মানবতাবিরোধী অপরাধে তিনজনের পক্ষে সাফাই সাক্ষীর জেরা ২৫ এপ্রিল

প্রবাহ রিপোর্ট : একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় ঝিনাইদহের মো. আব্দুর রশিদসহ (৬৬) তিন আসামির পক্ষে সাফাই সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়েছে। সাক্ষীর জবানবন্দি শেষে জেরার কার্যক্রম করার জন্য আগামী ২৫ মে পরবর্তী দিন ঠিক করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। আসামিদের মধ্যে মো. আব্দুর রশিদ মিয়া (৬৬) ও মো. সাহেব আলী মালিথা (৬৮) কারাগারে আছেন। অন্য একজন পলাতক, যার নাম প্রকাশ করেনি তদন্ত সংস্থা। বিজ্ঞাপন গতকাল সোমবার ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি আবু আহমেদের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল এ দিন ধার্য করেন। ট্রাইব্যুনালের অন্য দুই সদস্য হলেন বিচারপতি কেএম হাফিজুল আলম ও বিচারক এএইচএম হাবিবুর রহমান ভূঁইয়া। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের শুনানিতে ছিলেন প্রসিকিউটর রেজিয়া সুলতানা চমন। তার সঙ্গে ছিলেন সুলতান মাহমুদ সিমন। আর আসামিদের পক্ষে আইনজীবী অ্যাডভোকেট গাজী এম এইচ তামিম উপস্থিত ছিলেন না। গত বছর আসামিদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের সর্বশেষ সাক্ষী মামলার তদন্ত কর্মকর্তার (আইও) জবানবন্দি গ্রহণ শেষ হয়। এরপর আসামিদের সাফাই সাক্ষী গ্রহণ শুরুর জন্য দিন ঠিক করেন ট্রাইব্যুনাল। এরই ধারাবাহিকতায় সাফাই সাক্ষ্য শুরু হয়।এর আগে মুক্তিযুদ্ধের সময় আটক, অপহরণ, নির্যাতন ও হত্যার অভিযোগে ঝিনাইদহের হলিধানী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা মো. আব্দুর রশিদ মিয়াসহ তিনজনের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন চূড়ান্ত করেছিল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। এরপর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল। পরে তাদের বিরুদ্ধে (ফরমাল চার্জ) আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে বিচারকাজ শুরু হয়। আসামিদের বিরুদ্ধে মামলার তদন্ত কর্মকর্তাসহ (আইও) আটজন সাক্ষী জবানবন্দি পেশ করেছেন। ২০১৯ সালের ২৮ নভেম্বর দুপুরে ধানমন্ডিতে তদন্ত সংস্থার কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে প্রতিবেদনটির সারসংক্ষেপ তুলেন সংস্থাটির জ্যেষ্ঠ সমন্বয়ক এম সানাউল হক। এটি ছিল তদন্ত সংস্থার ৭৫তম প্রতিবেদন। এর আগে ২০২১ সালের ২১ অক্টোবর আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পরদিনই রশিদ ও সাহেব আলীকে গ্রেপ্তার করে ঝিনাইদহ পুলিশ। তখন সংস্থার তৎকালীন প্রধান সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান খান আসামিদের রাজনৈতিক পরিচয় তুলে ধরে বলেন, মো. আব্দুর রশিদ মিয়া মুক্তিযুদ্ধের সময় জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির কৃষক সংগ্রাম সমিতির হলিধানী ইউনিয়নের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৪ সালে এ পার্টির পরোক্ষ সহায়তায় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য এবং ১৯৮৮ হলিধানী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালে এ আসামি আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে হলিধানী ইউনিয়ন সভাপতি হন। এখন পর্যন্ত তিনি এ পদে আছেন। গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আব্দুর রশিদ মিয়া আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন নিয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। অন্য আসামি মো. সাহেব আলী মালিথা একাত্তরে জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকলেও পরে তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যুক্ত হন বলে জানান হান্নান খান। তদন্তের সারসংক্ষেপ তুলে ধরে সানাউল হক বলেন, চার আসামির বিরুদ্ধে ২০১৬ সালের ২৭ জুন তদন্ত শুরু হয়ে শেষ হয় ২০১৯ সালের ২৮ নভেম্বর। এ মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা, গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে বলে জানিয়েছেন ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন। তাদের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের সময় অপহরণ, আটক, নির্যাতন ও হত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের তথ্য-প্রমাণ তদন্তে উঠে এসেছে। এসব অপরাধে তাদের বিরুদ্ধে দুটি অভিযোগ আনা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের সময় আসামিরা ঝিনাইদহ জেলার সদর ও হলিধানী ইউনিয়নের কোলাগ্রামে এসব অপরাধ সংঘটিত করে বলেন সানাউল হক।
আসামিদের বিরুদ্ধে দুই অভিযোগ: প্রথম অভিযোগে বলা হয়, ১৯৭১ সালের ১৭ জুন মো. আব্দুর রশিদ মিয়ার নেতৃত্বে সহযোগী সাহেব আলী মালিথা ও পলাতক আসামিসহ ১০-১৫ জন রাজাকার কোলা গ্রামে শহীদ আজিবর ম-লদের বাড়ি আক্রমণ করে। এসময় মুক্তিযোদ্ধা মহির উদ্দিন ম-ল ও আসির উদ্দিন ম-লকে না পেয়ে তাদের তিনভাই আজিবর, হবিবর রহমান ম-ল ওরফে হাবা ম-ল ও আনছার ম-লকে আটক ও মারধর করে। পরে তাদের পিঠমোড়া করে বেঁধে ঝিনাইদহ শহরের দিকে নিয়ে যাওয়ার পর মাগুরা রোডের ধোপাঘাটা ব্রিজের ওপর গুলি করে হত্যার পর লাশ নবগঙ্গা নদীতে ফেলে দেয় আসামিরা।
দ্বিতীয় অভিযোগে বলা হয়, ১৯৭১ সালের ২৪ জুন আসামিরা মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগী কোলা গ্রামের নিরীহ, নিরস্ত্র মুলুক চাঁনকে তার বাড়ি থেকে অপহরণ করে নিয়ে যাওয়ার পর তার আর সন্ধান মেলেনি।