জাতীয় সংবাদ

আতঙ্কের আরেক নাম ‘রাসেল ভাইপার’

প্রবাহ রিপোর্ট : সম্প্রতি দেশে বিষাক্ত ও হিংস্র চন্দ্রবোড়া বা রাসেল ভাইপার সাপের উপদ্রব বেড়েছে উদ্বেগজনক হারে। এ সাপের আক্রমণে আতঙ্কে দিন পার করছেন জনসাধারণ।
দেশে একটা সময় বিলুপ্ত বলা হলেও দেশজুড়ে এখন মাথাব্যাথার কারণ হয়ে উঠেছে এই রাসেল ভাইপার। বরেন্দ্র অঞ্চলের বাসিন্দা হলেও সাপটির রাজত্ব এখন দেশের অন্তত ২৫টি জেলায়। পৌছে গেছে চাঁদপুর, বরিশাল, পটুয়াখালী পর্যন্ত। সব চেয়ে বেশি আনাগোন মানিকগঞ্জ, ফরিদপুর, শরীয়তপুরসহ পদ্মা, মেঘনা ও যমুনার অববাহিকায়, যার ছোবলে চলতি বছর এরই মধ্যে মারা গেছেন অন্তত ১০ জন, যাদের অধিকাংশই কৃষক এবং জেলে। এমনকি ঢাকার পাশের জেলা মানিকগঞ্জে রাসেল ভাইপারের কামড়ে গত তিন মাসে ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে।
রাসেল ভাইপার দেখতে অনেকটা অজগরের বাচ্চার মতো। ছোট ও সরু লেজের সরীসৃপটি দৈর্ঘ্যে তিন থেকে পাঁচ ফুট পর্যন্ত হয়ে থাকে। মাথা চ্যাপ্টা, ত্রিভুজাকার এবং ঘাড় থেকে আলাদা। শরীরজুড়ে অনেকটা চাঁদের মতো গাঢ় বাদামি গোল গোল দাগ। দৈহিক এই বৈশিষ্ট্যের কারণে শুকনো পাতা বা ধান ক্ষেতের মধ্যে খুব সহজেই নিজেকে লুকিয়ে রাখতে পারে রাসেল ভাইপার। এটি চন্দ্রবোড়া বা উলুবোড়া নামেও পরিচিত।
বিষধর সাপ হিসেবে পৃথিবীতে রাসেল ভাইপারের অবস্থান পঞ্চম। কিন্তু হিংস্রতা আর আক্রমণের দিক থেকে এর অবস্থান প্রথম। আক্রমণের ক্ষেত্রে এই সাপ এতটাই ক্ষিপ্র যে, ১ সেকেন্ডের ১৬ ভাগেরও ১ ভাগ সময়ে কামড়ের সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারে এটি। ক্ষেপে গেলে শব্দ করে প্রচ- জোরে। ঠিক যেন প্রেসার কুকারের মতো।
রাসেল ভাইপারের বিষ হেমাটোটক্সিক, যার কারণে ছোবল দিলে আক্রান্ত স্থানে পঁচন ধরে। ছোবলের ৫ মিনিটের মধ্যে ফুলে যায় ক্ষতস্থান। এই সাপের কামড়ে শরীরের দংশিত অংশে বিষ ছড়িয়ে অঙ্গহানি, ক্রমাগত রক্তপাত, রক্ত জমাট বাঁধা, স্নায়ু বৈকল্য, চোখ ভারী হয়ে যাওয়া, পক্ষাঘাত, কিডনি ও ফুসফুসের সংক্রমণসহ বিভিন্ন ধরনের শারীরিক জটিলতা দেখা দিতে পারে।
তবে আশ্চর্যের বিষয় হলো, সাপের এই প্রজাতিটি বাংলাদেশ থেকে বহু বছর আগেই বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল বলে ধারণা করা হচ্ছিল। কিন্তু গত ১০-১২ বছর আগে থেকে আবারো এই সাপের কামড়ের ঘটনার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। এই প্রজাতির সাপ এই অঞ্চলে আবার কীভাবে ফিরে আসছে, তা নিয়ে বাংলাদেশে গবেষণা চলছে।
বেশির ভাগ সাপ ডিম পাড়লেও রাসেল ভাইপার বাচ্চা দেয়। গর্ভধারণ শেষে স্ত্রী রাসেল ভাইপার সাধারণত ৪০ থেকে ৮০ টি বাচ্চা দেয়। তবে ৮০টি পর্যন্ত বাচ্চা দেয়ার রেকর্ডও আছে। একদিকে উচ্চ প্রজনন ক্ষমতা, সেইসঙ্গে ইঁদুর, ব্যাঙসহ সাপের পর্যাপ্ত খাবারের উপস্থিতি থাকায় বাড়ছে রাসেল ভাইপার। অন্যদিকে এ সাপের শত্রু শিয়াল, বেজি, গুইসাপের সংখ্যা প্রকৃতিতে কমে যাওয়ায় এর বিস্তারে সহায়ক হচ্ছে।
চিকিৎসকের মতে, গোখরো সাপের দংশনের গড় ৮ ঘণ্টা পর, কেউটে সাপের দংশনের গড় ১৮ ঘণ্টা পর ও চন্দ্রবোড়া (রাসেল ভাইপার) সাপের দংশনের গড় ৭২ ঘণ্টা বা তিন দিন পর রোগীর মৃত্যু হতে পারে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এই সময়সীমার মধ্যে অ্যান্টিভেনম প্রয়োগ করা জরুরি। সাপের কামড় বা দংশনের পরে, দ্রুত অ্যান্টিভেনম ইনজেকশন দিলে, অ্যান্টিভেনমের অ্যান্টিবডিগুলি বিষকে নিষ্ক্রিয় করে। যার ফলে আক্রান্ত ব্যক্তির জীবন বা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বেঁচে যায়।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button