জাতীয় সংবাদ

বিএনপি ও পক্ষভুক্ত দলগুলোর ২ কোটি নেতাকর্মী ঘরছাড়া: রিজভী

প্রবাহ রিপোর্ট : গত ২৮ অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত সারাদেশে বিএনপি এবং গণতন্ত্রের পক্ষের রাজনৈতিক দলগুলোর ১৩ হাজারের বেশি নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে দাবি করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের আক্রমণে সারাদেশে বিএনপির প্রায় দুই কোটি নেতাকর্মী দিনের পর দিন ঘরছাড়া। গতকাল বুধবার বিকেলে অবরোধের ষষ্ঠ দফার সার্বিক চিত্র তুলে ধরতে গিয়ে ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি। রুহুল কবির রিজভী বলেন, এ সরকার সুষ্ঠু নির্বাচনের বদলে অতীতের মতো প্রহসন করে ক্ষমতায় টিকে থাকতে নির্লজ্জভাবে জুলুম-নির্যাতন, চক্রান্ত, নাশকতা ও মিথ্যাচারের পথ বেছে নিয়েছে। গণতন্ত্রের শেষ চিহ্ন মুছে দিতে গেস্টাপো বাহিনীর আদলে গড়ে তোলা গোয়েন্দা পুলিশ, র‌্যাব বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের বাড়িঘরে সাঁড়াশি অভিযান চালাচ্ছে। গ্রেপ্তার করে তুমুল ভাঙচুর করা হচ্ছে বাড়িঘরে। ‘নিখোঁজ’ বিএনপি নেতাকর্মীদের কারাগারে খুঁজে বেড়াচ্ছেন স্বজনেরা। তিনি বলেন, দেশের প্রতিটি জনপদ-গ্রাম-গঞ্জ-শহর-বন্দরে গ্রেপ্তার আতঙ্ক বিরাজ করছে। একাত্তরের যুদ্ধকালীন সময়ের মতো। সরকার পুলিশ-র্যাবের পাশাপাশি হেলমেট বাহিনী নামিয়েছে। সরকারবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় নেতাকর্মীদের বাড়িতে হামলা ও লুটপাট চালাচ্ছে হেলমেট বাহিনী। রিজভী বলেন, গত ৪০ দিনে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় করা ২৬টি মিথ্যা মামলায় কথিত বিচার কার্যক্রমের নামে বিএনপির ৪১৫ নেতাকর্মীকে সাজা দিয়েছেন আদালত। এখন গায়েবি সাজা দেওয়া হচ্ছে। এখন মৃত-ব্যক্তিকে সাজা দেওয়া হচ্ছে। বিরোধীদল করলে মরেও শান্তি নেই। বিশ্বের ইতিহাসে নজিরবিহীন ঘটনা ঘটেছে গত পরশু বাংলাদেশে। যেখানে মৃত ও গুম হওয়া ব্যক্তিকে সাজা দিয়ে নির্বাচনে অযোগ্য করেছে আদালত। তিনি জানান, এ পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী গত ২৪ ঘণ্টায় ২১ মামলায় সারাদেশে বিএনপি ও এর অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের মোট ৫১৫ জনের বেশি নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আর তফসিল ঘোষণার পর থেকে এ পর্যন্ত ৯৮ মামলায় ৩১৭৫ জনের বেশি নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিভিন্ন দল থেকে নেতা কিনতে সরকার গরুর হাটের মতো দরদাম করছে বলে অভিযোগ করে তিনি বলেন, দেশের জনগণ তফসিল প্রত্যাখ্যান করায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখন ফখরুদ্দীন-মঈনউদ্দিনের মতো তথাকথিত কিংস পার্টি, ভুঁইফোড় পার্টি, ড্রিংকস পার্টি, ছিন্নমূল পার্টি তৈরি করে তাদের দিয়েই তামাশার নির্বাচন মঞ্চস্থ করতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। রুহুল কবির রিজভী বলেন, শেখ হাসিনা তার এজেন্সিগুলো মাঠে নামিয়ে দিয়েছেন তথাকথিত কিংস পার্টি গঠনের জন্য। বিভিন্ন দল থেকে নেতা কিনতে গরুর হাটের মতো দরদাম চলছে। আওয়ামী সরকারের কিংস পার্টিতে যোগ দিতে দেশপ্রেমিক বহু নেতাকে চাপ-প্রলোভন-ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। ছলে বলে কৌশলে, টোপ দিয়ে কাউকে কাউকে বাগানো হচ্ছে। আবার কেউ কেউ জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে না গিয়ে বিরোধীদলের লেবাসে ফ্যাসিবাদের দোসর হয়ে তথাকথিত এইসব কিংস পার্টি, ভুঁইফোড় পার্টি, ছিন্নমূল পার্টি হালুয়া-রুটির ভাগ পাওয়ার লালসায় ফ্যাসিস্টদের বর্তমান আস্তানা গণভবন-বঙ্গভবনে ছুটোছুটি করছেন। রিজভী বলেন, দেশের কৃষক-শ্রমিক, দিনমজুর, স্বল্প আয়ের মানুষ, শ্রমজীবী-কৃষিজীবী, পেশাজীবী, আলেম-ওলামাসহ সব শেণি-পেশার মানুষ এখন মাফিয়া চক্রের শৃঙ্খলে বন্দি। দেশের সব নাগরিক বর্তমানে মানবিক মর্যাদা হারিয়ে, রাজনৈতিক অধিকার হারিয়ে, ভোট প্রয়োগের অধিকার হারিয়ে নিজ দেশেই যখন মাফিয়া চক্রের শৃঙ্খলে বন্দি, তখন কিছু লোক সামান্য খুদ-কুড়ার লোভে তারা বিবেক বিবেচনাহীনভাবে তামাশার নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। এইসব বেইমান দলছুটরা ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হবেন। কিন্তু এসব রং বদলানো পরজীবী রাজনীতিবিদরা জনগণের সংকেতবার্তা টের পাচ্ছেন না। জনগণ খুব দ্রুতগতিতে ধেয়ে যাচ্ছে সরকারের সিংহাসন ধুলোয় লুটিয়ে দিতে। জনগণের সেই পদচিহ্ন লক্ষ্য করতে পারছে না এই নব্য রাজাকারেরা।

 

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button