জাতীয় সংবাদ

চোরাই ফোন কেনা নিয়ে বিরোধের জেরে খুন হন কলেজছাত্র পিয়াস

প্রবাহ রিপোর্ট : বহুল আলোচিত রাজধানীর উত্তর মুগদায় কবি নজরুল কলেজের শিক্ষার্থী পিয়াস ইকবাল নূরকে নৃশংসভাবে ছুরিকাঘাতে হত্যার রহস্য উন্মোচন করেছে র‌্যাব। চোরাই মোবাইলফোন কেনার জেরে বন্ধুর দ্বন্দ্ব মেটাতে গিয়েই আমির উদ্দিন আহমেদ অনিকের হাতে খুন হন পিয়াস। চোরাই মোবাইলফোন কেনা-বেচার ব্যবসা করতেন আমির উদ্দিন আহমেদ অনিক। র‌্যাব জানায়, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি অনিকের কাছ থেকে ৪ হাজার ৩০০ টাকা বাকিতে একটি চোরাই বাটন মোবাইল ফোন কেনেন পিয়াসের বন্ধু মাহির। টাকা ২৫ ফেব্রুয়ারি পরিশোধ করার কথা থাকলেও আর্থিক সমস্যার কারণে তা পারেননি মাহির। যথাসময়ে টাকা পরিশোধ না করায় অনিক তার ওপর ক্ষিপ্ত হন এবং বিভিন্ন সময় প্রাণনাশের হুমকি দিতে থাকেন। গত ৭ মার্চ রাতে অনিকসহ কয়েকজন মাহিরের বাসায় যান। মাহিরকে না পেয়ে তার মায়ের সঙ্গে অশোভন আচরণ করেন। ওই রাতেই বিষয়টি জানতে পেরে মাহির তার বন্ধু পিয়াস ও শামীমকে জানায়। এটা নিয়ে ১০টা ৪০ মিনিটের দিকে মধ্যস্থতা করতে গিয়ে অনিকের সঙ্গে বাগবিত-ার শুরু হয় পিয়াসের। এক পর্যায়ে ক্ষিপ্ত হয়ে পিয়াস ও শামীমকে কুপিয়ে পালিয়ে যায় অনিকসহ অন্যরা। পরবর্তীতে স্থানীয়দের সহযোগিতায় হাসপাতালে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক পিয়াসকে মৃত ঘোষণা করেন। গতকাল সোমবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব সদর দপ্তরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন তিনি এসব তথ্য জানান। তিনি জানান, কলেজছাত্র পিয়াস হত্যাকা-ে জড়িত প্রধান ৩ আসামিকে রাজধানীর মুগদা ও মানিকগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তারের পর এসব তথ্য জানা গেছে। গ্রেপ্তাররা হলেন – খালিদ হাসান (১৮), আরিফ হোসেন (২১) ও মেহেদী হাসান মিরাজ (২০)। এসময় উদ্ধার করা হয় হত্যাকা-ে ব্যবহৃত রক্তমাখা ছুরি। খন্দকার আল মঈন বলেন, ঘটনার পরদিন নিহত পিয়াসের পিতা বাদী হয়ে মুগদা থানায় ৬ জনকে আসামি করে এবং কয়েকজন অজ্ঞাতনামা উল্লেখ করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। নৃশংস এই হত্যাকা-ে জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়। গত রোববার রাতে র‌্যাব-৩ এর একটি দল রাজধানীর মুগদা এবং মানিকগঞ্জের হরিরামপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে করে হত্যাকা-ে সরাসরি জড়িত অন্যতম প্রধান তিন আসামিদের গ্রেপ্তার করা হয়। কমান্ডার মঈন বলেন, গ্রেপ্তারদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, গত ৭ মার্চ সন্ধ্যায় খালিদ, আরিফ, মিরাজ, অর্নব ও রাব্বীকে নিয়ে মোবাইল বিক্রয়ের বাকি টাকা আদায়ের জন্য মাহিরের বাসায় যায় অনিক। তারা মাহিরকে বাসায় না পেয়ে তার মায়ের সঙ্গে অশোভনীয় আচরণ করেন। একদিন পর টাকা পরিশোধ করে দেবেন বলে তাদের প্রতিশ্রুতি দেন মাহিরের মা। টাকা পরিশোধের আশ্বাস পেয়ে তারা মাহিরের বাসা থেকে চলে যায়। পুরো বিষয়টি মাহির তার বন্ধু ভিকটিম পিয়াস ও শামীমকে জানায়। আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা যায়, ভুক্তভোগী