থানচির পর আলীকদমে সন্ত্রাসী হামলা

প্রবাহ রিপোর্ট : বান্দরবানের থানচির পর এবার আলী আলীকদম উপজেলায় পুলিশ ও সেনাদের একটি যৌথ তল্লাশি চৌকিতে হামলা চালিয়েছে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা। গত বৃহস্পতিবার গভীর রাতে এ ঘটনা ঘটে। এতে হতাহতের কোনও খবর পাওয়া যায়নি। জানা গেছে, রাত পৌনে ১টার দিকে বান্দরবানের আলীকদম থানার ডিম পাহাড়ের ২৬ মাইল এলাকায় পুলিশ ও সেনাবাহিনীর যৌথ তল্লাশি চৌকিতে হামলা চালায় সন্ত্রাসীরা। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আলীকদম থানার ওসি তৌবিদুর রহমান। তিনি বলেন, সন্ত্রাসীরা গাড়িতে করে এসে তল্লাশি চৌকি ভেঙে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। বাধা দিলে তারা গুলি চালায়। এ সময় তল্লাশি চৌকিতে থাকা পুলিশ সদস্যরা পাল্টা গুলি বর্ষণ করেন। পরে হামলাকারীরা পিছু হটে। এ ঘটনায় পুলিশের কেউ হতাহত হয়নি। এর আগে, বান্দরবানের থানচি বাজার ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এলাকায় পুলিশ ও বিজিবির সঙ্গে সন্ত্রাসীদের ব্যাপক গোলাগুলি হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টায় থানচি বাজার ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এলাকায় প্রায় এক ঘণ্টার বেশি এ গোলাগুলি চলে। স্থানীয়রা জানান, রাত সাড়ে ৮টা থেকে থানচি বাজার ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এলাকায় এ গোলাগুলির ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনও হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। তবে স্থানীয়রা চরম আতঙ্কে অনেকটা গৃহবন্দির মতো অবস্থায় রয়েছেন। বান্দরবানের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রায়হান কাজেমী বলেন, পাহাড়ের সন্ত্রাসী সংগঠন কেএনএফ দ্বিতীয় দফায় সোনালী ব্যাংকের থানচি শাখায় হানা দিতে চাইলে পুলিশ প্রতিহত করে। এ সময় উভয় পক্ষের মধ্যে গোলাগুলি হয়। তিনি আরও জানান, যেকোনও সময় আবারও গোলাগুলির ঘটনা ঘটতে পারে। থানচি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ মামুন বলেন, রাত সাড়ে ৮টা থেকে থানচি বাজার ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এলাকায় কেএনএফের সঙ্গে পুলিশ ও বিজিবির গোলাগুলি শুরু হয়। মূলত দুই স্থানে গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। থানচি থানা ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পেছনে। পুলিশ এবং বিজিবি দুই পক্ষের সঙ্গেই গোলাগুলি হয়েছে। তবে এতে কারও হতাহতের খবর এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। থানচি থানার ওসি জসীম উদ্দীন বলেন, রাত সাড়ে ৮টা থেকে সাড়ে ৯টা পর্যন্ত গোলাগুলি হয়েছে। এখন পরিস্থিতি শান্ত আছে। আমরা জানতে পেরেছি, সন্ত্রাসীরা থানার আশপাশে রয়েছে। এজন্য আমরা সতর্ক অবস্থায় আছি। বুধবার থানচি থানার সামনে সোনালী ও কৃষি ব্যাংকের দুটি শাখা থেকে ১৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা লুট করে কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ)। তাদের প্রতিরোধ করতে আসার পথে থানচি থানা পুলিশের সদস্যদের লক্ষ্য করে দুবার গুলি ছোড়ে অস্ত্রধারীরা। এর আগে মঙ্গলবার রাতে রুমা বাজারের সোনালী ব্যাংক শাখায় হামলা চালায় কেএনএফের সন্ত্রাসীরা। তারা ওই ব্যাংকের ব্যবস্থাপক নিজাম উদ্দিনকে ধরে নিয়ে যায়। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার দিকে তাকে উদ্ধার করে র্যাব। এদিন সন্ধ্যায় র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) সদর দফতরের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, র্যাবের মধ্যস্থতায় বান্দরবানের রুমায় সোনালী ব্যাংকের অপহৃত ম্যানেজার নিজাম উদ্দিনকে উদ্ধার করা হয়েছে। তবে তাকে কোথা থেকে কীভাবে উদ্ধার করা হয়েছে, সে বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হয়নি। পরে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাবে বলে জানায় র্যাব। এর আগে, মঙ্গলবার রামু উপজেলা কম্পাউন্ডের মসজিদে তারাবির নামাজ আদায় করছিলেন নিজাম উদ্দিন। এ সময় সন্ত্রাসীরা মসজিদে ঢুকে তাকে নিয়ে চলে যায়। তার মুক্তিপণ হিসেবে ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা দাবি করা হয়। কেএনএফ সদস্যদের একের পর এক লুটপাট ও অপহরণের ঘটনায় বুধবার এক জরুরি সভা ডেকেছিল শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি। সভায় নেওয়া সিদ্ধান্ত তুলে ধরার জন্য গত বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলন করা হয়। তবে থানচিতে দুটি ব্যাংক থেকে টাকা লুট ও ব্যাংক কর্মকর্তাকে অপহরণের ঘটনায় সশস্ত্র গোষ্ঠী কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) সঙ্গে সব ধরনের আলোচনা বন্ধ ঘোষণা করেছে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি।