জাতীয় সংবাদ

আবারও নৌকায় ভোট দিয়ে আ. লীগকে শক্তিশালী করুন : শেখ হাসিনা

রংপুরের মিঠাপুকুরে নির্বাচনী জনসভায় দেওয়া বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান

প্রবাহ রিপোর্ট ঃ আবারও নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগের হাতকে শক্তিশালী করার জানিয়েছেন দলটির সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে রংপুরের মিঠাপুকুরে নির্বাচনী জনসভায় দেওয়া বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান। শেখ হাসিনা বলেন, আগামী নির্বাচনে আপনাদের কাছে আমার একটাই চাওয়া, নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগের হাতকে শক্তিশালী করবেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষই আমার পরিবার। এ বাংলাদেশের মানুষের জন্য আমার বাবা জীবন দিয়েছেন। আমিও আপনাদের পাশে আছি, আপনাদের সেবা করে যাব। আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, নৌকা মার্কার সরকারের আমলে মানুষের শান্তি থাকে, ঘরে খাবার থাকে, জীবনের নিরাপত্তা থাকে, শিক্ষার আলো পায়, চিকিৎসা পায়, সুন্দর জীবন পায়। তিনি বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশকে যেন স্মার্ট বাংলাদেশ তৈরি করতে পারি। আমাদের ছাত্র-ছাত্রী, যুবক তারা স্মার্ট দক্ষ জনশক্তি হবে, আমরা তাদের ভবিষ্যতের জন্য তৈরি করব। ২০৪১ সালের বাংলাদেশকে স্মার্ট সোনার বাংলা হিসেবে আমরা গড়ে তুলব। সে কারণে আপনাদের কাছে নৌকায় ভোট চাই। এ সময় শেখ হাসিনা এ আসনে নৌকার প্রার্থী রাশেক রহমানকে পরিচয় করিয়ে দেন এবং তার জন্য ভোট চান। মঞ্চে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানা। এর আগে শেখ হাসিনা রংপুরের তারাগঞ্জ ডিগ্রি কলেজ মাঠে নির্বাচনী জনসভায় বক্তব্য দেন।
৭ জানুয়ারি সকালে ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার আহ্বান: আগামী ৭ জানুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট দিতে সবাইকে সকালবেলা ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে রংপুরের তারাগঞ্জ ডিগ্রি কলেজ মাঠে নির্বাচনী জনসভায় দেওয়া বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, আপনাদের কাছে আমার অনুরোধ, আগামী ৭ জানুয়ারি নির্বাচন। এই নির্বাচনে একেবারে সকালবেলা উঠে যারা ভোটার তাদের নিয়ে সবাই ভোটকেন্দ্রে যাবেন। আওয়ামী লীগের নৌকা মার্কায় ভোট চেয়ে তিনি বলেন, এ নৌকা মার্কা আপনাদের জীবনমান উন্নত করেছে। কাজেই আগামী নির্বাচনে আপনারা নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আপনাদের সেবা করার আরেকটিবার সুযোগ আমাদের দেবেন, যাতে আপনাদের প্রত্যেকের জীবন উন্নত-সমৃদ্ধ করে দিতে পারি। শেখ হাসিনা বলেন, নৌকা মার্কা নূহ নবীর নৌকা, সেই মহাপ্লাবনে মানুষকে বাঁচিয়েছিল। এ নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আপনারা স্বাধীনতা পেয়েছেন। এই নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আজকে উত্তরবঙ্গ মঙ্গামুক্ত হয়েছে। এখন আর মঙ্গাপীড়িত এলাকা নেই, মঙ্গা থেকে মুক্ত হয়ে এখন উন্নয়নের সুবাতাস বইছে। বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, একটা কথা মনে রাখবেন, বাবা-মা-ভাই সব হারিয়েছি। রিক্ত-নিঃস্ব আমি, আমার তো হারাবারও কিছু নেই, পাওয়ারও কিছু নেই। কিন্তু আপনারা ভালো থাকুন, আপনাদের জীবন সুন্দর হোক, আপনাদের ছেলেমেয়েরা বংশ পরম্পরায় সুন্দর জীবন পাক সেটাই আমার লক্ষ্য। ভূমিহীন-গৃহহীনদের বিনা পয়সার ঘরবাড়ি তৈরি করে দেওয়াসহ আওয়ামী লীগ সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নকাজের কথা তুলে ধরে টানা তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েছেন, আমরা আপনাদের সেবা দিচ্ছি। এটা হচ্ছে জাতির পিতার স্বপ্ন, সেই স্বপ্ন আমরা পূরণ করে দিচ্ছি। শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেশে কোনো মানুষ অবহেলিত থাকবে না। এটাই আমার কথা, আর সেভাবেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। তিনি বলেন, আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই, আজকে আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। সেটাকে ধরে রেখে এই বাংলাদেশকে আমরা উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। একমাত্র নৌকা মার্কা ক্ষমতায় থাকলেই এদেশের উন্নতি হবে। বক্তব্য শেষে শেখ হাসিনা তারাগঞ্জে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী আবুল কালাম মো. আহসানুল হক চৌধুরী ডিউককে পরিচয় করিয়ে দিয়ে ভোটারদের কাছে তার জন্য ভোট চান। জনসভায় সভাপতিত্ব করেন তারাগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আতিয়ার রহমান। সঞ্চালনা করেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী।
