নদ-নদীতে আবারও বাড়ছে পানি, বন্যার আশঙ্কা

প্রবাহ রিপোর্ট :
উজানের ঢল ও ভারী বৃষ্টিপাতে তিস্তার পানি আবারও বাড়ছে। মঙ্গলবার (২ জুলাই) বিকেল ৩টা থেকে তিস্তা ডালিয়া পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার মাত্র ২০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর আগে একই পয়েন্টে দুপুর ১২টায় বিপৎসীমার ৩০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। পানিবৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে আবারও বন্যার আশঙ্কা করছে তিস্তাবাসী।
এর আগে গত রোববার (৩০ জুন) সন্ধ্যা ৬টায় তিস্তা ডালিয়া পয়েন্টে পানিপ্রবাহ বিপৎসীমার মাত্র ১৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। তবে সোমবার (১ জুলাই) ওই পানি আবারও কমে যায়। পানি বৃদ্ধিতে জেলার ৫ উপজেলার নদী তীরবর্তী নি¤œাঞ্চল ও তিস্তা চরাঞ্চলের পরিবারগুলো পানিবন্দি হয়ে পড়ে। পানি নিয়ন্ত্রণে দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারেজের ৪৪টি গেট এখনো খুলে রেখেছে কর্তৃপক্ষ।
যমুনা নদীতে একদিনে পানি বাড়ল ৩৩ সেন্টিমিটার :
উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও ভারি বর্ষণে টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে যমুনা নদীতে একদিনে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে ৩৩ সেন্টিমিটার। এছাড়াও জেলার ছোট-বড় সব নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। মঙ্গলবার (০২ জুলাই) সকালে টাঙ্গাইল জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী নূরুল আমিন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, গত সোমবার সকাল ৬ টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ৬ টা পর্যন্ত যমুনা নদীর পোড়াবাড়ী পয়েন্টে ৩৩ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ১ দশমিক ৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এরআগে বিপদসীমার ১০ দশমিক ৩৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছিল।
টাঙ্গাইল জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী নূরুল আমিন জানান, দু’দিন আগেও টাঙ্গাইলের যমুনা নদীসহ জেলার অন্যান্য নদ-নদীর পানি কমতে শুরু করে। কিন্তু ফের ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের কারণে যমুনাসহ জেলার সব নদীতে পানি বৃদ্ধি পেতে শুরু করছে। তবে, বড় ধরণা বড় ধরণের বন্যার সম্ভাবনা নেই।
এদিকে, পানি বৃদ্ধির শুরু থেকে ভূঞাপুর উপজেলার গাবসারা, অর্জুনা, গোবিন্দাসী ও নিকরাইল ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে চিতুলিয়াপাড়া, মাটিকাটা ও কোনাবাড়ী এলাকার বেশ কয়েকটি ঘর-বাড়ি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এছাড়া চরাঞ্চলের অপরিপক্ক তিল পানিতে তলিয়ে নষ্ট হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তিস্তার পানি বেড়ে যাওয়ায় লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার গড্ডিমারী, দোয়ানী, সানিয়াজান ইউনিয়নের নিজ শেখ সুন্দর, সিঙ্গামারি ইউনিয়নের ধুবনী, সিন্দুর্না, চর সিন্দুর্না, পাটিকাপাড়া, ডাউয়াবাড়ি, কালীগঞ্জ উপজেলার কাকিনা, ভোটমারি, শৈইলমারি, নোহালী, চর বৈরাতি, আদিতমারি উপজেলার মহিষখোচা, সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ, কালমাটি, রাজপুর, গোকু-া ইউনিয়নের তিস্তা নদী তীরবর্তী নি¤œাঞ্চল ও চরাঞ্চলের পরিবারগুলো পানিবন্দি হয়ে পড়েন। তবে সোমবার থেকে পানি কমে যাওয়ায় রাস্তা ঘাট জেগে ওঠে, অনেক বাড়িঘর থেকে নেমে যায় পানি। তবে কাদাযুক্ত রাস্তাঘাট ও ঘরবাড়িতে চলাচলে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন নি¤œাঞ্চলের মানুষজন। গরুর প্রধান খাদ্য খড় ভিজে যাওয়ায় গবাদি পশু নিয়ে তারা বিপাকে পড়েছেন। এদিকে আবারও তিস্তার পানি বৃদ্ধির খবরে চিন্তায় পড়েছে তিস্তাবাসী।
বন্যার কবলে সুনামগঞ্জ, বাড়ছে দুর্ভোগ : সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান খায়রুজ্জামান বাদল বলেন, তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেয়ে আমার ইউনিয়নের নদী তীরবর্তী নি¤œাঞ্চল ও চরাঞ্চলের ঘরবাড়িতে পানি প্রবেশ করে। তবে দ্রুত গতিতে পানি নেমে যাওয়ায় স্বস্তি ফিরে আসে নি¤œাঞ্চল ও চরাঞ্চল মানুষের। মঙ্গলবার বিকেল থেকে পানি আবারও বৃদ্ধি পাচ্ছে।