ঢাবির সংঘর্ষে আহত ২৩৪ জন চিকিৎসা নিয়েছে ঢাকা মেডিকেলে
প্রবাহ রিপোর্ট : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় কোটা আন্দোলনকারী ও ছাত্রলীগের সংঘর্ষে ২৩৪ জন ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে ৮ জন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার সকালে এ তথ্য জানিয়েছেন হাসপাতাল পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল আসাদুজ্জামান। গত সোমবার দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস এলাকায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় বিভিন্ন সূত্র থেকে আহতদের তথ্য পাওয়া গেলেও একদিন পর গতকাল মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিকভাবে আহতদের পরিসংখ্যান জানালেন ঢামেকের পরিচালক। এদিকে আন্দোলনকারীদের একজন আইসিইউ-তে ভর্তি আছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এই তথ্য সঠিক নয় বলে জানান ঢামেকের উপপরিচালক (প্রশাসন) ডা. নুরুল ইসলাম। ১০১ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি নিউমার্কেট থানা ছাত্রলীগ সা. সম্পাদক সাজেদুল হাসান ফাহাদের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, সন্ধ্যা ৬টার দিকে খবর পেলাম আমাদের কিছু সহকর্মীকে শহীদুল্লাহ হলে আটকে রেখেছে। তখন আমরা হলের কাছে গেলে কোটাবিরোধীদের একজন কোমর থেকে পিস্তল বের করে আমার বাম পায়ের রানে গুলি করে। পরে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আমাকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। এখানেও আন্দোলনকারীরা আমার ওপর হামলা চালানোর চেষ্টা করে। ফাহাদকে দেখতে আসা নিউমার্কেট থানা ছাত্রলীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সাইদ হোসেন রোমান দাবি করেন, হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরও কোটা আন্দোলনকারীরা হামলা চালান ফাহাদের ওপর। গত সোমবার দুপুরে রাজু ভাস্কর্যের সামনে কোটা আন্দোলনকারীরা কোটা সংস্কার ও প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবিতে বিক্ষোভ করেন। পরে বেলা ৩টার দিকে তাদের বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল প্রদক্ষিণ করেন। এ সময় বিজয় ৭১ হল থেকে কোটা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের সংঘর্ষ শুরু হয়। সেখানে থেকে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পরে পুরো ক্যাম্পাসে। বিকাল ৪টার দিকে কোটা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের পিটিয়ে ক্যাম্পাস নিয়ন্ত্রণে নেয় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। এ সময় ঢাবি ছাত্রলীগের সঙ্গে মহানগর ও আশপাশের ওয়ার্ড-থানা ছাত্রলীগও যোগ দেয়। পরে দফায় দফায় রাত ৮টা পর্যন্ত চলে দুই পক্ষের লাঠিপেটা, ইট-পাটকেল ছোড়াছুড়ি ও মারধর। হাসপাতালে সূত্রে জানা যায়, আন্দোলনে আহত ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতা সাজেদুল হাসান ফাহাদ ছাড়া সবাই সাধারণ শিক্ষার্থী। তারা হলেন- ইয়াকুব, কাজী তাহসিন ফেরদৌস অমি, আমিনুর, শুভ, গিয়াস উদ্দিন, নাসির, মেহেদী, অপি, সিয়াম ও হাসিব। আহত ভর্তি রোগীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ইডেন কলেজ ও ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী। কোটা আন্দোলনে ছাত্রলীগের হামলায় মাথায় গুরুতর আঘাত পেয়ে ঢামেকের ২০০ নম্বর ওয়ার্ডের চিকিৎসাধীন অবজারভেশনে আছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী সিয়াম। গত সোমবার দুপুরে ভিসি চত্বরে হামলাকারীদের আঘাতে তার মাথায় গুরুতর আঘাত পান। তার স্বজনরা জানান, সিয়ামের অবস্থা ভালো না। তাকে আইসিইউতে নেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে। এর আগে ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের হামলায় কলেজের ইডেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট সভাপতি শাহিনুর সুমি (২৮) ঢামেকের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন ছিলেন। পরে তার অবস্থা একটু স্বাভাবিক হওয়ায় সন্ধ্যা ৭টার দিকে তাকে বাসায় নিয়ে যায় পরিবারের সদস্যরা। সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক রাফিকুজ্জামান ফরিদ বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনে রাজু ভাস্কর্যের সামনে ইডেন ছাত্রলীগের হামলায় গুরুতর আহত সুমির অবস্থা কিছুটা উন্নতি হওয়ায় নিরাপত্তার স্বার্থে তাকে অন্যত্র নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এছাড়াও ঢামেক হাসপাতালে সামনে কোটা আন্দোলনকারী ও ছাত্রলীগের সংঘর্ষের সময় নিউমার্কেট থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাজেদুল হাসান ফাহাদ গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে ১০৯ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন আছেন। গত সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে শহীদুল্লাহ হলের সামনে তিনি গুলিবিদ্ধ হন। ফাহাদ জানান, কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষের সময় শহীদুল্লাহ হলের সামনে বাম পায়ের উরুর পেছনের অংশে গুলি লাগে। পরে অস্ত্রোপচার করে গুলি বের করা হয়। গত সোমবার ঢামেক হাসপাতাল পুলিশ ফাড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক মো. বাচ্চু মিয়া জানিয়েছিলেন, ঢাবি এলাকায় সংঘর্ষে আহত হয়ে ঢামেক হাসপাতালে ২৯৭ জন চিকিৎসা নিয়েছেন। তাদের মধ্যে ১২ জন ভর্তি রয়েছেন।