জাতীয় সংবাদ

ফের সরকারবিরোধী বিক্ষোভে উত্তাল গোটা ইসরায়েল-যুক্তরাষ্ট্র

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতা নিয়াহু’র গ্রেফতার আতঙ্কে দৌড়ঝাপ, হাজার হাজার ইসরায়েলি বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ শুরু করেছে, যুক্তরাষ্ট্রের ৪০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিক্ষোভ ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে

প্রবাহ রিপোর্ট ঃ আবারও সরকারবিরোধী বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠেছে পুরো ইসরায়েল। মূলত ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের হাতে আটক থাকা জিম্মিদের উদ্ধার এবং আগাম নির্বাচনের দাবিতে ইসরায়েলজুড়ে এই বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। সম্প্রতি হামাসের প্রকাশিত একটি ভিডিওতে গাজায় আটক দুই বন্দি ইসরায়েলি সরকারের কাছে তাদের মুক্তি নিশ্চিত করার জন্য বন্দিবিনিময় চুক্তি করার দাবি জানায়। এই ভিডিও প্রকাশের পর ইসরায়েলজুড়ে আবারও তীব্র বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। ইসরায়েলি সম্প্রচার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বিক্ষোভকারীরা ইসরায়েলের কাপলান স্কোয়ারে জড়ো হয়ে গাজায় হামাসের সঙ্গে বন্দিবিনিময় চুক্তি এবং আগাম নির্বাচনের দাবি জানান। গাজায় আটক বন্দিদের পরিবারের সদস্যরাও এদিনের বিক্ষোভে অংশ নেয় এবং বিক্ষোভকারীদের সামনে বক্তৃতা দেয়। এদিন হাজার হাজার ইসরায়েলি তেল আবিবের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সামনে বিগিন স্ট্রিটে জড়ো হয়েছিলেন। পশ্চিম জেরুজালেমে ইসরায়েলি প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হারজোগের বাড়ির কাছেও বিক্ষোভ করেছেন অনেকে। সিজারিয়ায় প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বাসভবনের কাছে এবং হাইফায়ও কয়েক হাজার ইসরায়েলি বিক্ষোভ করেছেন। বিক্ষোভের একপর্যায়ে কাপলান স্কোয়ারে পুলিশ ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। বন্দিদের পরিবার বলেছে, ইসরায়েলকে অবশ্যই রাফায় আক্রমণ বন্ধ অথবা হামাসের সঙ্গে চুক্তির মধ্যে যেকোনও একটি বেছে নিতে হবে। এছাড়া এই পরিবারগুলো যুদ্ধের অবসান ঘটিয়ে হলেও গাজায় আটক বন্দিদের মুক্তি নিশ্চিত করার জন্য সরকারি সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, হামাসের হাতে ২৪০ থেকে ২৫৩ ইসরায়েলি বন্দির ছিল। যাদের মধ্যে তিনজনকে ইসরায়েল মুক্ত করেছিল এবং ১০৫ জনকে হামাস গত বছরের নভেম্বরে বন্দি বিনিময় চুক্তির সময় মুক্তি দিয়েছিল। অপরদিকে ইসরায়েলি হামলায় ৭০ জন বন্দির নিহত হওয়ার কথা বলে থাকে হামাস। অপরদিকে ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভে উত্তাল আমেরিকার ৪০ বিশ্ববিদ্যালয়, চাপে রয়েছে বাইডেন প্রশাসন। আমেরিকার বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যের ৪০ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়েছে ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভ। ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের চলমান যুদ্ধবিরোধী এই প্রতিবাদের সূচনা হয় দেশটির কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। এরপর তা দ্রুত সময়ের মধ্যে গোটা দেশের বিভিন্ন ক্যাম্পাসে। বিক্ষোভ সামাল দিতে পারছে না কর্তৃপক্ষ। এতে চাপে পড়েছে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন। বিক্ষোভ থামাতে বিভিন্ন পদক্ষেপে ব্যর্থ হওয়ার পর ক্যাম্পাসে পুলিশ ডাকে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট কর্তৃপক্ষ। আটক করা হয়েছে ৫৫০ জন শিক্ষার্থীকে। কোথাও কোথাও শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের নির্যাতনের বিষয়টিও সামনে এসেছে। কিন্তু তাতেও সমাধান হয়নি। উল্টো বিশ্ববিদ্যালয় সিনেট প্রেসিডেন্ট মিনোশি শফিকের বিরুদ্ধে তদন্ত চেয়ে প্রস্তাব পাস হয়েছে। প্রস্তাবটি ৬২-১৪ ভোটে পাস হয়। শান্তিপূর্ণভাবে এসব বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করছে শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবির মধ্যে রয়েছে, গাজায় যুদ্ধবিরতি ও ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক রাখা থেকে তাদের প্রতিষ্ঠানকে দূরে রাখার মতো বিষয়। শুক্রবার রাতে এনবিসি টুডের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, আমেরিকাজুড়ে ৪০টিরও বেশি ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। এসব ক্যাম্পাসে তাঁবু তৈরি করে গাজায় ইসরায়েলি হামলা বন্ধের দাবি করছেন শিক্ষার্থীরা। জানা গেছে, বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে বোস্টনের ইমারসন কলেজেও। শুক্রবার রাতে সেখান থেকে কমপক্ষে ১০০ শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়। এছাড়া ওহাইও স্টেট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২৪ জনের বেশি শিক্ষার্থীকে হেফাজতে নিয়েছে পুলিশি। জর্জিয়ার ইমোরি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর গত বৃহস্পতিবার রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়ে পুলিশ। ওই দিন দর্শন বিভাগের প্রধান নো লি ম্যাকাফিকে আটকের পরপরই ক্যাম্পাসে উত্তেজনা ছড়ায়। আটকের আগে তিনি আটলান্টা পুলিশকে শিক্ষার্থীদের তাঁবুর দিকে এগোনোর একটি ভিডিও পোস্ট করেছিলেন। তিনি ওই সময় পুলিশকে থামতে বলার পর তাকে আটক করা হয়। ইমোরি বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতির অধ্যাপক ক্যারোলিন ফোহলিনকেও আট করে পুলিশ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এক ভিডিওতে দেখা যায়, নিজের পরিচয় দেওয়ার পরও তাকে মাটিতে ফেলে দিয়ে হাতে হাতকড়া পরানো হয়।
ওহাইওতেও পুলিশের পক্ষ থেকে বৃহস্পতিবার রাতে শিক্ষার্থীদের আটকের ঘটনা ঘটে। ওই দিন রাতে অন্তত ৩০ জনকে আটক করা হয়।
এদিকে লস অ্যাঞ্জেলেসের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়েও ছড়িয়ে পড়েছে উত্তেজনা। সেখানে ইসরায়েলপন্থী ও ফিলিস্তিনপন্থী শিক্ষার্থীরা মুখোমুখি অবস্থান নিয়ে পরস্পরবিরোধী স্লোগান দিচ্ছেন। মার্কিন গণমাধ্যম সিএনএনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিক্ষোভে লাগাম টানতে আইনপ্রণেতাদের ক্রমবর্ধমান চাপের সম্মুখীন হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এরই জেরে বিক্ষোভের কেন্দ্রস্থল কলাম্বিয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় সিনেট বিক্ষোভ সামাল দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রশাসনের কার্যক্রম তদন্ত শুরু করেছে। এদিকে আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালতের (আইসিসি) মামলায় গ্রেফতার আতঙ্কে ভুগছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। তবে সেই গ্রেফতারি পরোয়ানা ঠেকাতে সর্বাত্মক কূটনৈতিক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। বেশ কয়েকটি ইসরায়েলি গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুসহ আরও কিছু ইসরায়েলি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করতে যাচ্ছে আইসিসি। নিউজ সাইট ওয়ালায় বিশ্লেষক বেন কাসপিট লিখেছেন, নেতানিয়াহু তার বিরুদ্ধে হেগের বিশ্ব আদালতের গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আশঙ্কায় ‘অস্বাভাবিক চাপে’ রয়েছেন। নেতানিয়াহু এবং অন্যান্য ইসরায়েলি নেতার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির অর্থ হল- ইসরায়েলের আন্তর্জাতিক সুনামে বড় ধরনের আঘাত। কাসপিট লিখেছেন, গ্রেফতারি পরোয়ানা প্রতিরোধে নেতানিহুয়া ‘বিরতিহীনভাবে টেলিফোনে চেষ্টা করে’ যাচ্ছেন। বিশেষ করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রশাসনের সাথে তিনি সর্বক্ষণ যোগাযোগ রাখছেন। ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম হারেৎসের বিশ্লেষক অ্যামোস হারেল লিখেছেন, ইসরায়েলি সরকার এই ধারণা নিয়ে কাজ করছে যে আইসিসির প্রসিকিউটর কবির খান চলতি সপ্তাহেই নেতানিয়াহু, প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট এবং আইডিএফ প্রধানের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করতে পারেন। হারেল জানিয়ছেন, আমেরিকা ইতোমধ্যেই গ্রেফতারি পরোয়ানা ঠেকানোর জন্য জোর তৎপরতা শুরু করে দিয়েছে। উল্লেখ্য, আইসিসির রোম চুক্তিতে ১২৪টি দেশ সই করলেও যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল তাতে স্বাক্ষর করেনি।
যুদ্ধের ব্যাপারে নেতানিয়াহুর সর্বশেষ সরকারি বিবৃতিতে দাবি বলা হয়েছে, আইসিসির আসন্ন সিদ্ধান্ত ‘বিপজ্জনক নজির’ সৃষ্টি করতে পারে।
তিনি শুক্রবার বলেন, ‘আমরা নিজেদের রক্ষা করা থেকে কখনও বিরত থাকব না। হেগ আদালতের সিদ্ধান্ত ইসরায়েলি পদক্ষেপের ওপর কোনও প্রভাব ফেলবে না।’ সূত্র: টাইমস অব ইসরায়েল, আনাদোলু এজেন্সি, দ্য গার্ডিয়ান, সিএনএন।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন
Close
Back to top button