জাতীয় সংবাদ

ঈদযাত্রার প্রথম দিনেই ট্রেনে বিলম্ব, যাত্রীদের ভোগান্তি

প্রবাহ রিপোর্ট : ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে গতকাল বুধবার থেকে শুরু হয়েছে বিশেষ ব্যবস্থায় ট্রেনে ঈদযাত্রা। একই সঙ্গে চলাচল শুরু হয়েছে ‘ঈদ স্পেশাল’ ট্রেনেরও। তবে প্রথম দিনের যাত্রা স্বস্তিদায়ক হয়নি ঘরমুখো মানুষের জন্য। প্রথম দিনই রাজধানীর কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে বিলম্বে ছেড়ে যাচ্ছে অধিকাংশ ট্রেন। এতে ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা। তীব্র গরমের মধ্যেই স্টেশনে অপেক্ষা করতে হচ্ছে দীর্ঘ সময়। এতে অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন, আবার অনেকেই ঈদের সময় এই বিলম্বকেই ‘নিয়ম’ ভেবে মেনে নিয়েছেন। গতকাল বুধবার সকালে ঢাকা রেলওয়ে স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, স্টেশনে যাত্রীদের ভিড়। অনেকেই প্ল্যাটফর্মে বসে আছেন, আবার যাদের ট্রেন স্টেশনে এসে পৌঁছেছে, তারা আসনে গিয়ে বসে অপেক্ষা করছেন যাত্রা শুরুর। কিন্তু তাদের ঈদযাত্রা কখন শুরু হবে, তা জানেন না কেউই। ঢাকা রেলওয়ে স্টেশন থেকে দিনের প্রথম ট্রেন রাজশাহীগামী ধুমকেতু এক্সপ্রেস (৭৬৯) ভোর ৬টায় ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও ট্রেনটি স্টেশন ছেড়েছে সকাল ৭টা ২০ মিনিটে। দিনের দ্বিতীয় ট্রেন পর্যটক এক্সপ্রেস (৮১৬) ভোর ৬টা ১৫ মিনিটে ঢাকাস্টেশন ছাড়ার কথা থাকলেও সেটি ছেড়েছে ৬টা ৫০ মিনিটে। তৃতীয় ট্রেন সিলেটগামী পারাবত এক্সপ্রেস (৭০৯) সকাল সাড়ে ৬টায় ছাড়ার কথা থাকলেও সেটি ঢাকা স্টেশন ছেড়েছে সকাল সাড়ে ৮টায়। সকাল ৭টা ১৫ মিনিটে কিশোরগঞ্জগামী এগারোসিন্দুর প্রভাতী (৭৩৭) ট্রেনটি ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও সেটি ছেড়ে যায় সকাল ৯টা ১৯ মিনিটে। এছাড়াও মোহনগঞ্জগামী মহুয়া কমিউটার (৪৩) সকাল ৮টা ১৫ মিনিটে ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও সেটি এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত (সকাল সাড়ে ১১টা) কোনো প্লাটফর্ম পায়নি; চট্টগ্রামগামী কর্ণফুলী কমিউটার (৪) ৮টা ৪৫ মিনিটে ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও সেটিও এখন পর্যন্ত কোনো প্লাটফর্ম পায়নি; রংপুরগামী রংপুর এক্সপ্রেস (৭৭১) সকাল ৯টা ১০ মিনিটে ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও ৪০ মিনিট বিলম্বে ট্রেনটি ৯টা ৫৭ মিনিটে ঢাকা স্টেশন ছেড়ে যায়। দিনের প্রথম ঈদ স্পেশাল ট্রেন ‘দেওয়ানগঞ্জ ঈদ স্পেশাল’ ৯টা ২৫ মিনিটে ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও ট্রেনটি ১ ঘণ্টা বিলম্বে ১০টা ২৫ মিনিটে ঢাকা স্টেশন ছাড়ে। জামালপুরগামী জামালপুর