প্রতিটি বিভাগীয় শহরে মেট্রোরেল হবে : প্রধানমন্ত্রী
প্রবাহ রিপোর্ট : প্রতিটি বিভাগীয় শহরে মেট্রোরেল হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল শনিবার জাতীয় সংসদের অধিবেশনে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি একথা জানান। এ সময় স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন। শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমানে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল চলছে, যাতে প্রতিদিন প্রায় ২ লাখ ৪০ হাজার যাত্রী যাতায়াত করছে। বিশেষ করে মেয়েদের জন্য মেট্রোলের একটা নিরাপদ যান হিসেবে পরিগণিত হয়েছে। এই মেট্রোরেল চালু হওয়ার পরে ঢাকার যানজট অনেকাংশে কমেছে। তিনি বলেন, রাজধানীর যানজট সহনশীল করার জন্য ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট তৈরি করেছি, এর মাধ্যমে ৬টা রুটে মেট্রোরেল নির্মাণ করা হচ্ছে, একটি তো হয়েই গেছে। ইতোমধ্যে আমরা চট্টগ্রামে মেট্রোরেল নির্মাণের জন্য সার্ভে করছি। আমি থাকতে থাকতে প্রতিটি বিভাগীয় শহরে মেট্রোরেল হেড কোয়ার্টারের সঙ্গে সংযুক্ত করে দিয়ে যাবো। যাতে দেশের মানুষ দ্রুততম সময় যানজটমুক্ত হয়ে চলাচল করতে পারে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটকে মোটেই উচ্চাভিলাষী মনে করেন না বলে জানিয়ে তিনি বলেন, আমি মোটেই বাজেটকে উচ্চাভিলাষী মনে করি না। একটা লক্ষ্য আমরা স্থির করি। শতভাগ কখনো পূরণ হয় না। তারপরও আমাদের সুনির্দিষ্ট একটা লক্ষ্য থাকে যে এখানে আমরা যাবো। সেটা আমরা যেতে পেরেছি। কোথায় ৬২ হাজার কোটি টাকার বাজেট, আর কোথায় ৭ লাখ কোটি টাকার বাজেট! আমরা তো এই জায়গায় আসতে পেরেছি। প্রথানমন্ত্রী বলেন, চ্যালেঞ্জ নিয়েছি বলেই (বড় বাজেট বাস্তবায়ন) সম্ভব হয়েছে। আমাদের ইচ্ছাটা কী? দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন। সেজন্যই তো উন্নয়নটা হয়। আমাদের উন্নয়নের ধারা যেন অব্যাহত থাকে সে লক্ষ্যেই আমরা এই বাজেট প্রণয়ন করেছি এবং উন্নয়ন বাজেট দিয়েছি। এখানে কমানোর কিছু নেই। তিনি বলেন, এই বাজেটের মধ্যে আগামী দিনে আমরা যে প্রেক্ষিত পরিকল্পনা করেছি ২০২১ থেকে ২০৪১ সাল, সেটি বাস্তবায়নে সক্ষম হবো। সে ধারাবাহিকতা আমাদের আছে। আমরা একটা রাজনৈতিক দল করি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। আমাদের কিন্তু নিজেদের ঘোষণাপত্র আছে, আমরা কিন্তু নির্বাচনের আগে ইশতেহার ঘোষণা করি। এই ইশতেহার আমরা কখনো ভুলে যাই না। জাতির কাছে যে ওয়াদা দিয়ে জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে আমরা ক্ষমতায় এসেছি, তা পালন করি। এই বাজেট প্রণয়নকালীন আমাদের যে নির্বাচনী ইশতেহার, সেটির অগ্রাধিকার এবং মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের যে দিক নির্দেশনা- সেটাও বাজেটে উঠে এসেছে। শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাস সর্ববৃহৎ বাজেট আমরা দিয়েছি। বাজেটের আকার ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। আমাদের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ। বাজেটের ওপর এ পর্যন্ত বিরোধীদলীয় নেতাসহ ২৩৪ জন সংসদ সদস্য বক্তব্য রেখেছেন। তারা বাজেটের ওপর আলোকপাত করেছেন এবং পরামর্শ দিয়েছেন। এর বাইরে অনেকেই বাজেট নিয়ে আলোচনা করেছেন। দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছি। সে যেই হোক দুর্নীতি করলে কারও রক্ষা নেই। যারাই দুর্নীতি করবে আমরা ধরবো। বাংলাদেশ কখনো পিছিয়ে পড়েনি, এগিয়ে যাচ্ছে। দেশ পিছিয়ে যাবে না, যে যতই চেষ্টা করুক দেশকে ধ্বংস করতে পারবে না। এ স্বপ্নযাত্রার আকাক্সক্ষা পূরণ করবে এ দেশের মানুষ। বিরোধী দলের নেতা কালো টাকা সাদা করেছেন কি না তা দেখতে হবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কালো টাকা সাদা, এটা কালো টাকা সাদা না। এখন সব জিনিসের দাম বেড়ে গেছে। ঢাকায় এক কাঠা জমি আছে সে কয়েক কোটি টাকার মালিক। এভাবে অনেক সময় কিছু করতে যেয়ে অতিরিক্ত অর্থ চলে আসে। সেটা তারা বাজেটে দেখাতে পারে না, আয়কর দিতে পারে না। আয়কর দিয়ে যাতে মূল জনগোষ্ঠীতে ফিরে আসে। এ ধরনের কার্যক্রম যাতে না করে সে জন্য মাঝে মাঝে এ ধরনের সুযোগ দেওয়া হয়। এ সুযোগ খালেদা জিয়া নিয়েছিলেন, ড. কামাল হোসেনসহ আরও অনেকেই নিয়েছিলেন। তারা কিন্তু ২০০৬, ৭, ৮ বা পরবর্তীতে সুযোগ নিয়ে টাকা সাদা করেছিলেন। জেনারেল এরশাদ সাহেবও মনে হয় করেছে। খোঁজ নিতে হবে। তিনি না করলেও কেউ না কেউ করেছে। আমাদের বিরোধী দলীয় নেতা করছেন কি না সেটা দেখতে হবে। বিরোধী দলীয় নেতা জিএম কাদেরের বক্তব্যের জবাবে সরকার প্রধান বলেন, টেন্ডারের শুভঙ্করের ফাঁকির কথা তিনি বলেছেন। টেন্ডার না দিয়ে কাজ দেওয়া। তিনিতো মন্ত্রী ছিলেন টেন্ডার না দিয়ে কাজ করে, কাজের মাধ্যমে কিছু উপার্জন করার বিষয় মনে হয় তিনি নিজেই রপ্ত করেছেন। আমাদের সুচিন্তিত কৌশল এবং গণমানুষের শক্তিকে যুগপথ ধারণ করে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার মাধ্যমে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ব। এই বাজেট বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ একধাপ এগিয়ে যাবে। যোগাযোগ ব্যবস্থার ক্ষেত্রে সরকারের পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়ন হলে পূর্ব ও দক্ষিণ এশিয়ার উন্নয়নের হাব হিসেবে বাংলাদেশ গড়ে উঠবে বলে সরকার প্রধান আশা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, সরকার সারাদেশব্যাপী যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি করেছে বলেই অর্থনীতিতে প্রাণচাঞ্চল্য এসেছে। আমার লক্ষ্য কেবল বাংলাদেশ নয়, আমরা এশিয়ান হাইওয়ের সঙ্গে যুক্ত হবো। প্রতিবেশী দেশসমুহের সঙ্গে রেল ও সড়ক যোগাযোগ সহজতর হবে। বড়লোকদের এলাকায় লোডশেডিং দেওয়ার কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, বিদ্যুৎ নিয়ে অনেক কথা। যে বিশেষ আইন করেছি সেটা নিয়েও সমালোচনা শুনছি। আমার প্রশ্ন হচ্ছে এ বিশেষ আইন যদি না করতাম। বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র নির্মাণ না করলে আজ বিদ্যুতটা আসতো কোথা থেকে? আমরা ৩০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা অর্জন করেছি। ভবিষ্যতে বিদ্যুৎ যাতে পরিবেশবান্ধব হয় আমরা সেদিকে দৃষ্টি দিয়েছি। নেপাল ও ভারত থেকে বিদ্যুত আমদানির