রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের ক্ষতি ২২ কোটি টাকা
![](https://dailyprobaha.com.bd/wp-content/uploads/2023/11/post-fp.webp)
# কোটা সংস্কার আন্দোলন #
প্রবাহ রিপোর্ট : কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় সহিংসতায় ক্ষতি হয়েছে রেলওয়ের পাঁচটি ট্রেনের ৪০টি কোচের। তিনটি স্টেশন ভাঙচুরের পাশাপাশি রেলওয়ের সংকেত ব্যবস্থার যন্ত্রপাতি নষ্ট এবং রেললাইনের পাথরও সরিয়ে নিয়েছে হামলাকারীরা। অচিরেই অগ্রিম টিকিট কিনে রাখা যাত্রীদের ফেরত দিতে হবে বিক্রীত টিকিটের মূল্য। সব মিলিয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে অন্তত ২২ কোটি টাকা। রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের দপ্তরপ্রধানদের নিয়ে উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে এসব চিত্র উঠে এসেছে। কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে রেলওয়ের ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ এবং আর্থিক মূল্য নির্ধারণের জন্য গত ২১ জুলাই পাঁচ সদস্যের উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এ কমিটির প্রধান করা হয় রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান সংকেত ও টেলি যোগাযোগ প্রকৌশলী সুশীল কুমার হালদারকে। কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে তিন কর্মদিবস সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। নির্দেশনা অনুযায়ী, রেলওয়ে মহাপরিচালকের কাছে গত বুধবার এই তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে। কমিটির প্রধান প্রকৌশলী সুশীল কুমার হালদার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘কোটা সংস্কার আন্দোলনে সহিংস ঘটনায় একটি ট্রেনের তিনটি বগি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। আর পাঁচটি ট্রেনের ৪০টি কোচ ভাঙচুর করা হয়। তছনছ করা হয়েছে রেলওয়ের তিনটি স্টেশন। সংকেত ও যান্ত্রিক বিভাগে ভাঙচুরের পাশাপাশি রেললাইনের পাথরও সরিয়ে নিয়েছে দুষ্কৃতকারীরা। সব মিলিয়ে এই সহিংস ঘটনায় রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের ২১ কোটি ৭০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় রেলওয়ের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা জরুরি।’
যা আছে তদন্ত প্রতিবেদনে
বিভিন্ন সূত্র ও তদন্ত প্রতিবেদন জানাচ্ছে, কোটা সংস্কার আন্দোলন যখন সহিংস হয়ে ওঠে, তখন বাংলাদেশ রেলওয়ের পাঁচটি ট্রেনের ৪০টি কোচ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আগুনে কিশোরগঞ্জ এক্সপ্রেসের তিনটি বগি পুরোপুরি পুড়িয়ে দেওয়া হয় এবং একটি ভাঙচুর করা হয়। ভাঙচুর করা হয় চট্টলা এক্সপ্রেসের ১৩টি, পারাবত এক্সপ্রেসের আটটি, সোনার বাংলা এক্সপ্রেসের সাতটি, জামালপুর এক্সপ্রেসের ছয়টি ও কিশোরগঞ্জ এক্সপ্রেসের দুটি বগি। এই পাঁচ ট্রেনের বগি ভাঙচুর ও পোড়ানোর ফলে রেলওয়ের ৩ কোটি ২৬ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। বগি ছাড়াও কিশোরগঞ্জ এক্সপ্রেস, চট্টলা এক্সপ্রেস ও কর্ণফুলী কমিউটার ট্রেনের ইঞ্জিন ভাঙচুর করা হয়েছে। এতে রেলওয়ের সাড়ে ৪ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। তিনটি স্টেশন ভাঙচুরে ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করা হয়েছে ১ কোটি ৪ লাখ টাকা। এ ছাড়া বৈদ্যুতিক ব্যবস্থা পুড়ে যাওয়ায় ৫৫ লাখ টাকা এবং রেলওয়ের সংকেত ব্যবস্থার যন্ত্রপাতি নষ্ট হওয়ায় ৫৩ লাখ টাকার ক্ষতি নিরূপণ করা হয়েছে। এছাড়া ১৮ থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত সূচি অনুযায়ী বিভিন্ন গন্তব্যে ট্রেন চলাচল করতে না পারায় হাজারো যাত্রীর অগ্রিম কেনা টিকিটের টাকা ফেরত দিতে হচ্ছে। যার পরিমাণ ১৬ কোটি ২৮ লাখ টাকা। তবে যাত্রীদের এসব টিকিটের টাকা ইন্টারনেট পুরোপুরি সচল না হওয়া পর্যন্ত ফেরত দেওয়া সম্ভব হবে না বলে জানিয়েছেন রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় ব্যবস্থাপক (চট্টগ্রাম) মো. সাইফুল ইসলাম। তদন্ত প্রতিবেদন প্রসঙ্গে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক মো. নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘উচ্চপর্যায়ের তদন্ত প্রতিবেদন ইতোমধ্যে রেলওয়ে মহাপরিচালকের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। রেলওয়ের অনেক সম্পদ নষ্ট করে দিয়েছে। যেই রেলযাত্রীদের সেবায় নিয়োজিত, সেই রেলকে এভাবে পুড়িয়ে দেওয়া, ভাঙচুর করা- কোনোভাবেই কাম্য নয়।’ প্রসঙ্গত, কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় উদ্ভূত পরিস্থিতিতে গত ১৮ জুলাই দুপুরের পর থেকে ঢাকার সঙ্গে সারা দেশের ট্রেন যোগাযোগ বন্ধ করে বাংলাদেশ রেলওয়ে, যা এখনও চালু হয়নি। তবে ঢাকা থেকে স্বল্প দূরত্বের দুয়েকটি ট্রেন সাময়িকভাবে চলাচল করছে।