জাতীয় সংবাদ

মাদকাসক্ত নারীদের ৩৯ শতাংশই ইয়াবা সেবী : আহ্ছানিয়া মিশন

প্রবাহ রিপোর্ট : আহ্ছানিয়া মিশন নারী মাদকাসক্তি চিকিৎসা ও পুনর্বাসন কেন্দ্র বলছে, ২০১৪ সাল থেকে এ পর্যন্ত তাদের কাছে ৭৬২ জন নারী চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করেছেন। এসব নারীর মধ্যে ৩৯ শতাংশ ইয়াবা গ্রহণকারী এবং ৩৯ শতাংশ গাঁজা গ্রহণকারী। এছাড়াও ঘুমের ওষুধ, মদ, শিরায় মাদক গ্রহণকারী ও অন্য মাদক গ্রহণকারী রয়েছেন। গত বছরের তুলনায় ছয় শতাংশ বেশি নারী ইয়াবা সেবন করেন বলে দাবি প্রতিষ্ঠানটির। আহ্ছানিয়া মিশন নারী মাদকাসক্তি চিকিৎসা ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের সাফল্যের ১০ বছর পূর্তি উপলক্ষে গতকাল সোমবার রাজধানীর শ্যামলীর ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন স্বাস্থ্য সেক্টর কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়। ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন স্বাস্থ্য ও ওয়াশ সেক্টরের পরিচালক ইকবাল মাসুদের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে মূল প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন প্রতিষ্ঠানের কাউন্সিলর জান্নাতুল ফেরদৌস মজুমদার। ইকবাল মাসুদ বলেন, নারী মাদকনির্ভরশীলদের চিকিৎসা প্রক্রিয়াটি পুরুষের তুলনায় বেশ জটিল ও সময় সাপেক্ষ। ক্রমবর্ধমান নারী মাদকনির্ভরশীলদের চিকিৎসা ও প্রতিরোধের দিকে বিশেষ নজর দেওয়া উচিত। এক্ষেত্রে অবিভাবক ও নীতিনির্ধারকদের বিশেষ ভূমিকা পালন করতে হবে। তিনি বলেন, এটি দেশের একমাত্র সম্পূর্ণ নারী কর্মী দ্বারা পরচিালিত চিকিৎসাকেন্দ্র যা রোগীদের নিরাপত্তাসহ চিকিৎসা নিশ্চিতে নিরলস চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এই কেন্দ্রে রোগীদের জীবন-দক্ষতা বৃদ্ধি ও পুনর্বাসনের জন্য ভোকেশনাল কোর্স ও উদ্যোক্তা কোর্স প্রদান করে। আহ্ছানিয়া মিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৪ সাল থেকে এ পর্যন্ত মোট ৭৬২ জন নারী চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করেছেন। তাদের মধ্যে ৩৯ শতাংশ ইয়াবা গ্রহণকারী, ৩৯ শতাংশ গাঁজা গ্রহণ করেন। এছাড়াও ঘুমের ওষুধ, মদ, শিরায় মাদক গ্রহণকারী ও অন্য মাদক গ্রহণকারী রয়েছেন। আহ্ছানিয়া মিশন নারী মাদকাসক্তি চিকিৎসা ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের গত বছরের (৩৩ শতাংশ ইয়াবা গ্রহণকারী, ২৮ শতাংশ গাঁজা, ১৬ শতাংশ ঘুমের ওষুধ) তথ্যের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে। মানসিক রোগের মধ্যে সিজোফ্রিনিয়া ৩৫ শতাংশ, মুড ডিজ্অর্ডার ২৬ শতাংশ, বাইপোলার ১২ শতাংশ, ডিপ্রেশন ১০ শতাংশ, ওসিডি ছয় শতাংশ বাকিরা অন্য মানসিক রোগে আক্রান্ত ছিলেন। ৭৬২ জন নারীর মধ্যে মাদকনির্ভরশীলতাজনিত সমস্যার জন্য ৪৬৩ জনের ও মানসিক সমস্যার জন্য ২৯৯ জনকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত যাচাই করে দেখা গেছে, ৭৬২ জন রোগীর মধ্যে ৭০ শতাংশ চিকিৎসার মেয়াদ পূর্ণ করেছেন। মেয়াদ পূর্ণ না করে চলে গেছেন ২২ শতাংশ এবং বিভিন্ন কারণে চার শতাংশ রোগীকে রেফার করা হয়েছে। বর্তমানে চিকিৎসা কেন্দ্রটিতে চার শতাংশ রোগী চিকিৎসারত। ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন স্বাস্থ্য ও ওয়াশ সেক্টরের কর্মকর্তারা জানান, মাদক গ্রহণকারী নারীর সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে বাড়লেও মাদকের চিকিৎসায় পিছিয়ে নারীরা। মাদকের প্রভাব পুরুষের চেয়ে ভিন্নভাবে নারীদের ক্ষতি করে। এক্ষেত্রে বলা যায় শারীরিক, মানসিক স্বাস্থ্যের পাশাপাশি প্রজনন স্বাস্থ্যে ওপর প্রভাব পড়ে। যা একজন নারীর সন্তান ধারণ, জন্ম ও লালন-পালন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সে কারণে সময়ের চাহিদার সঙ্গে সমন্বয় রেখে ২০১৪ সালের এপ্রিলে আহ্ছানিয়া মিশন নারী মাদকাসক্তি চিকিৎসা ও পুনর্বাসন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হয়, যা দেশের একমাত্র নারীদের পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসাকেন্দ্র। শুরু থেকে এই চিকিৎসাকেন্দ্র নারীদের মাদকনির্ভরশীলতা, মানসিক ও আচরণগত সমস্যার চিকিৎসা প্রদান করে আসছে। বিশ্বের সঙ্গে তালমিলিয়ে প্রতিষ্ঠানটি মাদকনির্ভরশীলতা ও মানসিক সমস্যাগ্রস্ত নারীদের জন্য ১০ বছর ধরে সাফল্যের সঙ্গে বিজ্ঞান ও প্রমাণভিত্তিক চিকিৎসা প্রদান করছে। ২০১৪ সালের ১২ এপ্রিল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী (তৎকালীন প্রতিমন্ত্রী) আসাদুজ্জামান খান আহ্ছানিয়া মিশন নারী মাদকাসক্তি চিকিৎসা ও পুনর্বাসন কেন্দ্র উদ্বোধন করেন। বাংলাদেশের প্রথম একমাত্র লাইসেন্সপ্রাপ্ত নারী মাদকাসক্তি চিকিৎসা ও পুনর্বাসন কেন্দ্র যা সর্ম্পূণ নারী কর্মী দ্বারা পরিচালিত। চিকিৎসা কেন্দ্রটি সব আধুনিক সুযোগ-সুবিধার পাশাপাশি শীতাতাপ নিয়ন্ত্রিত। এটি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর থেকে ২০২৩ সালে দেশের সেরা চিকিৎসা কেন্দ্র হিসেবে পুরষ্কার অর্জন করে। প্রতিষ্ঠানটির সিনিয়র সাইক্লোজিস্ট রাখী গাঙ্গুলীর সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে স্বাগত বক্তব্য রাখেন কেন্দ্র ব্যবস্থাপক ফারজানা ফেরদৌস।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন
Close
Back to top button