জাতীয় সংবাদ

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ কাল

প্রবাহ রিপোর্ট : দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে আগামীকাল রোববার। এবার ২৯৯টি সংসদীয় আসনে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। নওগাঁ-২ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী আমিনুল ইসলাম মারা যাওয়ায় ওই আসনের নির্বাচন স্থগিত করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নির্বাচন উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ইতোমধ্যে সারাদেশে বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে। ২০১৮ সালের মতো নির্বাচনে বিতর্ক এড়াতে এবারই প্রথমবারের মতো সংসদ নির্বাচনে ভোটের দিন সকালে ভোটকেন্দ্রে ব্যালট পেপার পাঠাচ্ছে ইসি। সব ভোটার যাতে নির্বিঘেœ ও উৎসবমুখর পরিবেশে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে পারেন, সেজন্য সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে কমিশন। নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা বলেছেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হয়েছে। এখন ইসির ভাবনায় শুধু নির্বাচন। উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট হবে। ভোটের মাঠ এখন নির্বাচন কমিশনের নিয়ন্ত্রণে, দাবি করেন তিনি। কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, আগামীকাল রোববার ২৯৯ আসনে সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স ও ব্যালট পেপারে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠান হবে। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে চূড়ান্তভাবে ১ হাজার ৯৭০ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ২৮টি রাজনৈতিক দলের হয়ে লড়ছেন ১ হাজার ৫৩৪ জন প্রার্থী। আর স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছেন ৪৩৬ জন। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ২৬৬ জন, জাতীয় পার্টির ২৬৫ জন, তৃণমূল বিএনপির ১৩৫ জন, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির ১২২ জন, বাংলাদেশ কংগ্রেসের ৯৬ জন, ইসলামি ফ্রন্ট বাংলাদেশের ৩৯ জন, ইসলামি ঐক্যজোট ৪২, কৃষক শ্রমিক জনতা-লীগের ৩০, গণফোরাম নয়জন, গণ-ফ্রন্ট ২১ জন, জাকের পার্টির ২১ জন, জাতীয় পার্টির (জেপি) ১৩ জন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) ৬৬, বিকল্পধারা বাংলাদেশের ১০, বাংলাদেশ ইসলামি ফ্রন্ট ৩৫ জন, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির ১৬ জন, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন ১১ জন, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির পাঁচজন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন ৫৬ জন, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন ৩৮, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) পাঁচ, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট-বিএনএফের ৪৫, বাংলাদেশ মুসলিম লীগের চারজন, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির ৭৯ জন, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট ৬৩, বাংলাদেশ ওয়াকার্স পার্টির ২৬ জন, বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল (মার্কসবাদী-লেনিনবাদী) চারজন, গণতন্ত্রী পার্টির ১০ জন। এবারের নির্বাচনে দলীয় ও স্বতন্ত্র মিলে নারী প্রার্থী রয়েছেন ৯০ জন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ থেকে ১৮ জন, জাতীয় পার্টি থেকে ৭ জন। এ ছাড়া স্বতন্ত্র নারী প্রার্থী রয়েছেন ২৩ জন। আর ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী অন্যান্য মিলে ৭৯ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ২৯৯টি সংসদীয় আসনে মোট ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ৪২ হাজার ১০৩টি। এসব কেন্দ্রে ভোটকক্ষ থাকবে ২ লাখ ৬১ হাজার ৯১২টি। এবারের নির্বাচনে সারা দেশে মোট ভোটার ১১ কোটি ৯৬ লাখ ৯১ হাজার ৬৩৩ জন। মোট ভোটারের মধ্যে পুরুষ ৬ কোটি ৭ লাখ ৭১ হাজার ৫৭৯ জন, নারী ৫ কোটি ৮৯ লাখ ১৯ হাজার ২০২ জন। এ ছাড়া তৃতীয় লিঙ্গের ভোটারের সংখ্যা ৮৫। এদিকে নির্বাচনকে ঘিরে ইতোমধ্যে প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণা শেষ হয়েছে। প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে শুরু হয় প্রচারণা। নিয়ম অনুযায়ী ভোটের ৪৮ ঘণ্টা আগে প্রচার-প্রচারণা শেষ হয়েছে গতকাল শুক্রবার সকাল ৮টায়। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রচার শেষ হয়েছে, এ ক্ষেত্রে কেউ আইন না মানলে ছয় মাসের জেল অথবা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দ-িত হতে পারে। কমিশন চাইলে শুনানি করে কারও প্রার্থিতাও বাতিল করতে পারে। এদিকে নির্বাচন উপলক্ষে গতকাল শুক্রবার মধ্যরাত ১২টা থেকে ৮ জানুয়ারি মধ্যরাত পর্যন্ত মোটর সাইকেল চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। এছাড়া নির্বাচন উপলক্ষে ভোট গ্রহণের জন্য নির্ধারিত দিবসের পূর্ববর্তী মধ্যরাত অর্থাৎ ৬ জানুয়ারি রাত ১২টা থেকে ৭ জানুয়ারি রাত ১২টা পর্যন্ত কতিপয় যানবাহন চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। এসব যানবাহনের মধ্যে রয়েছে ট্যাক্সি ক্যাব, পিক আপ, মাইক্রোবাস ও ট্রাক। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের জারি করা এক পরিপত্রে জানানো হয়, এসব নিষেধাজ্ঞা নি¤œবর্ণিত ক্ষেত্রে শিথিলযোগ্য হবেÑ
(ক) আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সশস্ত্র বাহিনী, প্রশাসন ও অনুমতিপ্রাপ্ত পর্যবেক্ষক;
(খ) জরুরি সেবা কাজে নিয়োজিত যানবাহন এবং ওষুধ, স্বাস্থ্য-চিকিৎসা ও অনুরূপ কাজে ব্যবহৃত দ্রব্যাদি ও সংবাদপত্র বহনকারী সকল ধরনের যানবাহন;
(গ) আত্মীয়-স্বজনের জন্য বিমানবন্দরে যাওয়া, বিমানবন্দর হতে যাত্রী বা আত্মীয়-স্বজনসহ নিজ বাসস্থানে অথবা আত্মীয়-স্বজনের বাসায় ফিরে যাওয়ার জন্য ব্যবহৃত যানবাহন (টিকিট বা অনুরূপ প্রমাণ প্রদর্শন) এবং দূরপাল্লার যাত্রী বহনকারী অথবা দূরপাল্লার যাত্রী হিসেবে স্থানীয় পর্যায়ে যাতায়াতের জন্য যে কোনো যানবাহন;
(ঘ) প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর জন্য ১টি, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর নির্বাচনি এজেন্ট (যথাযথ নিয়োগপত্র/পরিচয়পত্র থাকা সাপেক্ষে) এর জন্য ১টি গাড়ি (জিপ, কার, মাইক্রোবাস ইত্যাদি ছোট আকৃতির যানবাহন) রিটার্নিং অফিসারের অনুমোদন ও গাড়িতে স্টিকার প্রদর্শন সাপেক্ষে চলাচলের অনুমতি প্রদান;
(ঙ) সাংবাদিক, পর্যবেক্ষক অথবা জরুরি কোনো কাজে ব্যবহৃত মোটর সাইকেল রিটার্নিং অফিসারের অনুমোদন সাপেক্ষে চলাচলের অনুমতি প্রদান;
(চ) নির্বাচন কমিশনের অনুমোদন সাপেক্ষে নির্বাচনী কাজে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারী অথবা অন্য কোনো ব্যক্তির জন্য মোটর সাইকেল চলাচলের অনুমতি প্রদান;
(ছ) জাতীয় মহাসড়ক, বন্দর ছাড়াও আন্তঃজেলা বা মহানগর থেকে বাহির বা প্রবেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সড়ক, মহাসড়ক ও প্রধান প্রধান রাস্তার সংযোগ সড়ক বা উক্তরূপ সকল রাস্তায় নিষেধাজ্ঞা শিথিলের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবেন; এবং
(জ) এ ছাড়া স্থানীয় প্রয়োজনীয়তা ও বাস্তবতার নিরিখে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটগণ কর্তৃক কতিপয় যানবাহনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ অথবা শিথিল করার বিষয়ে প্রয়োজনীয় কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ।
উল্লিখিত যানবাহনসমূহ চলাচলের ওপর বর্ণিত সময়সূচি অনুযায়ী নিষেধাজ্ঞা আরোপ অথবা শিথিলের জন্য সংশ্লিষ্ট জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারকে ক্ষমতা অর্পণ করা হয়েছে।
এ নিষেধাজ্ঞা যথাযথভাবে বলবৎ করার জন্য এবং প্রয়োজনবোধে জনসাধারণের অবগতির জন্য ট্রাফিক সাইন প্রদর্শনের নিমিত্ত জননিরাপত্তা বিভাগ ও সুরক্ষা বিভাগকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।

 

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button