পিয়াস ও শামীম মধ্যস্থতাকারী হিসেবে বিষয়টি মীমাংসা করার জন্য ঘটনার দিন সন্ধ্যায় অনিকের সঙ্গে উত্তর মুগদা এলাকায় অনিকের আড্ডার পয়েন্টে দেখা করেন। এসময় অনিক, পিয়াস এবং শামীমকে তুই-তোকারি সম্বোধন করেন। পরবর্তীতে একই দিন রাত সাড়ে ১০টায় অনিককে ফোন দিয়ে লিটল এনজেল স্কুলের গলিতে আসতে বলেন পিয়াস। অনিক সেখানে পোঁছালে কেন সে তুই তুকারি সম্বোধন করেছিল অনিকের কাছে তার ব্যাখ্যা চায় পিয়াস ও শামীম। এদিকে, পূর্ব থেকেই এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, গ্রুপিং এবং সিনিয়র জুনিয়র দ্বন্দ্ব থাকায় তাদের মধ্যে বিরোধ চলছিল। এসময় তাদের মধ্যে বাকবিত-া ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। অনিক ভিকটিম পিয়াস ও শামীমকে উচিত শিক্ষা দিতে গ্রেপ্তার অন্যদের ফোন করে সেখানে আসতে বলেন। অনিকের ফোন পেয়ে তার বন্ধু খালিদ, আরিফ, মিরাজসহ মামলার অপর আসামি অর্নব মোটরসাইকেলযোগে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় এবং খালিদ পার্শ্ববর্তী একটি গ্যারেজ থেকে বেসবল খেলার স্টিক নিয়ে আসে। এসময় তারা বেসবল খেলার স্টিক ও লাঠি দিয়ে পিয়াস ও শামীমকে নৃশংসভাবে এলোপাতাড়ি আঘাত করতে থাকে। একপর্যায়ে মামলার অপর আসামি রাব্বী পার্শ্ববর্তী একটি দোকান থেকে আচমকা একটি ধারালো ছুরি নিয়ে ভিকটিম পিয়াসের পিঠের ডান পাশে এবং শামীমের ডান কাঁধে আঘাত করলে তারা মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। পিয়াস এবং শামীমের চিৎকারে লোকজন জড়ো হলে অনিক ও তার বন্ধুরা ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। পিয়াসের মৃত্যুর খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর গ্রেপ্তার এড়াতে জড়িতরা আত্মগোপন চলে যায়। র‌্যাব কমান্ডার জানান, গ্রেপ্তারদের মধ্যে খালিদ স্থানীয় একটি স্কুল থেকে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেন। পরবর্তীতে তিনি তার বাবার সঙ্গে অ্যাম্বুলেন্সের কাজে সহযোগিতা করতেন। তিনি উত্তর মুগদা এলাকায় ‘গ্যাং স্টার রাব্বী’ গ্রুপ এর সদস্য হিসেবে এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, অলিগলিতে মাদক ব্যবসা, মাদক সেবনসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকা-ে জড়িত। খালিদ ইতোপূর্বে রাজধানীর মুগদা থানায় সড়ক পরিবহন আইন মামলায় ১ মাস কারাভোগ করে জামিনে বের হয় বলে জানা যায়। এছাড়াও তিনি রাজধানীর পল্টন মডেল থানায় মাদক সংক্রান্ত মামলায় ১৫ দিন কারাভোগ করেছে বলে জানা যায়। গ্রেপ্তার মিরাজ স্থানীয় একটি স্কুলে ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন। তিনি মামলার আসামি রাব্বীর অন্যতম সহযোগী এবং ‘গ্যাং স্টার রাব্বী’ গ্রুপ এর সদস্য হিসেবে এলাকায় আধিপত্য বিস্তারসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকা-ে জড়িত বলে জানা গেছে। হত্যাকা-ের পর গ্রেপ্তার এড়াতে মানিকগঞ্জ এলাকায় আত্মগোপনে ছিলেন মিরাজ। গ্রেপ্তার আরিফ এইচএসসি পাস করে স্থানীয় এলাকায় একটি ইন্টারনেট অফিসে কাজ করতেন। তিনি অনিকের অন্যতম সহযোগী। গ্রেপ্তারদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন
Close
Back to top button