রোববার খুলছে মেট্রোরেলের কারওয়ান বাজার ও শাহবাগ স্টেশন

প্রবাহ রিপোর্ট : আগামী রোববার যাত্রীদের জন্য খুলে দেওয়া হচ্ছে মেট্রোরেলের কারওয়ান বাজার ও শাহবাগ স্টেশন। তবে আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল চলাচলের সময়সূচিতে কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না। আগের সময়সূচি অনুযায়ী চলবে এই রুটের মেট্রোরেল। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর ইস্কাটনে অবস্থিত প্রবাসী কল্যাণ ভবনে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) সভাকক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এম এ এন সিদ্দিক। তিনি বলেন, গত ৪ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী মেট্রোরেলের আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশের উদ্বোধন করেন। আমরা তখন প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম তিন মাসের মধ্যে আমরা সবগুলো স্টেশন চালু করব। তারই ধারাবাহিকতায় ৩১ ডিসেম্বর আমাদের যে দুটি স্টেশন বাদ আছে শাহবাগ আর কারওয়ান বাজার স্টেশন। এই দুই স্টেশনে বর্তমান সময়সূচি অনুযায়ী মেট্রোট্রেন থামবে। পরবর্তীতে পর্যায়ক্রমে মেট্রোরেল চলাচলের সময়সূচি বাড়ানো হবে। তিনি আরও বলেন, ২০২২ সালের ২৮ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী উত্তরা উত্তর থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত অংশের উদ্বোধন করেছিলেন। আজকে (গতকাল বৃহস্পতিবার) এই অংশের উদ্বোধনের এক বছর পূর্তি হলো। আমরা বড় ধরনের কোনো চ্যালেঞ্জ ছাড়াই গত এক বছর এই অংশে সফলভাবে মেট্রোরেল পরিচালনা করেছি। এ সময় তিনি আগামী ৩১ ডিসেম্বর থার্টি ফাস্ট নাইটে এবং ইংরেজি নতুন বছর উপলক্ষে মেট্রোরেলের রুট অ্যালাইনমেন্টের এক কিলোমিটারের মধ্যে ফানুস না উড়ানোর জন্য নগরবাসীর প্রতি আহ্বান জানান। এজন্য ডিএমপি কমিশনারের কাছেও নিষেধাজ্ঞা দিতে চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে জানান তিনি। এদিকে যানজটের নগরী ঢাকাকে গতিশীল করতে চালু হওয়া মেট্রোরেলের এক বছর পূর্ণ হয় গতকাল বৃহস্পতিবার। রাজধানীবাসীকে এ পরিবহন যাতায়াতে যেমন স্বস্তি ও স্বাচ্ছন্দ্য এনে দিয়েছে, তেমনি সাশ্রয় করছে সময়। সেজন্য মেট্রোতে দর্শনার্থীদের পাশাপাশি পাল্লা দিয়ে বাড়ছে নিয়মিত যাত্রী। যদিও অনেকের ভাষ্য, প্রত্যাশার বড় অংশ পূরণ হয়নি, কারণ এখনো সব স্টেশন চালু হয়নি। পূরণ হয়নি ভোর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত চলাচলের লক্ষ্যও। তবে সব স্টেশন চালু এবং চলাচলের সময়সীমা বাড়ানোর কাজ চলছে বলে জানিয়ে আসছেন সংশ্লিষ্টরা। ২০২২ সালের ২৮ ডিসেম্বর উদ্বোধন হওয়া মেট্রোরেলের বাণিজ্যিক যাত্রা শুরু হয় পরের দিন ২৯ ডিসেম্বর। শুরুতে সকালে চার ঘণ্টা মেট্রো চলতো উত্তরা উত্তর থেকে আগারগাঁও স্টেশনের মধ্য। তখন কেবল এই দুই স্টেশনই চালু হয়। এরপর উত্তরা উত্তর থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত সব স্টেশন খুলতে থাকে। উত্তরা মধ্য, উত্তরা দক্ষিণ, পল্লবী, মিরপুর-১১, মিরপুর-১০, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া-অর্থাৎ নয়টি স্টেশনই খুলে দেওয়া হয়। এ সময়ে ধীরে ধীরে বাড়ানো হতে থাকে যাতায়াতের সময়সীমা। যাত্রার শুরুতে