইউনিয়ন সেক্রেটারি সূব্রত মন্ডল, নারায়ন চন্দ্র রায় অপূর্ব মন্ডল, মাওলানা আবু তাহের প্রমূখ।
দুপুর ১২টায় সেনপাড়া মাদরাসায় মহিলা সমাবেশ ইউনিয়ন সভাপতি আব্দুল হাকিমের সভাপতিত্বে ইউনিয়ন সেক্রেটারি হারুন অর রশীদের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত হয়। প্রধান অতিথির বক্তৃতা করেন সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার। তিনি বিএনপিকে ইঙ্গিত করে বলেন, নির্বাচনের আগে যারা ক্ষমতায় যাওয়ার কথা ভাবছেন তাদেরকে নিয়ে অবাদ সুষ্ঠু গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়া বড় চ্যালেঞ্জ । আজ বা কাল নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর, নিজেদের বড় দল দাবি করা, নেতাকর্মীরা অস্থির অবস্থা তৈরি করবেন। আর এই অস্থির অবস্থা তৈরীর মধ্য দিয়ে ভোটারদের ভয় ভীতি দেখিয়ে বাঁধা সৃষ্টি করা, ভোট কেন্দ্র দখলের পরিকল্পনার মধ্য দিয়ে নির্বাচিত হওয়া-এই আশংকা সৃষ্টি করেছে। তিনি আরো বলেন, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে, জনগণ যে পরিবর্তন আশা করছে, সেই পরিবর্তনের জন্য জামায়াতে ইসলামী প্রস্তুত রয়েছে। সে জন্য আবাদ গ্রহণযোগ্য সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সকল দলের সম অধিকার নিশ্চিতে লেবেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে হবে। আর এই দায়িত্ব প্রশাসনের। কোন কোন কর্মকর্তা বিশেষ দলের প্রার্থীদের বেশি সুযোগ দিবে এমন প্রত্যাশা নয়। সকলকে সম অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। সেই সঙ্গে দুর্নীতি বিরোধী দিবসে, দুদকের চেয়ারম্যান আহবান করেছেন দেশকে ভালো করতে হলে দুর্নীতিগ্রস্ত প্রার্থীকে লাল কার্ড দেখাতে হবে। এই আহবানে সাড়া দিয়ে, দুর্নীতিগ্রস্ত প্রার্থীদের জনগণ আমল লামা দেখে লাল কার্ড দেখানোর আহ্বান করেন তিনি।
বিকেল ৪টায় সাহস ইউনিয়নের নোয়াকাটি বাজারে অফিস উদ্বোধন অনুষ্ঠানে ইউনিয়ন সভাপতি আব্দুল হান্নানের সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি মাওলানা রবিউল ইসলামের পরিচালনায় প্রধান অতিথি ছিলেন মিয়া গোলাম পরওয়ার।
সন্ধ্যা ৬টায় গুটুদিয়া ইউনিয়নের কোমলপুর স্কুল মাঠে ভোটার সমাবেশ ইউনিয়ন সভাপতি মাওলানা আব্দুর রশীদ আল আজাদের সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি ফরিদুজ্জামানের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথির বক্তৃতা করেন মিয়া গোলাম পরওয়ার। বিশেষ অতিথি ছিলেন খুলনা জেলা আমীর মাওলানা এমরান হুসাইন, সহকারী সেক্রেটারি মুন্সি মঈনুল ইসলাম, জেলা কর্মপরিষদ সদস্য এডভোকেট আবু ইউসুফ মোল্লা, ডুমুরিয়া উপজেলা আমীর মাওলানা মোক্তার হোসেন, উপজেলা নায়েবে আমীর মাওলানা হাবিবুর রহমান, খুলনা আলীয়া মাদরাসার প্রিন্সিপাল ড. মুফতি আব্দুর রহীম, ডুমুরিয়া সদর ছাত্রশিবিরের সভাপতি আবু তাহের, আবু সুফিয়ান, নাজমুল ইসলাম প্রমূখ।


