জাতীয় সংবাদ

দাম না বাড়িয়ে বিদ্যুৎ-জ্বালানির ভর্তুকি তুলে দিতে ১৩ দাবি ক্যাবের

প্রবাহ রিপোর্ট : মূল্যবৃদ্ধি না করে আগামী তিন বছরের মধ্যে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির ভর্তুকি শূন্যে নামিয়ে আনতে ১৩ দফা দাবি জানিয়েছে কনজুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)। গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর-রুনি হলে ক্যাব আয়োজিত অসাধু বিদ্যুৎ ও জ্বালানি ব্যবসা সুরক্ষায় মূল্যবৃদ্ধি নয়, জ্বালানি সুবিচার চাই শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির পক্ষ থেকে এসব দাবি জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা এম শামসুল আলম। তিনি বলেন, গত ২৫ এপ্রিল ঋণ কর্মসূচির আওতায় পর্যবেক্ষণে আসা আইএমএফের প্রতিনিধি দল অর্থ বিভাগের বাজেট অনু বিভাগের সঙ্গে বৈঠকে বিদ্যুৎ গ্যাস ও সারে ভর্তুকি উঠিয়ে দাম বৃদ্ধির মাধ্যমে সরবরাহ ব্যয় সমন্বয়ের সুপারিশ করেছে। ভর্তুকির অর্থ সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কার্যক্রমে খরচ করার পরামর্শ দিয়েছে। এ প্রসঙ্গে অর্থ বিভাগ বলেছে খাদ্য নিরাপত্তা বিষয়টি মাথায় রেখে আপাতত কৃষিতে পর্যাপ্ত ভর্তুকি দেবে সরকার। বোঝা যায়, জ্বালানি নিরাপত্তার বিষয়টি তাদের মাথায় নেই। তারা কি বোঝেনা, জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত না হলে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে না? আমরা মনে করি জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি না করে ভর্তুকি প্রত্যাহার করা সম্ভব। তিনি আরো বলেন, ভোক্তা যেন সঠিক দাম, মাপ ও মানে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি সেবা পায়, সেজন্য মূল্যহার নির্ধারণসহ বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ সরবরাহের সকল পর্যায়ে স্বচ্ছতা, ন্যায্যতা, সমতা, যৌক্তিকতা ও জবাবদিহিতা তথা জ্বালানি সুবিচার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে গত ২৯ এপ্রিল ক্যাব ভোক্তাদের পক্ষ থেকে এক সংস্কার প্রস্তাব প্রকাশ করে। সেই প্রস্তাব বাস্তবায়নে আমরা ১৩ দফা দাবি জানাচ্ছি। দাবিগুলো হলো:
১। বিদ্যুৎ জ্বালানি ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে প্রতিযোগিতাবিহীন যে কোনো ধরনের বিনিয়োগ আইন দ্বারা নিষিদ্ধ করতে হবে।
২। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ আইন ২০১০ রদ করতে হবে। এবং ২০০৩ সালের বাংলাদেশ রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) আইনের সংযোজিত ধারা সংশোধনক্রমে ৩৪ এর ‘ক’ ধারা রোহিত হতে হবে।
৩। গ্যাস উন্নয়ন তহবিল, বিদ্যুৎ উন্নয়ন তহবিল ও জ্বালানি নিরাপত্তা তহবিলের অর্থ যথাক্রমে বাপেক্সের গ্যাস অনুসন্ধান, পিডিবির বিদ্যুৎ উৎপাদন ও জ্বালানি আমদানিতে ঋণ নয় ভোক্তার ইক্যুইটি বিনিয়োগ হিসেবে গণ্য হতে হবে।
৪। মুনাফা ব্যতীত কস্ট বেসিসে ৫০ শতাংশের অধিক বিদ্যুৎ ও গ্যাস উৎপাদন সরকারের একক মালিকানায় হতে হবে। কস্ট প্লাস নয়, সরকার শুধু কস্ট বেসিসে বিদ্যুৎ জ্বালানি সেবা দেবে।