চার ঘণ্টা চালু থাকলেও ধীরে ধীরে সময় বাড়িয়ে বর্তমানে চলছে ১২ ঘণ্টা। এরপর চলতি বছরের ৪ নভেম্বর মেট্রোরেলের আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশেরও উদ্বোধন করা হয়। তখন থেকেই উত্তরা থেকে মতিঝিল যাওয়া যাচ্ছে মাত্র আটত্রিশ মিনিটে। যদিও আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ট্রেন চলে চার ঘণ্টা, যা নিয়ে অসন্তোষ জানিয়েছেন মেট্রোরেলের নিয়মিত যাত্রীরা। এ নিয়ে মেট্রোরেলের নিয়মিত যাত্রী একুশ তাপাদার বলেন, ‘সারা দুনিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ শহরে মেট্রোরেল জনবান্ধব ও ভীষণ জনপ্রিয় বাহন। যানজটের নগরী ঢাকাতেও মেট্রো যে জনপ্রিয় হবে এই নিয়ে কোন সন্দেহই ছিল না, অনুমিতভাবে হয়েছেও তাই। কিন্তু জনপ্রিয় এই বাহনটি যারা পরিচালনা করছেন তাদের ধীরে চলো নীতিতে আমরা সাধারণ যাত্রীরা হতাশ। এখন পর্যন্ত ট্রায়াল রানের মতো চলছে। মানুষজন মেট্রোতে অফিস যেতে পারলেও ফিরতে পারছে না, ছুটির দিনে মানুষ বেড়াতে যেতে মেট্রো পাচ্ছে না। এটা চরম হতাশার। কবে পুরোপুরি ভোর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত মেট্রো চালানো হবে তা পরিষ্কার করে বলা হচ্ছে না। ভাড়ার বিষয়ে অভিযোগ জানিয়ে এ যাত্রী বলেন, অত্যধিক ভাড়া নিয়েও কর্তৃপক্ষের উদাসনীতা সাধারণ মানুষের জন্য পীড়াদায়ক। মেট্রোরেলের নিয়মিত যাত্রী হিসেবে আশা করব ভাড়া আরেকটু কমিয়ে যেন সহনশীল করা হয়। দ্রুত যেন পুরোপুরি পূর্ণাঙ্গ সময়ে চালু করা হয়। উত্তরা-আগারগাঁও অংশের সব স্টেশন চালু হলেও আগারগাঁও-মতিঝিল অংশের কারওয়ান বাজার এবং শাহবাগ স্টেশন চালু হয়নি। চালু করতে স্টেশন দুটির শেষ মুহূর্তের কাজ চলছে। যাত্রী ওঠা-নামার সিঁড়ি, এসকেলেটর এবং লিফট তৈরির কাজ কিছুটা বাকি আছে। আর মেট্রোরেলের মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত তৃতীয় অংশ চালু হতে পারে ২০২৫ সালে। এ অংশে শুধু কমলাপুর স্টেশন নির্মাণ ও বাড়তি ১ দশমিক ১৬ কিলোমিটার এলিভেটেড রেলট্রাক নির্মাণ করতে হবে। এরইমধ্যে এই অংশের কাজ ১৫ শতাংশের বেশি শেষ হয়েছে। কমলাপুর পর্যন্ত মেট্রোরেল চালু হলে দেশের প্রধান রেলস্টেশন কমলাপুরে ট্রেন থেকে নেমে যাত্রীরা সহজেই রাজধানীর বিভিন্ন গন্তব্যে স্বাচ্ছন্দ্যে যেতে পারবেন। মেট্রোরেলের পরিচালনা প্রতিষ্ঠান ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন ছিদ্দিক বলেছেন, নতুন বছরের শুরুতেই চালু হবে দুটি স্টেশন। তারপর বাড়বে চলাচলের সময়। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, চার মিনিট পর পর ২০ সেট ট্রেন চলবে উত্তরা থেকে মতিঝিল ২০ কিলোমিটার রেল ট্র্যাকে। পূর্ণ মাত্রায় চালু হলে ঘণ্টায় ষাট হাজার যাত্রী পরিবহন সম্ভব হবে। ২০১২ সালে হাতে নেওয়া উত্তরা-মতিঝিল পর্যন্ত ২০ দশমিক ১০ কিলোমিটারের প্রথম মেট্রো এমআরটি লাইন-৬ প্রকল্পের মূল ব্যয় ছিল ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা। পরে মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত ১ দশমিক ১৬ কিলোমিটার যোগ হওয়ায় ১১ হাজার ৪৯৬ কোটি ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৩৩ হাজার ৪৭২ কোটি টাকায়। এরমধ্যে জাইকার অর্থায়ন ১৯ হাজার ৭১৯ কোটি টাকা ও সরকারি অর্থায়ন ১৩ হাজার ৭৫৩ কোটি টাকা।