ভোট প্রতিহত করার চেষ্টা করলে সাত বছর জেল : ইসি আনিছুর

প্রবাহ রিপোর্ট : নির্বাচন কমিশনার মো. আনিছুর রহমান বলেছেন, ভোট প্রতিহত করার অধিকার কারো নেই। কেউ প্রতিহত করার চেষ্টা করলে সাত বছরের জেল হবে। এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পুলিশ, ম্যাজিস্ট্রেটকে যথাযথ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, মাঠেও একই কথা বলেছি। কেউ ভোটে নাও আসতে পারেন, ভোট দিতেও নাও পারেন। ভোট প্রতিহত করার অধিকার কারো নাই। কিন্তু অন্যকে প্রতিহত করলে আমরা এবার সংশোধনী এনেছি যে সাত বছর পর্যন্ত জেল বা অর্থদ- করার জন্য। পুলিশ, ম্যাজিস্ট্রেট সবাইকে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। আনিছুর রহমান বলেন, দায়িত্ব অবহেলা করলে ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কাউকেই আমরা ছাড় দেব না। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রচারণার সময় সহিংসতার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশনার আনিছুর রহমান বলেন, এর মধ্যে এক স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থক মারা গিয়েছেন। এ ধরনের ঘটনা অনাকাক্সিক্ষত। বিধি লঙ্ঘন করলে কোনও ছাড় দেওয়া হবে না। হেভিওয়েট-লাইটওয়েট বলে কেউ নেই। অভিযোগ পেলেই প্রার্থিতা বাতিলের মতো কঠোর সিদ্ধান্তে চলে যাবো আমরা। গতকাল শনিবার নির্বাচন ভবনে তিন নির্বাচন কমিশনার আহসান হাবিব খান, মো. আলমগীর ও আনিছুর রহমান ইসিতে বৈঠক করেন। পরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন ইসি আনিছুর। এদিন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল ও নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা ঢাকার বাইরে অনুষ্ঠানে ছিলেন। আনিছুর রহমান বলেন, প্রার্থিতা বাতিল হবে, কোনও না কোনও জায়গায় কারও না কারও বিষয়ে এইটুকু আভাস আমি দিয়ে রাখলাম। স্বতন্ত্র প্রার্থীরা কেন মাঠর দাঁড়াতে পারছেন না, ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীরা কেন আচরণবিধি মানছেন না, এমন অভিযোগের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. আনিছুর রহমান বলেন, আমরা ইতোমধ্য বিভিন্ন জেলায় ঘুরে এসেছি। আচরণবিধি বাস্তবায়ন হচ্ছে। আজও (গতকাল শনিবার) আমরা কিছু কঠোর সিদ্ধান্তের আলোচনা করেছি। আরও কিছু তথ্য চেয়েছি। আগামীকাল (আজ রোববার) আরও কিছু তথ্য পেলে কঠোর সিদ্ধান্তে চলে যাবো আমরা। তিনি জানান, আমরা কঠোর সিদ্ধান্তে চলে যাবো। কোনও রকম ছাড় দেওয়া হচ্ছে না। বড়-ছোট সবাইকে একইভাবে দেখছি। সে ক্ষেত্রে আমরা নিরপেক্ষ অবস্থান নেওয়ার জন্য সিদ্ধান্ত নিয়েছি। মাঠে নিরপেক্ষ অবস্থান আছে। কোনও শঙ্কা, ভয়ভীতি বা আনুকূল্য নেই। আমাদের চরম নিরপেক্ষতার জন্য কেউই রেহাই পাবেন না। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য যা যা করা দরকার করে যাবো। একজনের মৃত্যুর বিষয়ে তিনি বলেন, শুনলাম সকালবেলায় তিনি (প্রার্থীর সমর্থক) তার বাড়ি থেকে কোনও একটা জায়গায় যাচ্ছিলেন। পথে তাকে আক্রমণ করা হয়েছে। তারা উভয়েই একই বংশের, তাদের মধ্যে আত্মীয়তা রয়েছে। কিছুদিন আগেও তাদের মধ্যে একটা ঘটনা ঘটেছিল। সে কারণেই হয়েছে, নাকি নির্বাচনের কারণে হয়েছে, এই বিষয়গুলো আমরা খতিয়ে দেখছি। নির্বাচনের কারণে অনেকে ব্যক্তিগত শত্রুতার বিষয়টিও সামনে আনছে। আমরা নিরপেক্ষতার সঙ্গেই দেখবো। এভাবে যে কারও মৃত্যুই অনাকাঙ্ক্ষিত। একটা মৃত্যুও আমরা চাই না। এ জন্য যথেষ্ট গুরুত্ব দিচ্ছি। একটু সময় দেন। বাকিটা আপনারা দেখবেন। তার মতে, শোডাউন করতে পারবে না কেউ। উৎসবমুখর ভোট থাকবে ইনশাআল্লাহ। আমাদের কাছে হেভিওয়েট বা লাইটওয়েট বলে কেউ নেই। যার বিরুদ্ধ অভিযোগ আসবে, তার বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে গতকাল শনিবার দুপুরে সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের শহীদ শামসুদ্দিন সম্মেলন কক্ষে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে নির্বাচন কমিশনার বেগম রাশেদা চৌধুরী বলেন, যারা অস্থিতিশীল অবস্থা ও বিশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টি করে নির্বাচন করবেন তাদের ক্ষেত্রে আমরা জিরো টলারেন্স। কেই যদি আচরণবিধি লঙ্ঘন করে এবং সে অভিযোগ প্রমাণিত হলে তদন্ত কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে সর্বনিম্ন ২০ হাজার, সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা জরিমানা এবং প্রার্থীতা বাতিলও করতে পারি। ইসি রাশেদা বলেন, আমরা সবাইকে সংযত হয়ে কাজ করার জন্য বলেছি, ভোটাররা যাতে ভোট কেন্দ্রে আসে তারা যেন ভয় না পায় সেটা নিশ্চিত করতে হবে। সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনাদের আশ্বস্ত করতে চাই। আপনারা স্বাধীনভাবে কাজ করবেন। আপনাদের যদি ভয় দেখানো হয়, বাঁধা দেওয়া হয় বা আপনাদের ইকুইপমেন্ট নেওয়া হয় এটাও শাস্তির আওতায় এনেছি আমরা। আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ পেলে, সেটা তদন্ত করার জন্য আমাদের ইলেকটোরাল কমিটি মাঠে কাজ করছে। অভিযোগ পেলে তদন্ত রিপোর্ট নির্বাচন কমিশন বরাবর পাঠানো হচ্ছে। এর আগে সকালে নির্বাচন কমিশনার বেগম রাশেদা সুলতানা সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজে প্রিজাইডিং অফিসারদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। এ সময় রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি মো. আনিসুর রহমান, সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা মীর মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান, সিরাজগঞ্জ পুলিশ সুপার মো. আরিফুর রহমান ম-ল ও জেলা নির্বাচন অফিসার শহিদুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।