উত্তরা লে ১২টি পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে
বন্যা পরিস্থিতির অবনতি
প্রবাহ রিপোর্ট : রংপুর অ লে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। উত্তরা লে ১২টি পয়েন্টে নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। রংপুর, গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রাম জেলার দেড় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বানভাসি মানুষের খাবার পানির সংকট দেখা দিয়েছে। বাড়ীঘরসহ তলিয়ে গেছে ফসলি জমি। গাইবান্ধার ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৮৮ সেন্টিমিটার ও ঘাঘট নদীর পানি বিপৎসীমার ৩৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। করতোয়া নদীর পানি বাড়লেও তা বিপৎসীমার নিচে রয়েছে। ফলে এসব নদ-নদীর তীরবর্তী নি¤œা লের রাস্তা-ঘাট, ঘরবাড়ি ও আবাদি জমি প্লাবিত হয়েছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ৩৮ হাজার পরিবার। গতকাল শুক্রবার বিকাল ৩টায় গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেয়া তথ্য মতে, গত ২৪ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্র নদের পানির উচ্চতা ১৪ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৮৮ সেন্টিমিটার ও ঘাঘট নদীর পানি ১৫ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৩৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। করতোয়া নদীর পানি ২১ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেলেও বিপৎসীমার ১৩৯ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জেলায় ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ২৪ মিলিমিটার। গাইবান্ধা সদর, সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলায় বন্যায় ২৭টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। সদরের কামারজানি, ঘাগোয়া, ফুলছড়ির ফজলুপুর, এরেন্ডাবাড়ি এলাকায় প্লাবিত হয়েছে। প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। এসব এলাকার পানিবন্দী মানুষ গৃহপালিত পশু-পাখি নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছে। সাঘাটার ভরতখালী ইউনিয়নের দক্ষিণ উল্যাবাজার এলাকায় যমুনার পানির চাপে বাঁধের ৩০ ফিট এলাকা ধ্বসে যায়। এতে তিন ইউনিয়নের কমপক্ষে ২০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বাঁধ ভেঙ্গে পানি ঢুকে পড়ায় এসব এলাকার পাট, কাউন, তীল ও শাকসবজিসহ ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। কুড়িগ্রামের বন্যা কবলিত চরা লের মানুষের। নতুন চরে বসতগড়া পরিবারগুলোর ঘর-বাড়ি পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় নৌকা ও ঘরের মাচান উঁচু করে কোন রকমে খেয়ে না খেয়ে দিন পার করছে তারা। অনেকেই ঘর-বাড়ি ছেড়ে নৌকায় করে দূরবর্তী উঁচু জায়গায় আশ্রয় নিচ্ছেন। কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের চর বালাডোবা ও মুসার চরের প্রায় দুই শতাধিক পরিবার বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে। এসব পরিবারের কেউ নৌকায় আবার কেউ ঘরের ভিতর উঁচু করা মাচানে বসবাস করছে। কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র ও ধরলার পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। প্লাবিত হয়ে পড়েছে নদ-নদীর অববাহিকার চর ও নি¤œা ল। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ৪০ হাজার বেশি পরিবার। ব্রহ্মপুত্রের অববাহিকার মশালের চরসহ চরা লগুলো বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা শাখার তথ্য মতে, জেলার ৬টি উপজেলার নি¤œ লে ৩৫০ দশমিক ১৭ বর্গ কিলোমিটার এলাকা প্লাবিত হয়ে অর্ধ লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়েছে। কুড়িগ্রামের পাউবো নিয়ন্ত্রণ কক্ষ সুত্রে জানা যায়, গত ৪ দিন ধরে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গতকাল শুক্রবার সকাল ৯টায় ব্রহ্মপুত্র নদের পানি চিলমারী পয়েন্টে বিপৎসীমার ৭৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে, উলিপুর হাতিয়া পয়েন্টে ৮০ সেন্টিমিটার ও নাগেশ্বরীর নুন খাওয়া পয়েন্টে ৭২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ বলেন, বন্যা কবলিত মানুষের মাঝে ৩ হাজার ২৬৭ প্যাকেট শুকনো খাবার ইতিমধ্যেই বিতরণ করা হয়েছে। দুর্গতদের জন্য ১৭৬ মেট্রিক টন চাল ও ১০ লক্ষ ৩৫ হাজার টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। যা বিতরণ অব্যাহত রয়েছে। আরও নতুন করে ৫০০ মেট্রিক টন চাল ও ২০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। যা বন্যার্তদের মাঝে বিতরণ করা হবে। রংপুরে নদীর তীরবর্তী নি¤œ ল, চর ও দ্বীপ চরগুলো প্লাবিত হয়েছে। জেলার গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া ও পীরগাছা উপজেলায় কয়েক হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, আগামী ২৪ ঘণ্টায় দেশের উত্তরা লের তিস্তা, ধরলা, দুধকুমার ও ঘাঘট নদীসমূহের পানি সমতল সময় বিশেষে দ্রুত বৃদ্ধি পেতে পারে। ফলে তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদীসমূহের পানি সমতল কতিপয় পয়েন্টে স্বল্পমেয়াদে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে এবং ঘাঘট নদী সংলগ্ন গাইবান্ধা জেলার কতিপয় নি¤œা লের বন্যা পরিস্থিতি কিছুটা অবনতি হতে পারে। চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহের শুরুতে নদীসমূহের পানি সমতল হ্রাস পেতে পারে এবং পরবর্তী সময়ে চলমান পরিস্থিতি ক্রমান্বয়ে স্বাভাবিক হয়ে আসতে পারে। উত্তরা লের ১২টি পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সেগুলো হচ্ছে গাইবান্ধা (ঘাঘট) বিপৎসীমার ৩৭ সেন্টিমিটার, নুনখাওয়া (ব্রহ্মপুত্র) ৭২, হাতিয়া (ব্রহ্মপুত্র) ৮০, চিলমারী (ব্রহ্মপুত্র) ৭৮, ফুলছড়ি (যমুনা) ৮৭, বাহাদুরাবাদ (যমুনা) ৯৩, সাঘাটা (যমুনা) ৯০, সারিয়াকান্দি (যমুনা) ৫২, কাজিপুর (যমুনা) ৩৭, জগন্নাথগঞ্জ (যমুনা) ৯৬, সিরাজগঞ্জ (যমুনা) ৪৩, পোড়াবাড়ী (যমুনা) ১৬ সেন্টিমিটার। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের উত্তরা লের উল্লেখযোগ্য বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে নীলফামারীর ডারিয়ায় ৭৩ মিলিমিটার এবং প গড়ে ৫৮ মিলিমিটার।