এ যেন টাকার পাহাড় : এমপির বাড়িতে মিলল ৩৫৩ কোটি

সিনেমার কাহিনীতে দর্শক এত দিন যা দেখেছে ; বাস্তবে তা মিলল
প্রবাহ রিপোর্ট ঃ বেশ কয়েক বছর আগে অজয় দেবগনের ‘রেইড’ ছবিতে দেখা গিয়েছিল এমন চিত্র। একজন আয়কর কর্মকর্তা এক প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতার বাড়িতে অবৈধ অর্থের খোঁজে তল্লাশি চালিয়ে বিপুল স্বর্ণালঙ্কার ও টাকা উদ্ধার করেছিলেন। টাকা উদ্ধারের শ্বাসরুদ্ধকর কয়েকদিনের অভিযানের সেই পটভূমি নিশ্চয়ই সিনেমাপ্রেমীরা ভুলে যাননি। এবার সেই সিনেমার কাহিনীই যেন বাস্তবে ধরা দিলো ভারতের ঝাড়খ- ও ওড়িশায়। কংগ্রেসের রাজ্যসভার সদস্য ধীরাজ সাহুর বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ৩৫৩ কোটি রুপি। রোববার রাতে হিসেব শেষে ভারতীয় আয়কর দপ্তর থেকে উদ্ধারকৃত অর্থের এই পরিমাণের তথ্য সংবাদমাধ্যমকে নিশ্চিত করা হয়েছে। মোট ১৭৬টি ব্যাগে এবং ৩টি ব্যাংক থেকে বিপুল পরিমাণ এই অর্থ উদ্ধার করা হয়েছে। গণনার জন্য আনা হয়েছিল ৪০টি মেশিন। ৯টি দল টানা ৫ দিন ধরে রুপি গোনার কাজ করেছে। এই দলে ২৪ জন কর্মকর্তাসহ ব্যাংক ও পুলিশ সদস্যরাও ছিলেন। নোটবন্দির পরও যে ব্যাপক পরিমাণ দুর্নীতি হয়েছে, তা এই ঘটনা থেকে স্পষ্ট বলে কটাক্ষ করেছেন বিজেপি নেতারা। প্রসঙ্গত, গত বুধবার কংগ্রেসের রাজ্যসভার এমপি ধীরাজ সাহুর ঝাড়খ- ও ওড়িশার বাড়িতে হানা দেয় আয়কর দপ্তর। তল্লাশির প্রথম দিনেই আলমারি ও বাক্স থেকে বান্ডিল বান্ডিল অর্থ উদ্ধার হয়। তারপর সেই অর্থ গুনতে ব্যাংক থেকে নিয়ে আসা হয় মেশিন। আয়কর কর্মকর্তা থেকে প্রশাসনের কর্মীরা গণনার কাজে হাত লাগান। তারপর টানা কয়েকদিন ধরে গণনার শেষে অর্থের যে পরিমাণ দাঁড়ায় তা শুনলে অনেকেরই চোখ কপালে উঠবে। এদিকে কংগ্রেস দাবি করেছে, দলের সঙ্গে সাংসদের ব্যবসার কোনো যোগসূত্র নেই। দলের পক্ষ থেকে প্রবীণ নেতা জয়রাম রমেশ এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে লিখেছেন, “ধীরাজ সাহুর ব্যবসার সঙ্গে জাতীয় কংগ্রেসের কোনো সম্পর্ক নেই। একমাত্র সংশ্লিষ্ট এমপির ব্যাখ্যা দিতে পারবেন কীভাবে এত অর্থ উদ্ধার হল তার বাড়ি থেকে।” আয়কর দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ওড়িশার একটি মদ প্রস্তুতকারক সংস্থা ও তার সঙ্গে যুক্ত নানা দোকানে আয় বহির্ভূত সম্পত্তির সূত্র ধরেই এই অভিযান চালানো হয়। ঝাড়খ-ের বোকারো ও রাঁচিতে অভিযান চালানো হচ্ছে। এছাড়া ওড়িশার সম্বলপুর ও সুন্দরগড়েও তল্লাশি চালানো হচ্ছে। ঝাড়খ-ের এমপি ধীরজ সাহু এই দুর্নীতির সঙ্গে সরাসরি যুক্ত বলে অভিযোগ রয়েছে। কে এই ধীরাজ সাহু ঃ বিবিসির এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ধীরাজ সাহুর জন্ম ১৯৫৫ সালে রাঁচীতে। তার বাবা রায় সাহেব বলদেব এবং মা সুশীলা দেবী। ধীরাজের বাবা ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। পরিবারের সঙ্গে কংগ্রেস-যোগ থাকায় ধীরাজেরও ছাত্র রাজনীতিতে উত্থান হয় যুব কংগ্রেসের হাত ধরেই। ১৯৭৭ সালে রাজনীতির জগতে পা রাখেন ধীরাজ। ধীরাজের ভাই শিবপ্রসাদ সাহুও কংগ্রেস নেতা। দু’বার রাঁচী থেকে এমপি হয়েছেন। ধীরাজ স্নাতক পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। তার পরিবার ঝাড়খ-ের লোহারডাগাতে থাকে। ২০১০ সালে প্রথমবার রাজ্যসভার এমপি হন ধীরাজ। ২০১৮ সালে দ্বিতীয়বার নির্বাচিত হন তিনি। ২০১৮ সালে রাজ্যসভা নির্বাচনের জন্য যে হলফনামা দিতে হয়েছিল ধীরাজকে, সেখানে তিনি জানিয়েছিলেন, তার সম্পত্তির পরিমাণ ৩৪ কোটি ৮৩ লাখ রুপি। এছাড়া ধীরাজ জানিয়েছিলেন, ২০১৬-১৭ আর্থিক বর্ষে তার আয়ের পরিমাণ ছিল এক কোটি রুপি। ধীরাজের হলফনামা অনুযায়ী, তার নামে মোট দেড় কোটি রুপির চারটি গাড়ি রয়েছে। ৮৭ লাখ রুপির একটি বিএমডব্লিউ, ৩২ লাখ রুপির ফরচুনার, ২৪ লাখ রুপির রেঞ্জ রোভার, সাড়ে ৮ লাখ রুপির পাজেরো।