জাতীয় সংবাদ

সরকারের নতজানু নীতির কারণে সীমান্তে রক্ত ঝরছে : রিজভী

প্রবাহ রিপোর্টঃ বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, সরকারের নতজানু নীতির কারণে সীমান্তে রক্ত ঝরছে। বিএনপির সময় সীমান্তে আক্রমণ হলে তীব্র প্রতিরোধ ও প্রতিবাদ হতো। সরকারের সঙ্গে জনসমর্থন নেই, তাই প্রতিবাদ করতে ভয় পায় তারা। সোমবার (৫ ফেব্রুয়ারি) নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। রিজভী বলেন, দেশের সমগ্র অর্থনীতিকে ভয়াবহ এক নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিয়েছে আওয়ামী ডামি সরকার। গণতন্ত্রহীনতা, সর্বগ্রাসী দুর্নীতি, বিদেশে অর্থপাচার, মূল্যস্ফীতি, নি¤œমুখী বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, চলতি হিসাবের ঘাটতি, রাজস্ব ঘাটতি এবং বৈদেশিক মুদ্রার বিপরীতে টাকার নজিরবিহীন দরপতনে জনগণ আতঙ্কিত। বর্তমানে দেশের অর্থনীতির প্রতিটি প্রধান সূচকের অবস্থান এতটাই শোচনীয়, যা দেশের সামষ্টিক অর্থনীতিকে এক মহাবিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিয়েছে। দেশকে ঋণের ফাঁদে ডুবিয়ে দিয়েছে সরকার। অভ্যন্তরীণ ঋণ শোধ করতে ট্যাক্স-ভ্যাট-কর খাজনার পরিধি আওতা বাড়িয়ে জনগণের গলায় গামছা দিয়ে শ্বাসরোধ করার অবস্থায় নেয়া হয়েছে। বর্তমানে দেশী-বিদেশি ঋণের পরিমাণ বাংলাদেশের দুইটি অর্থ বছরের বাজেটেরও বেশি। যে শিশু আজ ভূমিষ্ঠ হচ্ছে, তার মাথায়ও প্রায় লাখ টাকার বেশি ঋণের বোঝা চাপিয়ে দিয়েছে সরকার। বিএনপির এই সিনিয়র নেতা বলেন, ঋণের টাকায় কানাডার বেগম পাড়া, আমেরিকায় বিলাস বহুল বাড়ি-গাড়ি, ব্যবসা, দুবাই সিঙ্গাপুরে বিনিয়োগ, মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোমসহ তিন মহাদেশে সম্পদের পাহাড় গড়া হয়েছে। সুইস ব্যাংকে ক্ষমতাসীনদের ঘনিষ্ঠ কার কার নতুন একাউন্টে টাকা জমা হচ্ছে, অনেকের কাছে সেটিও অবগত নয়। আওয়ামী লুটেরাদের দেশে বহুতল বাড়ি, বিলাসী গাড়ি, ব্যবসা বাণিজ্য, জীবনযাপনে জৌলুস উপচে পড়ছে। আঙুল ফুলে বটগাছ হয়েছে। আর সাধারণ মানুষ ফতুর হয়ে খেয়ে না খেয়ে ধুকে ধুকে মরছে। তিন বেলা খাওয়ার সাধ্য কেড়ে নিয়েছে লুটেরা সরকার। গরিবের বাঁচা-মরার সঙ্গে জড়িত প্রতিটি জরুরি পণ্যের দাম উল্কার গতিতে বেড়েই চলেছে। সাধারণ মানুষের মাছ, মাংস, ডিম খাওয়া বন্ধ হয়েছে। নতুন করে গরীব হয়েছে কয়েক কোটি মানুষ। অনাহার-অর্ধাহারের বৃত্তে আটকিয়ে আছে মধ্যম ও নি¤œ আয়ের মানুষেরা। মানুষের সঞ্চয় শেষ হয়ে গেছে, এখন ঋণ করে খাচ্ছে। বেকারের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। রাষ্ট্রযন্ত্র অকার্যকর হয়ে পড়েছে। রিজভী বলেন, সর্বত্রই অস্বস্তি-অস্থিরতা। দেশি-বিদেশি শ্বাসরুদ্ধকর ঋণের তলে ডুবিয়ে দেশকে সিঙ্গাপুর, অস্ট্রেলিয়া, কানাডার সঙ্গে তুলনা করা আওয়ামী লীগের ধাপ্পাবাজ মন্ত্রীরা এখন ফুটো বেলুনের মতো চুপসে গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, বর্তমানে সরকারের বিদেশি ঋণের পরিমাণ ৭ হাজার ৩৫৩ কোটি ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৭ লাখ ৯৭ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। এর বাইরে বর্তমানে দেশের অভ্যন্তরীণ ঋণের পরিমাণ ৮ লাখ ১৫ হাজার ৯১১ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে বর্তমানে ডামি সরকারের ঋণ ১৬ লাখ ১৩ হাজার ৭১১ কোটি টাকা। গত ৭ বছরের ব্যবধানে মাথাপিছু ঋণ বেড়েছে ১৭৯ শতাংশ। বিদেশি ঋণের কিস্তি পরিশোধ মাত্র শুরু হয়েছে, এখনই ডলারে কুলাচ্ছে না। কারণ ডলার তলানির দিকে ক্রমধাবমান। তিনি বলেন, এই বিপুল অঙ্কের ঋণ পরিশোধ করার সামর্থ্য ডামি সরকারের পক্ষে কোনোভাবেই সম্ভব নয়। জ্বালানি, বিদ্যুৎ সংকট, ডলারের বিপরীতে গত কয়েক মাস যাবত টাকার মানের ক্রমাগত পতন এবং রেকর্ড পরিমাণ বাণিজ্য ঘাটতি দেশের অর্থনৈতিক গতিপথ নিয়ে জনগণকে উদ্বিগ্ন করে তুলছে। মুদ্রামান হারাবার সঙ্গে সঙ্গে ডলার দুষ্প্রাপ্য হয়ে উঠছে দেশি মার্কেটে। রিজার্ভ প্রায় নিঃশেষের পথে। দেশের সম্পদ লুটপাটের দরজা খুলে দিয়েছে দখলদার সরকার। দেশের খ্যাতিমান অর্থনীতিবিদদের অভিমতও তাই। অযোগ্য লুটেরা সরকার ক্ষমতায় থাকলে ঋণের বোঝা বাড়তেই থাকবে। ক্ষমতায় টিকে থাকার তীব্র আকাঙ্ক্ষা থেকেই শেখ হাসিনা দেশকে দেউলিয়া করছেন। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্প অন্য দেশের হাতে তুলে দিতে গভীর চক্রান্ত চলছে। আওয়ামী ডামি সরকার গত চার দিন আগে এক প্রজ্ঞাপনে তৈরি পোশাকসহ রফতানিমুখী ৪৩টি শিল্প খাতে প্রণোদনা কমিয়ে দিয়েছে। এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেছেন, এখন গার্মেন্ট শিল্প প্রতিযোগিতায় টিকতে পারবে না। ব্যবসা চলে যাবে পার্শ্ববর্তী দেশে। পোশাক শিল্পের মালিকরা বলছেন, এমন আত্মঘাতী সিদ্ধান্তে ধ্বংস হয়ে যাবে অর্থনীতির প্রধান শক্তি-এই শিল্প। এই খাতের ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের পথে বসে যেতে হবে। কোনো প্রকার পূর্ব আলোচনা ছাড়া হঠাৎ এ রকম একটি সর্বনাশা সিদ্ধান্ত এই শিল্পকে চরমভাবে বিপর্যস্ত করবে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button