এক্সপ্রেস (৭৯৯) সকাল ১০টায় ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ট্রেনটি কোনো প্লাটফর্ম পায়নি। পঞ্চগড়গ্রামী একতাএক্সপ্রেস (৭০৫) সকাল ১০টা ১৫ মিনিটে ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও ২৫ মিনিট বিলম্বে ১০টা ৪০ মিনিটে ঢাকা স্টেশন ছেড়ে যায়। এগারোসিন্দুর প্রভাতী ট্রেনের যাত্রী রাতুল যাচ্ছিলেন কিশোরগঞ্জ। সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছেন তার প্রিয় পোষা বিড়ালটিও। তিনিবলেন, সোয়া ৭টায় ট্রেন ছাড়ার কথা কিন্তু এখন ৯টার ওপর বাজে, ট্রেন ছাড়েনি। কেন ছাড়েনি তা বলতে পারছি না। বাজিতপুর যাবেন আবদুল বাছেদ। তিনিও উঠেছেন এগারোসিন্দুর প্রভাতী ট্রেনে। তিনি বলেন, ‘আমি ৬টা ৪০ মিনিটে স্টেশনে এসেছি, সোয়া ৭টায় ট্রেন ছাড়ার কথা। এখন সোয়া ৯টা বেজে গেলো, কিন্তু ট্রেন ছাড়ছে না। কিছু বলছেও না কখন ছাড়বে। ঠিক সময়ে ছাড়লে আমি এতক্ষণে পৌঁছে যেতাম। প্লাটফর্মে কথা হয় ট্রেনের আরেকযাত্রী ডা. সোহেল রানা রিপন, যাবেন রংপুর। সাড়ে ৮টায় তিনি ঢাকা রেলওয়ে স্টেশনে এসেছেন। তিনি বলেন, ৯টা ১০ মিনিটে ট্রেন ছাড়ার কথা। কিন্তু এখন সাড়ে ৯টা বেজে গেছে। কিন্তু ট্রেনই আসেনি প্ল্যাটফর্মে। কখন ট্রেন আসবে, কখন ছাড়বে বলা যাচ্ছে না। রংপুর এক্সপ্রেসের আরেক যাত্রী সাজ্জাদ হোসেন রিয়াদ। তিনি বলেন, আমি যাবো কুড়িগ্রাম, সাড়ে ৮টায় এসেছি। ট্রেন ছাড়ার কথা ৯টা ১০ মিনিটে। এখন পৌনে ১০টা বাজে, কিন্তু ট্রেন ছাড়েনি। এ সময় ট্রেনের এই বিলম্ব নিয়ে তিনি বিরক্তি প্রকাশ করে বলেন, ট্রেনের এরকম লেট আর নতুন কিছু না। রোজার ঈদে যাত্রায় সময়মতো যেতে পারলেও ঢাকায় ফেরার সময় প্রায় দুইঘণ্টা দেরিতে ট্রেন ছেড়েছিল। রেলওয়ের দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, ঈদযাত্রার প্রথম দিন হিসাবে সবকিছু ঠিকঠাকই ছিল। কিন্তু শুরুর দিকের দুইটি ট্রেনের কোচ সংযোজন ভুল হওয়ায় সেগুলো সংশোধন করতে আরও ঘণ্টাখানেক বেশি সময় লেগেছে। ফলে এই ট্রেনগুলোর বিলম্বের জের অন্য ট্রেনগুলোতেও টানতে হচ্ছে। ফলে ২০-৩০ মিনিট দেরি হচ্ছে।
সময় মতো যেতে পারেনি ‘স্পেশাল’ ট্রেনও: এদিকে বাংলাদেশ রেলওয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, গতকাল বুধবার থেকে ১০ জোড়া (২০টি) ঈদ স্পেশাল ট্রেন চলাচল শুরু করছে। ঈদযাত্রার ভিন্ন ভিন্ন দিনে চলাচল করবে এসব ট্রেন। আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে ঘরমুখো মানুষের ট্রেন যাত্রার সুবিধার্থে এই ঈদ স্পেশাল ট্রেন চলাচলের সিদ্ধান্ত নেয় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। কিন্তু প্রথম স্পেশাল ট্রেনটিই যেতে পারেনি সময়মতো, ঢাকা ছাড়তে হয়েছে ১ ঘণ্টা দেরিতে। রেলওয়ের কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী, ঈদুল আজহায় চাঁদপুর ঈদ স্পেশাল (১, ২, ৩ ও ৪) চট্টগ্রাম-চাঁদপুর-চট্টগ্রাম; দেওয়ানগঞ্জ ঈদ স্পেশাল (৫ ও ৬) ঢাকা-দেওয়ানগঞ্জ-ঢাকা; ময়মনসিংহ ঈদ স্পেশাল (৭ ও ৮) চট্টগ্রাম-ময়মনসিংহ-চট্টগ্রাম; কক্সবাজার ঈদ স্পেশাল (৮ ও ৯) চট্টগ্রাম-কক্সবাজার-চট্টগ্রাম রুটে ১২ জুন থেকে ঈদের আগের দিন পর্যন্ত ও ঈদের পরে সাত দিন চলাচল করবে। এছাড়া পার্বতীপুর ঈদ স্পেশাল (১৫ ও ১৬) জয়দেবপুর-পার্বতীপুর-জয়দেবপুর রুটে আগামী ১৩-১৫ জুন (৩ দিন) ও ঈদের পরে ২১-২৩ জুন (৩ দিন) চলাচল করবে। অন্যদিকে শোলাকিয়া ঈদ স্পেশাল (১১ ও ১২) ভৈরব বাজার-কিশোরগঞ্জ-ভৈরব বাজার; শোলাকিয়া ঈদ স্পেশাল (১৩ ও ১৪) ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ-ময়মনসিংহ; গোর-এ-শহীদ ঈদ স্পেশাল (১৭ ও ১৮) পার্বতীপুর-দিনাজপুর-পার্বতীপুর; গোর-এ-শহীদ ঈদ স্পেশাল (১৯ ও ২০) ঠাকুরগাঁও-দিনাজপুর-ঠাকুরগাঁও রুটে শুধু ঈদের দিন চলাচল করবে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা রেলওয়ে স্টেশনের স্টেশন ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ মাসুদ সারওয়ারবলেন, ঢাকায় আসার পর ট্রেনগুলো আবার ছেড়ে যায়। এখন ওইদিক থেকে যদি কোনো ট্রেন দেরিতে আসে তাহলে ট্রেনগুলো এইখান থেকেও দেরিতে ছেড়ে যায়। কারণ ট্রেনগুলো ঢাকায় আসার পরে ক্লিনিং, ওয়াটারিং করা হয়। এর জন্য প্রত্যেকটা ট্রেনে অন্তত এক ঘণ্টা সময় লাগে। তিনি আরও বলেন, আজ (গতকাল বুধবার) থেকে ট্রেনে ঈদ যাত্রা শুরু। আমাদের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে যাত্রীদের নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়া। যাত্রীদের নিরাপত্তার স্বার্থে ট্রেনগুলো ১০-২০ মিনিট দেরিতে ছাড়তে হতে পারে। এদিকে গত ঈদুল ফিতরের মতো এবারও প্ল্যাটফর্ম এলাকায় যেন কোনো টিকিটবিহীন ব্যক্তি প্রবেশ করতে না পারেন, সেজন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। যার ফলে ঢাকা স্টেশনের প্ল্যাটফর্ম এলাকায় অবাঞ্ছিত কোনো মানুষকে দেখা যায়নি। ঈদযাত্রায় ট্রেনের যাত্রীদের যেন কোনো ভোগান্তিতে পড়তে না হয়, সেজন্য প্লাটফর্ম এলাকায় প্রবেশমুখে র‌্যাব, পুলিশ এবং রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী (আরএনবি) কন্ট্রোলরুম স্থাপন করেছে। প্লাটফর্মে প্রবেশের মুখে ট্রাভেলিং টিকিট এক্সামিনারদের (টিটিই) দেখা গেছে, যাত্রীদের টিকিট চেক করতে, তবে এনআইডি মিলিয়ে দেখতে দেখা যায়নি এবার। যাদের টিকিট নেই, তারা ১-৬ নম্বর কাউন্টারে গিয়ে দাঁড়িয়ে যাওয়ার টিকিট সংগ্রহ করতে দেখা গেছে। তারপর যাত্রীরা প্ল্যাটফর্ম হয়ে নির্দিষ্ট গন্তব্যের ট্রেনে উঠছেন।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button