জাতীয় সংবাদ

স্বাভাবিক হয়নি যোগাযোগ ব্যবস্থা

রেমালে ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক, সেতু-কালভার্ট
ইউনি ব্লক ভিত্তিক রাস্তা নির্মাণের সুপারিশ

প্রবাহ রিপোর্ট : ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাব ও চলমান বন্যায় খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক, সেতু ও কালভার্টের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের পর কয়েক সপ্তাহ পার হলেও এখনও দেশের বিভিন্ন স্থানে স্বাভাবিক হয়নি যোগাযোগ ব্যবস্থা। ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে সারাদেশে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ) এবং স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) আওতাধীন ১৭০০ কিলোমিটার সড়ক এবং ৭ হাজার ৫১৭ মিটার সেতু ও কালভার্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানা যায়। গত ১৩ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে ঘূর্ণিঝড় রিমালের সার্বিক ক্ষয়ক্ষতির হিসাব হস্তান্তর করেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. মহিববুর রহমান। ঘূর্ণিঝড় রিমালের কারণে তিন লাখ ৮৩ হাজার ৮১৫ জন মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এ পর্যন্ত সাত হাজার ৪৮১ কোটি ৮৩ লাখ ৯ হাজার ২৫২ টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত সড়কের মধ্যে সওজের আওতাধীন ৯৮ কিলোমিটার সড়ক ও মহাসড়ক এবং এলজিআরডির আওতাধীন ১ হাজার ৬২৩ কিলোমিটার সড়ক রয়েছে। দুই সংস্থার কর্মকর্তারা জানান, সওজ তাদের রাজস্ব খাত থেকে এসব সড়ক মেরামতের চেষ্টা করছে। আর এলজিইডি পৃথক প্রকল্পের আওতায় ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক ও কালভার্ট মেরামতের কথা ভাবছে।
মন্ত্রণালয়ভিত্তিক ক্ষয়ক্ষতির বিবরণীতে ১০টি সুপারিশ করেছে দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। এ সুপারিশের মধ্যে রয়েছে, গ্রামীণ রাস্তায় ১৫ মিটার সেতু/কালভার্টের দৈর্ঘ্য বাড়িয়ে ৩০ মিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি করা যেতে পারে, পরিবেশ সুরক্ষায় প্রচলিত ইট ব্যবহার না করে ইউনি ব্লক ভিত্তিক রাস্তা নির্মাণ এবং রাস্তার বর্তমান সংখ্যা বাড়িয়ে পরবর্তী বছরে ৫ হাজারে উন্নিতকরণ।
জানা গেছে, সওজের হিসাবে তাদের আওতাধীন কমপক্ষে ৬৯টি সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত সড়কের মোট দৈর্ঘ্য ৯৮ দশমিক ৪৭ কিলোমিটার। এর মধ্যে জাতীয় মহাসড়কের দৈর্ঘ্য ১৮ কিলোমিটার, আঞ্চলিক মহাসড়কের দৈর্ঘ্য ১০ দশমিক ০১ কিলোমিটার, জেলা মহাসড়কের দৈর্ঘ্য ৭০ দশমিক ৪৭ কিলোমিটার। এসব সড়ক খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, পটুয়াখালী, বরগুনা, বরিশাল, পিরোজপুর, ভোলা, ফরিদপুর, ফরিদপুর, সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও নোয়াখালী জেলায়। ঘূর্ণিঝড়জনিত প্রবল জলোচ্ছ্বাস, অতিবৃষ্টিজনিত বন্যা ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলের পানিতে বিভিন্ন স্থানের সড়ক ডুবে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) ১ হাজার ৬২৩ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক ও সেতুর অধিকাংশই বরিশাল ও খুলনা বিভাগের। সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে পটুয়াখালী জেলায়। সর্বমোট ৭ হাজার ৫১৭ মিটার সেতু ও কালভার্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। খুলনা বিভাগের চারটি জেলায় ৩৬৯ দশমিক ৭৮ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে সাতক্ষীরায় ১৯৫ কিলোমিটার, বাগেরহাটে ১৩০, যশোরে ২৫ ও খুলনায় ১৭ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বরিশাল বিভাগের ৬টি জেলায় ৯৩৯ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে পটুয়াখালীতে ২২৭ কিলোমিটার, বরগুনায় ২১২ কিলোমিটার, পিরোজপুরে ১৮৪, ঝালকাঠিতে ১৪৫, ভোলায় ৮৯ ও বরিশালে ৭৯ কিলোমিটার। এলজিইডির তথ্য অনুযায়ী, নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় থেকে এসব সড়ক ও সেতু মেরামত করা সম্ভব হবে না। নতুন প্রকল্প নিয়ে এগুলো পুনর্বাসনের সম্ভাবনাই বেশি।
সওজের কর্মকর্তারা জানান, রিমালের কারণে বিভিন্ন সড়কে আংশিকভাবে ওয়াশআউট হয়েছে। সড়কবাঁধ ধসে পড়েছে। সড়কের উপরিভাগ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে রক্ষাপ্রদ কাজও। তা ছাড়া সওজের বিভিন্ন ফেরি অ্যাপ্রোচ ও ফেরিঘাট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে বরিশাল বিভাগের মেহেন্দীগঞ্জ ফেরিঘাট ও বাগেরহাট সড়ক বিভাগের আওতাধীন রায়েন্দা ফেরিঘাটের অ্যাপ্রোচ বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
সওজের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী সোয়েব আহমেদ বলেন, সারাদেশে ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক ও মহাসড়কের সংস্কার কাজ চলছে। অধিকাংশ স্থানে সংস্কার শেষ হয়েছে। ঝড়ের পর থেকে আমরা কাজ করছি। মূলত এগুলো মেইন্টেন্স বাজেট থেকে কাজ করা হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button