সরকার কোটা বাতিলে আন্তরিক বলেই উচ্চ আদালতে আপিল করেছে : কাদের
![](https://dailyprobaha.com.bd/wp-content/uploads/2023/11/post-fp.webp)
প্রবাহ রিপোর্ট : সরকার কোটা বাতিলে আন্তরিক বলেই উচ্চ আদালতে আপিল করেছে উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আদালতের চূড়ান্ত রায় না হওয়া পর্যন্ত কোটা বাতিলের দাবিতে আন্দোলনকারীদের অপেক্ষা করতে হবে। গতকাল সোমবার আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ কথা বলেন তিনি। সেতুমন্ত্রী বলেন, সরকার কোটা বাতিলে আন্তরিক বলেই উচ্চ আদালতে আপিল করেছে। আদালতের চূড়ান্ত রায় না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। রাস্তাঘাট বন্ধ করে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করা পরিহার করা উচিত। আদালত কোটা বাতিলের পরিপত্র বাতিল করেছেন সরকারের পক্ষ থেকে ফের আপিল করা হয়েছে। তিনি বলেন, কোটা আন্দোলনের ৩১ জন শিক্ষার্থী বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারেনি। কোনো রাজনৈতিক দল আদালতের বিচারাধীন বিষয়ে পক্ষ নিতে পারে না। বিএনপি প্রকাশ্যে এই আন্দোলনে যুক্ত হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন ওবায়দুল কাদের। ওবায়দুল কাদের বলেন, শিক্ষকদের পেনশন স্কিম নিয়ে ভুল বোঝাবুঝি থাকতে পারে। সিদ্ধান্ত নিতে হবে বাস্তবতার আলোকে। শিক্ষক না আমলা-কে সুপিরিয়র সে বিতর্কে সরকার যাবে না। কাদের বলেছেন, বিএনপি ও তার সমমনারা কোটা আন্দোলনের ওপর ভর করেছে। তারা প্রকাশ্যে সাপোর্ট করেছে, এর মানে তারা এর মধ্যে অংশগ্রহণও করছে। কাজেই এখন এটা পোলারাইজড পলিটিক্সের মধ্যেই পড়ে গেছে। এটার পলিটিক্যাল কালার আর নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। ওবায়দুল কাদের বলেন, এখানে কারা কারা যুক্ত আছে, কোনো ষড়যন্ত্রের অংশ কিনা সেটা আন্দোলনের গতিধারার মধ্যেই বোঝা যাবে। সময়ের পরিবর্তনে সবকিছুই পরিষ্কার হয়ে যাবে। কোনো কিছুই লুকানো সম্ভব হবে না, সেটা আমরা পর্যবেক্ষণ করছি। কোনও আন্দোলনে রাজনৈতিক দল সমর্থন জানাতেই পারে, তার সমালোচনা কেন করছেন- এমন প্রশ্ন করা হলে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, আদালতের বিরুদ্ধে আন্দোলনে পৃথিবীর কোনো দেশে কোনো রাজনৈতিক দল সম্পৃক্ত হয়, দেখান? এটা বিচারাধীন। কোনো রাজনৈতিক দল পারে না এইভাবে। এটা তো আদালতের রায়। কোটা আন্দোলন নিয়ে তিনি বলেন, তারা যে আন্দোলনটা করছে সেই সিদ্ধান্ত ছিল সরকারের। সরকারই সেই আপিল করেছে। যে বিষয়টা আদালতের, সেই বিষয়টা নিয়ে কথা বলা, সমালোচনা করা বা প্রতিবাদ করা এটা তো আইনসিদ্ধ নয়। আরেক প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, আমরা আপিল করলাম, এখনও আদালত চূড়ান্ত রায় দেননি। এখানে আমরা কীভাবে ইন্টারফেয়ার করি? আমরা বলছি জনদুর্ভোগ হয় এমন আন্দোলন পরিহার করা উচিত। আদালতের রায় হোক তারপর দেখা যাবে। সর্বজনীন পেনশনের প্রত্যয় স্কিম নিয়ে শিক্ষকদের আন্দোলন নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, স্কিম মুখ থুবড়ে পড়বে কেন? এখানে ভুল বোঝাবুঝি থাকতে পারে। তাদের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগও আছে। আনুষ্ঠানিক বসা হয়তো হয়নি। সিদ্ধান্ত নিতে হবে বাস্তব পরিস্থিতির আলোকে। এখানে আমলা সুপিরিয়র না শিক্ষক সুপিরিয়র সে বিতর্কে আমরা যাবো না। যার যার পদমর্যাদার ভিত্তিতে যেটা বাস্তবসম্মত আমরা সেটাই করতে চাই। এর আগে আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে দুই মন্ত্রী ও দুই প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এতে আইনমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী থাকায় চলমান কোটাবিরোধী আন্দোলন নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। তবে এ বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু জানানো হয়নি। গতকাল সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টায় ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন ওবায়দুল কাদের। সংবাদ সম্মেলন শেষে দলের দপ্তর সম্পাদকের কক্ষে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী বেগম শামসুন্নাহার চাপা ও তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাতের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। এতে আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া উপস্থিত ছিলেন। ধানমন্ডি কার্যালয় সূত্র জানায়, দপ্তর সম্পাদকের কক্ষে শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল এবং তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলন শেষে সেখানে যান সড়ক পরিবহন সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। পরে বৈঠকে যোগ দেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী বেগম শামসুন্নাহার চাপা ও আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া। সূত্র মতে, কোটাবিরোধী আন্দোলনের নানা দিক ও করণীয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। নতুন করে আন্দোলন দানা বাঁধা, আন্দোলনে বিএনপির সমর্থন দেওয়া, শিক্ষকদের আন্দোলনও একই সময় হওয়া, পরিস্থিতির পর্যালোচনা এবং ইস্যুটি কোন দিকে যেতে পারে- এসব বিষয় আলোচনায় উঠেছে। তবে এ নিয়ে বৈঠকে অংশ নেওয়া কেউ কোনো কথা বলেননি। বৈঠক শেষে একে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা বেরিয়ে গেলেও কেউ গণমাধ্যমের সঙ্গে আলোচনার বিষয়বস্তু জানাননি। একাধিক সূত্র জানিয়েছে, সরকারি চাকরিতে কোটা একটি ‘যৌক্তিক’ পর্যায়ে রাখার ব্যাপারে ইতিবাচক আওয়ামী লীগ সরকার। বিশেষ করে মুক্তিযোদ্ধা, নৃগোষ্ঠী, প্রতিবন্ধীদের কোটা আংশিক থাকতে পারে। বিষয়টি বিচারাধীন থাকায় আইনমন্ত্রীকে এ ব্যাপারে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। বৈঠকে আলোচনার বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলকে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, নানান বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি। যে বিষয়গুলো আলোচনা করেছি, আসলে সেগুলো এই মুহূর্তে গণমাধ্যমের সঙ্গে আলোচনা করার মতো বিষয় না। কোটা আন্দোলন প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আদালতে যে বিষয়টি বিচারাধীন আছে, আমরা এ বিষয়ে এই মুহূর্তে কোনো মন্তব্য করবো না। সেটা আদালতের বিষয়। আমাদের অবস্থান হচ্ছে, যেহেতু আদালতে যে বিষয়টি বিচারাধীন আছে সে বিষয়ে আমরা মন্তব্য করবো না। অপেক্ষা করতে হবে। সরকার তো আপিল করেছে। সুতরাং আমি এ বিষয়ে মন্তব্য করবো না। তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাতের কাছে জানতে চাইলে সাংবাদিকেদের তিনি বলেন, সামগ্রিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। রাজনৈতিক, সাংগঠনিক বিষয় নিয়ে কথা হয়েছে। এটা রুটিন একটা বিষয়। কোটা নিয়ে আলোচনা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচলা হয়েছে। নির্দিষ্ট একটা বা দুইটা বিষয় নিয়ে নয়। সামগ্রিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে।। আজকের বসার বিষয়টা আপনারা জেনেছেন, এই বসাটা নিয়মিত। একটা আমরা নিয়মিত বসি। বিভিন্ন জায়গায় বসা হয়।