উদ্যোগ নিয়েছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, লোডশেডিং! আমি বলে দিয়েছি আমার গ্রামে লোডশেডিং যেন না দেয়। গুলশান, বানানী, বারিধারা, এসব বড়লোকদের এলাকায় ২ হাজার মেগাওয়াট লোডশেডিং দিয়ে তাদের মনে করিয়ে দিতে হবে এখন এয়ার কন্ডিশন, গাড়ি ইত্যাদি আরাম-আয়েশ এটা যে আসমান থেকে পড়েনি। এটা আমাদের করা; সেটা মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য অন্তত লোডশেডিং বিত্তশালীদের দিতে হবে। এ ব্যবস্থাটা আমরা করবো। জ¦ালানি তেল মজুত রাখার ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ বছর জ¦ালানি উন্নয়ন তহবিলে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। বিদ্যুৎ ও জ¦ালানি খাতে বর্তমানে বিপুল পরিমাণ ভর্তুতি দিতে হ।ে এ ভতর্িুকি ধীরে ধীরে কমাতে হবে। এ খাতে আমরা কেন ভর্তুকি দেবো? বেশি বেশি এয়ার কন্ডিশন, ফ্রিজ, লিফট চলার জন্য দেবো? তাতো দেবো না। দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে যেটা করার দরকার যেটা করবো। যে যত বেশি ব্যবহার করবে তাকে উৎপাদনের খরচটা অবশ্যই দিতে হবে। তবে আমরা হঠাৎ করে এটা করছি না। সহনশীল করে ধীরে ধীরে এটা করা হচ্ছে। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ও জ¦ালানির ব্যবস্থা আমরা করছি। আমরা এলএনজিতে ভর্তুকি দিই। ভবিষ্যতে সেই ভর্তুকি দেওয়া হবে না। সরকারের নেওয়া বিভিন্ন উন্নয়নমূলক পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে সমালোচকদের সমালোচনা করে করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের নেওয়া কিছু পদক্ষেপ তুলে ধরতে চাই। কারণ এতক্ষণ শুনলাম কিছুই করিনি। একটা গোষ্ঠী আছেই কিছু ভালো লাগে না। তাদের জানার জন্য বলার দরকার। তিনি বলেন, দেশে কিছু আঁতেল আছেন তারা সবকিছুতেই সমালোচনা করেন। ঋণখেলাপি নিয়ে অনেক কথা, মন্দ ঋণ নিয়ে অনেক কথা। ২০০৯ সালে জিডিপির আকার ছিল ১০২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। তখন ঋণের পরিমাণ ছিল মাত্র ২২ হাজার কোটি টাকা। মন্দ ঋণ ছিল ১০ দশমিক ৫ শতাংশ। ২০২৩ সালে জিডিপির পরিমাণ ৪৬০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ঋণের পরিমাণ ১ লাখ ৫৫ হাজার কোটি টাকা। মন্দ ঋণের হার হচ্ছে ৯ দশমিক ৯ শতাংশ। অর্থাৎ এটা কিন্তু হ্রাস পেয়েছে। সেটাকে বলার সময় উল্টো টাকার অঙ্ক বলে কিন্তু শতাংশ বলা হয় না। সেখানে শুভংকের ফাঁকি দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে। এভাবে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করবেন না। এভাবে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করবেন না। যারা এটা করে তা খুবই দুঃখজনক। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা সবসময় শান্তিতে বিশ্বাস করি। সশস্ত্র বাহিনীসহ প্রতিটি বাহিনীকে উন্নত করেছি। যুদ্ধ, সংঘাতের জন্য নয়। স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব রক্ষার প্রতীক হিসেবে। যেকোনো ক্ষেত্রে আমরা পিছিয়ে না থাকি, সে লক্ষ্য নিয়ে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে উন্নত, সমৃদ্ধ করেছি, আধুনিক প্রযুক্তি সম্পন্ন গড়ে তুলছি।