নৌকাই দেবে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ: আগামী ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে সবাইকে নৌকা মার্কায় ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, এই নৌকা অর্থনৈতিক মুক্তি দিয়েছে, এই নৌকাই দেবে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে পীরগঞ্জ সরকারি উচ্চবিদ্যালয় মাঠে নির্বাচনী জনসভায় তিনি এ আহ্বান জানান। শেখ হাসিনা বলেন, (উন্নয়ন) অব্যাহত থাকতে হলে কী দরকার বলেন? নৌকা মার্কায় ভোট দরকার। একমাত্র নৌকা মার্কা স্বাধীনতা দিয়েছে, নৌকা হচ্ছে নূহ নবীর নৌকা, মহাপ্লাবন থেকে মানুষকে রক্ষা করেছে। এই নৌকা আমাদের স্বাধীনতা এনে দিয়েছে, অর্থনৈতিক মুক্তি দিয়েছে, এই নৌকাই দেবে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ। এ সময় মঞ্চে উপস্থিত পীরগঞ্জে নৌকার প্রার্থী জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর জন্য ভোট চেয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আপনাদের কাছে আমার এটিই আবেদন, আমি আপনাদের এলাকার পুত্রবধূ। কী বাহেরা, একখান ভোট মুই পামু না, হামাক একখান ভোট দিবা না, হামাকে একখান ভোট দিবা? তিনি বলেন, এই যে আমার মেয়ে শিরিন শারমিন চৌধুরীকে দিয়ে গেলাম, নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে তাকে জয়যুক্ত করার মানে আমাকে ভোট দেওয়া, সজীব ওয়াজেদ জয়কে ভোট দেওয়া, জয়ের ভোট, পুতুলের ভোট, তাকে ভোট দেওয়া। অনেকেই দেশের স্থিতিশীলতা চায় না- মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৮, ১৪ ও ১৮- প্রতিটি নির্বাচনে জয়লাভ করেছি, বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথম ধারাবাহিকভাবে গণতন্ত্র অব্যাহত থেকেছে, একটি স্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো এই স্থিতিশীলতা অনেকেই চায় না। তিনি বলেন, অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারীর পকেট থেকে যেসব দল উঠে এসেছে, তারা মানুষের শান্তি দেখতে পারে না। যে কারণে আপনারা দেখেছেন… অগ্নিসন্ত্রাস, বাসে আগুন, গাড়িতে আগুন, ট্রেনে আগুন। বিএনপি-জামায়াতের সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, কয়েকদিন আগে আপনারা দেখেছেন ট্রেনের ফিসপ্লেট খুলে ফেলেছিল ওই বিএনপি-জামায়াত। ট্রেনের বগি পড়ে যাবে, দুর্ঘটনা হবে, মানুষ মরবে। মানুষ মারার ফাঁদ তারা তৈরি করেছে। এর চেয়ে ঘৃণার আর কী থাকতে পারে? তিনি বলেন, ওই বিএনপি-জামায়াত মিলে অগ্নিসন্ত্রাস করছে। এই অগ্নিসন্ত্রাস এই জ¦ালাও-পোড়াও, এটাই নাকি তাদের আনন্দ, এটাই নাকি তাদের আন্দোলন। মানুষের জন্য আমরা রাজনীতি করি। মানুষ হত্যা করে, মানুষ খুন করে কীসের আন্দোলন? অগ্নিসন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সবাইকে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের তরুণ সমাজ এখানে আছে, ছাত্ররা আছে, সবাইকে বলব প্রত্যেককে সজাগ থাকতে হবে। ওই অগ্নিসন্ত্রাস যারা করতে আসবে, তাদের সঙ্গে সঙ্গে ধরতে হবে এবং ধরে তাদের উপযুক্ত শাস্তি দিতে হবে। তাদের পুলিশের সোপর্দ করতে হবে। আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, মানুষের জীবন নিয়ে কাউকে খেলতে দেব না। আমরা মানুষের কল্যাণে কাজ করি। দিনরাত পরিশ্রম করি এদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য। সেখানে তারা আসে ধ্বংস করার জন্য। কাজেই এদের বিষয়ে সবাইকে সজাগ হতে হবে, সচেতন হতে হবে। প্রয়োজনে পাহারা দিতে হবে, জনগণকে এর প্রতিরোধ করতে হবে। তিনি বলেন, ২০১৩ সালে জনগণ প্রতিরোধ করেছিল, ২০১৪ সালে জনগণ প্রতিরোধ করে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েছিল। আমরা সরকারে এসেছিলাম। কাজেই সবাইকে এক হয়ে কাজ করতে হবে। এ সময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানা। সভাপতিত্ব করেন পীরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যাপক নুরুল আমিন রাজা। প্রধানমন্ত্রী ও পীরগঞ্জের পুত্রবধূর আগমনে উৎসবের নগরীতে পরিণত হয় পীরগঞ্জ। সকাল থেকে পীরগঞ্জ সরকারি স্কুল মাঠে আসতে শুরু করেন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। দুপুরের মধ্যে কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় পুরো মাঠ। স্কুল মাঠ ছাড়াও আশপাশের এলাকায় ছিলেন বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী। এর আগে বেলা ১১টার দিকে উড়োজাহাজে সৈয়দপুর বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান তিনি। শেখ হাসিনার সঙ্গে ছিলেন তার ছোট বোন শেখ রেহানা। সৈয়দপুর থেকে সড়কপথে প্রথমে রংপুরের তারাগঞ্জ যান প্রধানমন্ত্রী। সেখানে সংক্ষিপ্ত জনসভায় যোগদান শেষে মিঠাপুকুর যান। সেখানে আরেকটি জনসভায় যোগদান শেষে স্বামীর গ্রামের বাড়ি পীরগঞ্জের লালদীঘি ফতেহপুর যান শেখ হাসিনা। ফতেহপুরে স্বামীর কবর জিয়ারত করেন এবং নিকটাত্মীয়দের সঙ্গে কুশল বিনিময় করে সময় কাটান তিনি।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button