
দামেস্ক কনস্যুলেটে হামলায় জড়িত একটি গোয়েন্দা ঘাঁটি ও নেভাতিম বিমানঘাঁটিতে ক্ষেপনাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলের ব্যপক ক্ষয়ক্ষতি # বাড়াবাড়ি করলে ইসরায়েলে আরও ১০ গুণ শক্তিশালী হামলার হুঁশিয়ারি ইরানের # এই হামলা ছিল একটি হামলার জবাব মাত্র
প্রবাহ রিপোর্ট ঃ সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে কনস্যুলেটে হামলার জেরে ইসরায়েলকে নজিরবিহীন জবাব দিয়েছে ইরান। প্রতিশোধ নিতে শনিবার রাতে ইসরায়েলের মাটিতে তিন শতাধিক ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে ইরান। এর মধ্যে ইরানের ছোড়া অন্তত নয়টি ব্যালিস্টিক মিসাইল ইসরায়েলের দু’টি বিমানঘাঁটিতে আঘাত হেনেছে। এ ক্ষেত্রে ইসরায়েলের বিস্তৃত আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা এবং ওই অঞ্চলে দেশটির মিত্রশক্তিগুলোর ছোড়া গুলি এড়িয়ে লক্ষ্যবস্তুতে পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছে।
এর মধ্যে পাঁচটি ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলের নেভাটিম বিমানঘাঁটিতে আঘাত হেনেছে। এতে সেখানে থাকা ইসরায়েলের একটি সি-১৩০ রসদবাহী উড়োজাহাজ, একটি রানওয়ে এবং একটি স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর চারটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হেনেছে ইসরায়েলের নেগেভ বিমানঘাঁটিতে। তবে সেখানে উল্লেখযোগ্য ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। অপরদিকে ইসরায়েলের কোনো বেসামরিক ও অর্থনৈতিক লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালানো হয়নি। শুধু সামরিক স্থাপনাগুলো লক্ষ্য করা হয়েছে। বিশেষ করে হেরমন পর্বতে ইসরায়েলের একটি গোয়েন্দা ঘাঁটিতে হামলা চালানো হয়েছে যেটি দামেস্ক কনস্যুলেটে হামলায় জড়িত। এখান থেকে ১ এপ্রিল সিরিয়ার দামেস্কে ইরানী কনস্যুলেটে হামলা করেছিল ইসরায়েল। এতে ইরানের বিপ্লবী গার্ডের দুই জেনারেলসহ ৭ উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তা নিহত হন। ইরান দাবি করছে তাদের ড্রোন ও অন্যান্য ক্ষেপনাস্ত্র যা প্রতিহত করা হয়েছে তা ছিল লক্ষ্য অন্যদিকে ব্যস্ত রাখার জন্য। আসল উদ্দেশ্য তাদের সফল হয়েছে। যেখান থেকে হামলা হয়েছিল সেখানেই আঘাত। ইসরায়েল এবারই প্রথম অ্যারো-৩ নামে আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ব্যবহার করেছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের যৌথ উদ্যোগে তৈরি করা এই অ্যারো-৩ বিশেষত হাইপারসনিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র আকাশেই ধ্বংস করার জন্য তৈরি হয়েছে। এরপরও নয়টি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানাটা দেশটির জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে যে কারণে হামলা চালানো হয়েছে, তার সব কটিই পূরণ হয়েছে বলে দাবি করেছেন ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর চিফ অব স্টাফ মোহাম্মদ বাগেরি। ইসরায়েল পরবর্তীতে প্রতিশোধমূলক হামলা না চালালে দেশটিতে আর কোনো হামলার পরিকল্পনা নেই তেহরানের, বলেও জানিয়েছেন তিনি। এদিকে, ইরানের প্রতিশোধমূলক হামলার জবাবে পাল্টা হামলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসরায়েলের যুদ্ধাকালীন মন্ত্রিসভা। যদিও সেই হামলা কখন এবং কোন মাত্রায় হবে তা নিয়ে দ্বিধাবিভক্তি রয়েছে। স্থানীয় সময় রবিবার বিকালে ইসরায়েলের পাঁচ সদস্যের মন্ত্রিসভা এই সিদ্ধান্ত নেয়। মোহাম্মদ বাগেরির বক্তব্যের বরাতে তাসনিম নিউজ জানিয়েছে, ইসরায়েল চূড়ান্ত সীমা অতিক্রম করায় গত শনিবার হামলা চালিয়েছে ইরান। সতর্ক করে তিনি আরও বলেছেন, ইরানের এই হামলার জবাবে ইসরায়েল ‘অনেক বড় পরিসরে’ হামলা চালাতে পারে। এই পরিস্থিতিতে মধ্যপ্রাচ্যে সাংঘর্ষিক অবস্থা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করছে জাতিসংঘ। ইরান এরই মধ্যে ইসরায়েলের পাল্টা হামলার মতো বাড়াবাড়ি নিয়ে সতর্ক করেছে। ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর চিফ অব স্টাফ মোহাম্মদ বাগেরি গত রবিবার হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, শনিবারের হামলার চেয়ে ১০ গুণ শক্তিশালী হামলা চালাতে সক্ষম তেহরান। তিনি বলেন, ইসরায়েলের কোনো বেসামরিক ও অর্থনৈতিক লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালানো হয়নি। শুধু সামরিক স্থাপনাগুলো লক্ষ্য করা হয়েছে। বিশেষ করে হেরমন পর্বতে ইসরায়েলের একটি গোয়েন্দা ঘাঁটিতে হামলা চালানো হয়েছে যেটি দামেস্ক কনস্যুলেটে হামলায় জড়িত। এছাড়া নেগেভ মরুভূমিতে ইসরায়েলের নেভাতিম বিমানঘাঁটিতেও হামলার কথা জানান তিনি। ইরানের হামলায় ইসরায়েলের এসব সামরিক স্থাপনা ধ্বংস হয়েছে দাবিও জানিয়ে মোহাম্মদ বাগেরি।