৫। প্রাথমিক জ্বালানি মিশ্রণে স্বল্প ও মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনায় এলএনজি কয়লা ও তেলের অনুপাত কমাতে হবে। নিজস্ব গ্যাস অনুসন্ধান ও মজুদ বৃদ্ধি এবং নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদন দ্বারা বিদ্যুৎ ও জ্বালানি আমদানি নিয়ন্ত্রণে রেখে আমদানি ব্যয় কমাতে হবে।
৬। সরকার ব্যক্তি খাতের সঙ্গে যৌথ মালিকানায় বিদ্যুৎ ও জ্বালানি ব্যবসা-বাণিজ্যে জড়িত হবে না এবং মালিকানাধীন কোম্পানির শেয়ার ব্যক্তি খাতে হস্তান্তর করবে না তা আইন দ্বারা নিশ্চিত করতে হবে। দ্বিতীয় তেল শোধনাগার এস আলম গ্রুপের সঙ্গে নয়, সরকারের একক মালিকানায় হতে হবে।
৭। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতভুক্ত সরকারি ও যৌথ মালিকানাধীন সকল কোম্পানির বোর্ড থেকে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিভাগের সকল আমলাদের প্রত্যাহার করতে হবে।
৮। নিজস্ব কারিগরি জনবল দ্বারা স্বাধীনভাবে উভয় খাতের কোম্পানি বা সংস্থাসমূহের কার্যক্রম পরিচালিত হতে হবে। সেক্ষেত্রে মন্ত্রণালয় শুধু বিধি ও নীতি প্রণয়ন, এবং আইন বিধি-প্রবিধান অনুসরণ ও রেগুলেটরি আদেশ সমূহ বাস্তবায়নে প্রশাসনিক নজরদারি ও সনদধারীদের জবাবদিহি নিশ্চিত করার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে হবে। আর রেগুলেটর হিসেবে বিইআরসিকে সক্রিয় স্বাধীন নিরপেক্ষ হতে হবে।
৯। জলবায়ু তহবিলসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য উৎস থেকে ঋণ নয় ক্ষতিপূরণ প্রাপ্তি নিশ্চিত হতে হবে। এবং সে ক্ষতিপূরণ ক্ষতিগ্রস্তদের সক্ষমতা উন্নয়ন ও নবায়নযোগ্য জ্বালানির বাজার সম্প্রসারণে আইন করে বিনিয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।
১০। বিদ্যুৎ জীবাশ্ম নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন নীতি আইন বিধি-বিধান ও পরিকল্পনা জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় সম্পাদিত প্যারিস চুক্তির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে।
১১। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উন্নয়নে সকল চুক্তি আইনি প্রক্রিয়ায় অনুমোদিত মডেল চুক্তি মত হতে হবে।
১২। ইতোমধ্যে বাপেক্স ও সান্তোসয়ের মধ্যে মগনামা-২ অনুসন্ধান কূপ খননে সম্পাদিত সম্পূরক চুক্তি, আরইবি ও সামিট পাওয়ারয়ের মধ্যে বিদ্যুৎ ক্রয় সম্পূরক চুক্তি, পিডিবি ও সামিট পাওয়ারের মধ্যে মেঘনাঘাট পাওয়ার প্লান্ট এর বিদ্যুৎ ক্রয় সম্পূরক চুক্তি, পিডিবি আদানির মধ্যে সম্পাদিত বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তিসহ সবগুলো জনস্বার্থ বিরোধী চুক্তি বাতিল করতে হবে। ১৯৯৪ সালের জ্বালানি সনদ চুক্তি স্বাক্ষরে সরকারকে বিরত থাকতে হবে।
১৩। জ্বালানি নিরাপত্তা সুরক্ষার লক্ষ্যে বিদ্যুতে জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণের জন্য এনার্জি প্রাইস স্ট্যাবিলাইজড ফান্ড গঠন করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য রাখেন ক্যাবের সভাপতি গোলাম রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক এম এম আকাশ বুয়েটের সাবেক অধ্যাপক ড. ইজাজ হোসেন।

 

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button