সিলেটে বন্যায় সড়কেই ক্ষতি ৫০০ কোটি টাকা
প্রবাহ রিপোর্ট : সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির ক্রমেই উন্নতি হচ্ছে। জেলার বেশিরভাগ এলাকার রাস্তাঘাট থেকে নামতে শুরু করেছে পানি; নদীর পানিও কমছে। পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে ভেসে উঠছে ক্ষয়ক্ষতির চিহ্ন। এবারের বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে সড়কের। ঢল ও পানিতে ভেঙে গেছে সড়ক। অনেক স্থানে সেতুও ভেঙে গেছে ঢলের তোড়ে। এ ছাড়া কৃষি ও মৎস্যখাতেও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সিলেট নগর, এলজিইডি এবং সড়ক ও সেতু বিভাগের আওতাধীন সড়কগুলোতে পানি উঠে প্রায় ৫ শ’ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এ ছাড়া মৎস্য ও কৃষি খাতে ক্ষতি ৩ শ’ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। তবে পানি এখনও পুরো না নামায় ক্ষয়ক্ষতির পূর্ণাঙ্গ চিত্র এখনই পাওয়া যাবে না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এ ক্ষেত্রে ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা। সিলেট জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, গত বুধবার পর্যন্ত সিলেট জেলায় পানিবন্দি আছেন ৭ লাখ ৮৪ হাজার ২৫০ জন। এর মধ্যে আশ্রয়কেন্দ্রে রয়েছেন ১২ হাজার ৪২৩ জন। সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) প্রকৌশল শাখা সূত্রে জানা গেছে, এবারের বন্যায় নগরের ২৫০ কিলোমিটার সড়ক পানিতে তলিয়ে যায়। এতে প্রায় ৩০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। সিসিকের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান বলেন, ‘এখনও কিছু সড়কে পানি রয়ে গেছে। পানি পুরো নামলে ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে। বৃষ্টি মৌসুম শেষ হলেই জরুরি ভিত্তিতে এসব সড়ক সংস্কার করা হবে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সিলেট জেলার তথ্যানুযায়ী, বন্যায় সিলেটের ১৩টি উপজেলার ১৬০ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। টাকার অঙ্কে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১১৯ কোটি টাকা। এছাড়া সড়ক ও সেতু বিভাগের তথ্যমতে, বন্যায় সিলেট জেলার ৪০ কিলোমিটার সড়কে পানি উঠে প্রায় ৮৫ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সড়ক ও সেতু বিভাগের সিলেট জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী আমির হোসেন বলেন, ‘বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে গোয়াইনঘাট ও কানাইঘাট উপজেলার সড়কগুলোর। এ উপজেলার দুটি সড়ক যান চলাচলের অনুপযোগী হলে দ্রুত সংস্কার কাজ করে সেগুলো ঠিক করা হয়েছে। বাকিগুলোও দ্রুততম সময়ের মধ্যে সংস্কার করা হবে।’ এলজিইডি সিলেট জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী কে এম ফারুক হোসেন বলেন, ‘বন্যায় গ্রামীণ সড়কগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ক্ষতি হয়েছে গোয়াইনঘাট, সিলেট সদর, কোম্পানীগঞ্জ ও বালাগঞ্জ উপজেলায়। যেসব সড়ক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে তা সংস্কারের জন্য ডিপিপি চূড়ান্ত করে পাঠানো হবে।’ এদিকে, চলতি বন্যায় সিলেটের ১৩ উপজেলার ১৫ হাজার ৫০৬ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে ক্ষতির মুখে পড়েছেন জেলার ৯৮ হাজার ৬৫৩ কৃষক। জেলায় এবার আউশ বীজতলা, সবজি ও বোনা আমন ধানের ২০ হাজার ৪৪০ হেক্টর জমি আবাদ করা হয়েছিল। সিলেট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোহাম্মদ খয়ের উদ্দিন মোল্লা বলেন, ‘বন্যায় মোট ক্ষয়ক্ষতির আর্থিক পরিমাণ ২৭৫ কোটি ২১ লাখ টাকা। এর মধ্যে আমন ধান চাষীদের আর্থিক প্রণোদনা দেয়া হয়েছে, অন্যদেরও দেয়া হবে।’ সিলেট জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, বন্যায় জেলায় অন্তত ৪৪ কোটি ৮৫ লাখ ৬৬ হাজার টাকার মৎস্য সম্পদের ক্ষতি হয়েছে। ২১ হাজার ১১১টি পুকুর, দিঘি ও খামারের মাছ বন্যার পানিতে ভেসে গেছে। জেলা মৎস্য কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) সীমা রাণী বিশ্বাস বলেন, ‘সিলেটের ১৩টি উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে জকিগঞ্জে। এ উপজেলার ছয় হাজার ৭৫৫টি পুকুর, দিঘি ও খামারের মাছ ভেসে গিয়ে প্রায় ১৮ কোটি ৩৯ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।’ এদিকে, গত বুধবার সিলেটে নদনদীর পানি আরও কমেছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। বুধবার সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। অপরদিকে, কুশিয়ারা নদীর অমলসিদ পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৩ সেন্টিমিটার ও ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে বিপৎসীমার ৯৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। গত মঙ্গলবারের তুলনায় প্রত্যকটি পয়েন্টে পানি ৩ থেকে ১২ সেন্টিমিটার পর্যন্ত কমেছে। সিলেট আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মো. সজীব হোসাইন বলেন, ‘মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় সিলেটে ৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এরপর দিনভর আর বৃষ্টি হয়নি।