জাতীয় সংবাদ

কোটা নিয়ে হাইকোর্টের দেওয়া রায় স্থগিত চেয়ে আপিল : শুনানি আজ

সরকার কোটা বাতিলের জন্যই আপিল করেছে

প্রবাহ রিপোর্ট : সরকারি চাকরিতে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল করে জারি করা পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া রায় স্থগিত চেয়ে আবেদন করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী। গতকাল মঙ্গলবার আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম আবেদনটি শুনানির জন্য আজ বুধবার আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে পাঠিয়েছেন। আদালতে আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক। এর আগে আবেদন করার জন্য সকালে চেম্বার আদালত থেকে অনুমতি নেওয়া হয়। আপিল বিভাগে আবেদনটি দায়ের করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সভাপতি আল সাদী ভুইয়া এবং উর্দু বিভাগের শিক্ষার্থী আহনাফ সাঈদ খান। মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের এক রিটে জারি করা রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে গত ৫ জুন কোটা পুনর্বহাল করে বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ রায় দেন। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. মুনসুরুল হক চৌধুরী। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ সাইফুজ্জামান জামান। পরে রাষ্ট্রপক্ষ রায়টি স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করেন। আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত গত ৯ জুন আবেদনটি শুনানির জন্য ৪ জুলাই নিয়মিত বেঞ্চে পাঠান। গত ৪ জুলাই হাইকোর্টের রায় স্থগিত করা হয়নি। তবে রায়ের অনুলিপি পাওয়ার পর রাষ্ট্রপক্ষকে নিয়মিত লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করতে বলা হয়েছে। হাইকোর্টের রায় স্থগিতে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের ওপর ৪ জুলাই প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে আপিল বেঞ্চ ‘নট টু ডে’ (আজ শুনানি নয়) আদেশ দেন। রিট আবেদনকারী পক্ষের সময় আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ আদেশ দেন সর্বোচ্চ আদালত। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন। রিট আবেদনকারী পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট অন রেকর্ড মো. জহিরুল ইসলাম। নবম গ্রেড (পূর্বতন প্রথম শ্রেণি) ও ১০ম থেকে ১৩তম গ্রেডের (পূর্বতন দ্বিতীয় শ্রেণি) পদে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি বাতিল করে ২০১৮ সালে সরকার পরিপত্র জারি করে। ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর জারি করা এমন পরিপত্র চ্যালেঞ্জ করে ২০২১ সালে রিট দায়ের করেন অহিদুল ইসলামসহ সাত শিক্ষার্থী। একই বছরের ৭ ডিসেম্বর হাইকোর্ট রুল জারি করেন। ওই রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে চলতি বছরের ৫ জুন রায় দেন হাইকোর্ট। রায়ের পর জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. মুনসুরুল হক চৌধুরী জানান, পুরো কোটা বাতিল না করে কেবল নবম থেকে ১৩তম গ্রেডের কোটা বাতিল করা হয়েছিল। এটিকে অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট। এখন থেকে এসব গ্রেডে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় তাদের সন্তানদের নিয়োগে আর কোনো বাধা নেই। এরপর ওই রায় স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগে আবেদন করে। আপিল বিভাগে আবেদন করা হলেও কোটা সংস্কার আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বলছে, আদালতে আবেদন ব্যক্তি উদ্যোগে হয়েছে, আন্দোলনের সঙ্গে সম্পর্ক নেই। তাদের কোনো প্রতিনিধি আদালতে যাননি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদ এক বিবৃতিতে বলেন, আমরা সবাইকে নিশ্চিত করছি যে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে কোনো প্রতিনিধি আদালতে যাননি। আমাদের এক দফা দাবি দেশের নির্বাহী বিভাগের কাছে। সংসদে আইন পাস করে সরকারি চাকরির সব গ্রেডে সব ধরনের বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল করে শুধুমাত্র পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর কথা বিবেচনায় রেখে কোটাকে নূন্যতম পর্যায়ে নিয়ে আসতে হবে। এ দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আমরা আমাদের কর্মসূচি চালিয়ে যাব। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আরেক সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলছেন, আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে কোনো আইনি প্রক্রিয়া নেওয়া হয়নি। আমাদের দাবি সরকার ও নির্বাহী বিভাগের কাছে। যারা আদালতে গিয়েছেন, নিজ উদ্যোগে গিয়েছেন। এর সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কোনো সম্পর্ক নেই। সরকারি সব গ্রেডের চাকরিতে যৌক্তিক পর্যায়ে কোটা সংস্কারের দাবিতে কয়েক দিন ধরে কর্মসূচি পালন করছেন শিক্ষার্থীরা। সবশেষ গত সোমবার রাজধানীর শাহবাগ, বাংলামোটর, সায়েন্সল্যাব, মৎস্যভবন, পল্টন মোড়, গুলিস্তানসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান সাড়ে তিন ঘণ্টার বেশি সময় ধরে অবরুদ্ধ রাখেন আন্দোলনকারীরা। এদিন রাত সাড়ে ৮টায় শাহবাগ থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেছিলেন, গতকাল মঙ্গলবার সড়ক ব্লকেডের আওতামুক্ত থাকবে। বুধবার ৬৪ জেলায় কঠোর কর্মসূচির প্রস্তুতির জন্য গতকাল মঙ্গলবার সারা দেশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক এবং অনলাইনে-অফলাইনে গণসংযোগ করা হবে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button