জাতীয় সংবাদ

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে অগ্রাধিকার দিয়ে নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা

প্রবাহ রিপোর্ট : মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে অগ্রাধিকার দিয়ে নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা করলো বাংলাদেশ ব্যাংক। আগামী জুনে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলনের লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আগের মুদ্রানীতিতে যা ১১ শতাংশ ছিল। একইসঙ্গে নীতি সুদহার হিসেবে বিবেচিত রেপো রেট ২৫ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে ৮ শতাংশ করা হয়েছে। এ ছাড়া বিনিময় হারের নতুন ব্যবস্থা চালুর ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। গতকাল বুধবার ব্যাংকের সভাকক্ষে গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা করেন। এসম তিনি বলেন, এবারের মুদ্রানীতিতেও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে অগ্রাধিকার থাকবে। গভর্নর উল্লেখ করেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে এবারও অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। তবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সমস্যা রয়েছে। এর মধ্যে অর্থনৈতিক বিষয়গুলো দেখছে বাংলাদেশ ব্যাংক। অন্য বিষয়গুলো দেখার বিষয়ে নতুন অর্থমন্ত্রীকে বলা হয়েছে। আগামী রোববার এ বিষয়ে তিনি একটি বৈঠক ডেকেছেন। গভর্নর বলেন, মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশে নেমে না আসা পর্যন্ত সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি অব্যাহত থাকবে। এবারের মুদ্রানীতিতে চারটি বিষয় গুরুত্ব দিয়ে মনিটরিং পলিসি করা হয়েছে। সরকারের নির্বাচনি ইশতেহারের সঙ্গে এই মুদ্রানীতি সামঞ্জস্যপূর্ণ। এ ছাড়া মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে প্রবৃদ্ধি ১ শতাংশ কমলেও অসুবিধা নেই বলেও মন্তব্য করেন তিনি। এসময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নররা, বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রধান কর্মকর্তা, চিফ ইকোনোমিস্ট, গবেষণা বিভাগের নির্বাহী পরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও সহকারী মুখপাত্র। গভর্নর আবদুর রউফ বলেন, আগামী জুন মাসের মধ্যে মূল্যস্ফীতি ৭ দশমিক ৫ শতাংশে নামিয়ে আনতে চায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ লক্ষ্যে নতুন মুদ্রানীতিতে নীতি সুদহার ২৫ শতাংশীয় পয়েন্ট বাড়িয়ে ৮ শতাংশ করা হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর, বিএফআইইউয়ের প্রধান কর্মকর্তা, প্রধান অর্থনীতিবিদ, গবেষণা বিভাগের নির্বাহী পরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও সহকারী মুখপাত্ররা। গভর্নর বলেন, নতুন সিদ্ধান্ত মতে নীতি সুদহার ৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৮ শতাংশ করা হচ্ছে। এর ফলে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে অন্য ব্যাংকগুলো যে টাকা ধার করবে, তার সুদহার বাড়বে। অর্থাৎ বাংলাদেশ ব্যাংক আরও সংকোচনমূলক মুদ্রা সরবরাহের দিকে হাঁটছে। বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, রিভার্স রেপো (বর্তমান নাম স্ট্যান্ডিং ডিপোজিট ফ্যাসিলিটি বা এসডিএফ) নিম্নসীমার সুদহার ৫ দশমিক ৭৫ শতাংশ থেকে ৭৫ শতাংশীয় পয়েন্ট বাড়িয়ে ৬ দশমিক ৫০ শতাংশ করা হয়েছে। বাজারে উদ্বৃত্ত টাকা থাকলে বাংলাদেশ ব্যাংক রিভার্স রেপোর মাধ্যমে টাকা তুলে নেয়। নীতি সুদহার করিডরের ঊর্ধ্বসীমা স্পেশাল রেপো বা এসএলএফের (স্ট্যান্ডিং লেন্ডিং ফ্যাসিলিটি) সুদহার ৯ দশমিক ৭৫ শতাংশ থেকে ২৫ বেসিস পয়েন্ট কমিয়ে ৯ দশমিক ৫০ শতাংশ করা হয়েছে। এতে সংকটে পড়া ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে টাকা ধার করতে কিছুটা ব্যয় কমবে। চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধের (ডিসেম্বর পর্যন্ত) জন্য ঘোষিত মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরা হয়েছিল ১০ দশমিক ৯ শতাংশ। আলোচিত সময়ে মূল্যস্ফীতির মতো ঋণ প্রবৃদ্ধির এ লক্ষ্যও অর্জিত হয়নি। গত নভেম্বর পর্যন্ত বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে ৯ দশমিক ৯০ শতাংশ। যা লক্ষ্যের চেয়ে ১ শতাংশ কম। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত রিজার্ভ মুদ্রার প্রবৃদ্ধি অপরিবর্তিত থাকবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। যদিও নভেম্বর পর্যন্ত রিজার্ভ মুদ্রার বার্ষিক প্রবৃদ্ধি ঋণাত্মক ১ দশমিক ৭৩ শতাংশে নেমেছে। ব্রড মানি বা ব্যাপক মুদ্রার প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যও অর্জিত হয়নি, যা বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে।

 

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button