দু’দিনে ৪০ থেকে ৫০ টাকা কমেছে পেঁয়াজের দাম
প্রবাহ রিপোর্ট : নতুন মুড়িকাটা পেঁয়াজ উঠতে শুরু করায় এবং ক্রেতারা পেঁয়াজ কেনা কমিয়ে দেওয়ায় রাজধানীর বাজারগুলোতে কমতে শুরু করেছে নিত্যপ্রয়োজনীয় এই পণ্যটির দাম। দুই দিনের ব্যবধানে প্রকারভেদে পেঁয়াজের দাম কমেছে ৩০-৫০ টাকা। গতকাল মঙ্গলবার সকালে রাজধানী কারওয়ান বাজারের পাইকারি পেঁয়াজের বাজার ঘুরে এমন চিত্রই দেখা যায়। বাজার ঘুরে দেখা যায়, বর্তমানে প্রতি কেজি মুড়িকাটা নতুন পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৯০-১০০ টাকা, পুরান পাবনার পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৭০ টাকা, রাজশাহীর পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকা এবং ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকা দরে। এই একই বাজারে গত দুই দিন আগে প্রতি কেজি নতুন মুড়িকাটা পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছিল ১৪০ টাকা, পাবনার পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছিল ২০০ টাকা, রাজশাহীর পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছিল ১৯৬ টাকা ও ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছিল ১৮০ টাকা দরে। পেঁয়াজের দাম কমার কারণ জানতে চাইলে আব্দুল মান্নান নামের এক বিক্রেতা বলেন, বাজারে মুড়িকাটা পেঁয়াজ আসতে শুরু করেছে। নতুন এই পেঁয়াজের সরবরাহ বাড়ায় দাম কমতে শুরু করেছে। এছাড়া পেঁয়াজের দাম বাড়ায় ক্রেতারাও পেঁয়াজ কেনা কমিয়ে দিয়েছিলেন। পেঁয়াজ যেহেতু পচে যায়, বেশিদিন রাখা যায় না। পেঁয়াজের দাম কমার এটিও একটি কারণ। পেঁয়াজের দাম কমায় ব্যবসায়ীদের লোকসান হচ্ছে বলেও জানান তিনি। আব্দুল মান্নান বলেন, দাম যখন বেশি ছিল তখন পেঁয়াজ কিনেছি। ক্রেতা না থাকায় সব বিক্রি করতে পারিনি। এখন দাম কমায় লোকসানে বিক্রি করতে হচ্ছে। ১৮০ টাকা কেজিতে পেঁয়াজ কিনে ১৫০-১৬০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। লেবার খরচ দেওয়ার পর প্রতি কেজিতে লোকসান হচ্ছে ৩০-৩২ টাকা। একই কথা বলেন আনিস নামের আরেক বিক্রেতা। তিনি বলেন, ১৮৮ টাকা করে পেঁয়াজ কিনে ১৭০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। লোকসান হলেও বিক্রি করতে হবে। নইলে নষ্ট হয়ে যাবে। মুড়িকাটা পেঁয়াজ আসায় বাজারে দাম কমছে। পেঁয়াজের দাম কমায় স্বস্তি প্রকাশ করলেও সন্তুষ্ট নন ক্রেতারা। তারা জানান, প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৩০-৪০ টাকা হলে ভালো হতো। বাজারে প্রতিটি জিনিসেরই দাম বেশি। এদিকে বাড়তি দামে পেঁয়াজ বিক্রি, ক্রয়-বিক্রয়ের পাকা রশিদ দেখাতে না পারা ও দৃশ্যমান স্থানে মূল্য তালিকা প্রদর্শন না করার অপরাধে রাজধানীর কারওয়ান বাজারের তিন পেঁয়াজ ব্যবসায়ীকে জরিমানা করেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। গতকাল মঙ্গলবার সকালে কারওয়ান বাজারের পাইকারি পেঁয়াজ বাজারে অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে চালানো অভিযানে এই জরিমানা করা হয়। অভিযানে নেতৃত্ব দেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. আব্দুস সালাম। এ সময় বাড়তি দামে পেঁয়াজ বিক্রি ও ক্রয়-বিক্রয়ের পাকা রশিদ দেখাতে না পারার অপরাধে কুতুবপুর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মো. লুৎফর রহমান ও আজাদ নামের দুই বিক্রেতাকে ১৫ হাজার করে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এছাড়া দৃশ্যমান স্থানে মূল্য তালিকা প্রদর্শন না করার অপরাধে বায়তুল আমিন দোকানের মো. হাবিব ম-লকে আরো ১৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। জরিমানা পাওয়া আজাদ বলেন, পাকা রশিদ রাখার বিষয়টি আমরা জানতাম না। মহাজনরা আমাদের জানাননি। এটা আমাদের ভুল হয়েছে। এখন থেকে আমরা পাকা রশিদ রাখবো। পাকা রশিদ ছাড়া পেঁয়াজ কেনা-বেচা করবো না। অভিযান শেষে আব্দুস সালাম বলেন, পেঁয়াজের মূল্য স্থিতিশীল এবং সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে আজ ঢাকা মহানগরে ভোক্তা অধিদপ্তরের তিনটি টিম কাজ করছে। তারই অংশ হিসেবে আমি কারওয়ান বাজারে অভিযান পরিচালনা করলাম। এখানে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে দেখলাম, তারা পেঁয়াজ কোথা থেকে নিয়ে আসছেন, কোথায় বিক্রি করছেন এ সংশ্লিষ্ট যাবতীয় তথ্য সংরক্ষণ করছেন না। মূল্য তালিকাও দৃশ্যমান স্থানে প্রদর্শন করছেন না। এজন্য তিনজন ব্যবসায়ীকে ১৫ হাজার করো মোট ৪৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী পেঁয়াজের দাম বাড়িয়েছে জানিয়ে তিনি আরো বলেন, যখন ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করলো, তখন কোনো লেবার খরচ বাড়েনি। তারপরও অতি মুনাফার লোভে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী এর দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। তাদের আমরা মনিটরিং করছি এবং আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে। এ সময় তিনি আগামী পাঁচ-ছয় দিনের মধ্যে পেঁয়াজের বাজার স্বাভাবিক হয়ে যাবে আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, বাজারে নতুন পেঁয়াজ উঠতে শুরু করেছে। সরবরাহও বেড়েছে। আশা করি বাজার স্বাভাবিক হয়ে যাবে। পেঁয়াজের বাজার অস্বাভাবিক বৃদ্ধির পর প্রতিদিন সারাদেশের বাজারে অভিযান পরিচালনা করে আসছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। ১১০ টাকার পেঁয়াজ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৫০ টাকা। এক রাতের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম ঊর্ধ্বমুখী থাকায় হতাশ প্রকাশ করেছে ক্রেতারা। তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, পাইকারি বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ায় বাধ্য হয়ে দাম বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।