জাতীয় সংবাদ

মাহে রমজানের সওগাত-২৪

মাহে রমজান-এর ধারাবাহিক বিশেষ লেখা

আজ ২৪শে রমজান। ধৈর্য ও সংযমের মাস রমজানের প্রায় শেষ প্রান্তে এসে গেছি আমরা। বাস্তব জীবনে ধৈর্যের প্রয়োজন অনেক বেশি। তাই আল্লাহ রমজানকে ধৈর্যের একটি বিজ্ঞানসম্মত কর্মসূচি হিসেবে ঘোষণা করেছেন। মাঝে মাঝে ধৈর্য কমে যায়। তখন পানাহার ও যৌন চাহিদা থেকে দীর্ঘ এক মাস বিরত রাখার মাধ্যমে তাকে মজবুত করা হয়। ধৈর্য ধারণ করতে পারলে তাদের জন্য আল্লাহ পুরস্কারের সুসংবাদ দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘সবরকারীদের সুসংবাদ দিন, যারা বিপদগ্রস্ত হলে বলে, অবশ্যই আমরা আল্লাহর জন্য এবং তাঁরই দিকে আমাদেরকে ফিরে যেতে হবে।’
কোন কিছূ হারিয়ে গেলেও ধৈর্য ধারণ করতে হবে। বিভিন্ন বিপদ-মুসীবতে ধৈর্যের প্রয়োজন রয়েছে। অভাব-অনটন ও দারিদ্র দেখা দিলে হারাম আয়ের প্রাচুর্যের দিকে না গিয়ে সীমিত হালাল রোজগারের উপর ধৈর্য ধারণ করতে হবে। আল্লাহ বলেছেন, যারা আল্লাহকে ভয় করে ও তাঁর আদেশ-নিষেধ মেনে চলে, তিনি তাদেরকে বিপদ থেকে উদ্ধার করবেন এবং এমনভাবে রিজিক দান করবেন, যা সে কল্পনাও করতে পারবে না।’ বাস্তব জীবনের প্রতিটি পদে ধৈর্যের প্রয়োজন। যার ধৈর্য বেশি, তার পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে শান্তি বেশি। তিনি সবার কাছে প্রিয়পাত্রে পরিণত হবেন। পক্ষান্তরে, যার, ধৈর্য কম তিনি সবার কাছে অপ্রিয়, খিটখিটে মেজাজ কিংবা বদমেজাজী বলে পরিচিত হবেন। লোকেরা তার কাছ থেকে দূরে সরতে চাইবে। ধৈর্য মোমিনের সাফল্যের চাবিকাঠি। তাই প্রবাদ আছে, ‘ধৈর্য প্রশস্ততার চাবিকাঠি।’ রোজার অপর নাম হচ্ছে সবর। সালমান ফারসি (রা) থেকে বর্ণিত , রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন, ‘রমজান হচ্ছে, ধৈর্য ও সংযমের মাস। আর সবরের পুরস্কার হচ্ছে, বেহেশত।’
অপর এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন, ‘রোযা ধৈর্যের অর্ধেক।’ এতে বুঝা যায়, রমজানের সাথে ধৈর্যের মূল অর্থ ও তাৎপর্যের বিরাট মিল রয়েছে। রোজায় আল্লাহর নিষিদ্ধ কাজগুলো পরহেজ করে চলতে হয়। এটা হচ্ছে ধৈর্যের অর্ধেক। অপর অর্ধেক হচ্ছে তার আনুগত্য বা ইবাদত করা। আল্লাহ পবিত্র কোরআনে বলেছেন, ‘ধৈর্য ধারণকারীদেরকে বিনা হিসেবে তাদের পুরস্কার দেয়া হবে।’ ধৈর্যের সাথে রমজানের সম্পর্ক কি তা আমাদেরকে বুঝতে হবে। ধৈর্য তিন প্রকার। (১) আল্লাহর আনুগত্য ও ইবাদতের কষ্ট স্বীকারের ধৈর্য, (২) আল্লাহর নিষিদ্ধ ও হারাম কাজ থেকে বেঁচে থাকার জন্য যে কষ্ট হয় সে ব্যাপারে ধৈর্য, (৩) তাকদীর বা ভাগ্যের কষ্টদায়ক জিনিসের মোকাবিলায়ও ধৈর্য ধারণ করতে হয়। রমজানের মধ্যে এই তিন ধরনের ধৈর্যই পাওয়া যায়। কেননা, রমজানে আল্লাহর আদেশের আনুগত্য করা এবং নিষিদ্ধ ও হারাম কাজ থেকে বিরত থাকার কষ্ট আছে। এছাড়াও ক্ষুধা-পিপাসা ও শারীরিক দুর্বলতাসহ ভাগ্যলিপির যন্ত্রণা এবং কষ্টও রয়েছে। এ জন্য রমজানকে ধৈর্যের মাস বলা হয়েছে। তাই এ মাসে ধৈর্যের প্রশিক্ষণ নিতে হবে এবং পরবর্তীতে তার বাস্তবায়ন করতে হবে। ধৈর্যের আরো অনেক ফজীলত আছে। আবু সাঈদ খুদরী (রা) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেন, ‘যে সবর করে আল্লাহ তাকে সবর ধারণে সাহায্য করেন। আল্লাহ সবরের চাইতে উত্তম ও প্রশস্ততা কাউকে দান করেন না।’
সা’দ বিন আবি ওয়াক্কাস (রা) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা)কে জিজ্ঞেস করি, কোন লোকের উপর সর্বাধিক বিপদ নাযিল হয়? রাসূলুল্লাহ (সা) বলেন, প্রথম আম্বিয়ায়ে কেরাম, তারপর ক্রমানুসারে অন্যান্য নেক বান্দাগণ। প্রত্যেক ব্যক্তিকে তার দ্বীনদারীর অবস্থা অনুযায়ী পরীক্ষা করা হয়। কেউ যদি দৃঢ় ও শক্ত ঈমানদার হয়, তার পরীক্ষাও শক্ত এবং কঠোর হবে। কারও দ্বীনদারী হালকা-পাতলা হলে, তার পরীক্ষাও সে রকমই হবে।’ বিপদ আসলে সবরের প্রশ্ন দেখা দেয়। সেই বিপদে মোমিনকে ধৈর্য ও সংযমের পরিচয় দিতে হয়। রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন, ‘আল্লাহ কোন জাতিকে ভালবসলে তাদেরকে পরীক্ষা করেন। যারা সবর করে তাদের জন্য সবর এবং যারা ভয় করে তাদের জন্য ভীতি নির্ধারিত হয়।’
রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন, বড় পুরস্কার বড় পরীক্ষার সাথে রয়েছে। আল্লাহ যদি কোন সম্প্রদায়কে ভালবাসেন, তাহলে তাদেরকে বিপদ দিয়ে পরীক্ষা করেন। যারা পরীক্ষায় রাজি থাকে, তাদের জন্য সন্তুষ্টি এবং যারা অসন্তুষ্ট হয়, তাদের জন্য রয়েছে অসন্তুষ্টি।’ সকল পরীক্ষা ও বিপদ-আপদে সবরের প্রশ্ন জড়িত। রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন, ‘কোন মুসলমান বিপদগ্রস্ত হলে, আল্লাহ এর দ্বারা তার গুনাহ মাফ করে দেন। এমনকি একটা কাঁটা ফুঁড়লেও। রাসূলুল্লাহর (রা) জীবনে রয়েছে ধৈর্যের উত্তম নমুনা। তিনি যখন দ্বীন প্রচারের উদ্দেশ্য তায়েফে গিয়ে প্রহৃত হন, তখন তাদের জন্য অধৈর্য হয়ে বদদোয়া করেননি। বরং বলেছেন, হে আল্লাহ! তারা অন্ধ, তারা জানে না, আপনি তাদেরকে হেদায়াত করুন। হিজরতের গোপন অভিযানের সময় এক পাহাড় কষ্টের সম্মুখীন হওয়া সত্ত্বেও বদদোয়ার একটি মাত্র বাক্যও উচ্চারিত হয়নি তাঁর পবিত্র মুখ থেকে। শুধু ধৈর্য দিয়েই তিনি এ সকল কঠোর পর্যায় অতিক্রম করেছেন। অনুরূপভাবে, মক্কায় তাঁকে যাদুকর , গণক ও পাগল বলে গালি-গালাজের ঝড়ের মুখে অটল পাহাড়ের মতো ধৈর্য ধারণ করেছেন তিনি।
ব্যক্তি, পারিবারিক, সামাজিক, রাষ্ট্রীয় এবং আন্তর্জাতিক জীবনকে সুখী ও উত্তেজনামুক্ত রাখার জন্য ধৈর্যের প্রয়োজন। আর রমজান এ ধৈর্যের সওগাত নিয়েই বছরে একবার আমাদের দুয়ারে হাজিরা দেয়। আল্লাহ আমাদের তাওফিক দিন। আমীন!

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button