জাতীয় সংবাদ

বাসায় ফেরার পথে গুলিবিদ্ধ, চিকিৎসা পেতে ছোটাছুটি

কোটা আন্দোলনে সহিংসতা

প্রবাহ রিপোর্ট : ‘কাজ থেকে ফেরার পথে দেখি মূল রাস্তা থেকে কিছু দূরে অনেক পুলিশ। মূল সড়কে তখন অনেক মানুষ। ঝামেলা চলছিল। আমরা অনেকে মূল সড়ক ধরে হেঁটে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ গুলির শব্দ শুনি। সবাই ছোটাছুটি শুরু করে। আমি পালাতে গিয়ে নিচে পড়ে যাই। পরে সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেল নিয়ে যাওয়া হয়। সেই রাতেই পঙ্গু হাসপাতাল ভর্তি করা হয়।’ এভাবে নিজের গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনার বর্ণনা দিচ্ছিলেন নোয়াখালীর যুবক ফরিদ আহমেদ। গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর ঢাকায় দুই হাসপাতাল ঘুরলেও শয্যা না মেলায় চিকিৎসা পেতে ঢাকা থেকে নোয়াখালী ঘুরে চট্টগ্রাম আসতে হয়েছে তাকে। অবশেষে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের অর্থোপেডিক ওয়ার্ডের মেঝেতে ঠাঁই হয়েছে তার। গত শনিবার চমেকের ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের মেঝের ওই শয্যায় শুয়ে সেসব কথা বলছিলেন ফরিদ আহমেদ। সরেজমিনে দেখা যায়, দুটি শয্যার মাঝখানে মেঝেতে পাতা একটি শয্যায় শুয়ে আছেন ফরিদ। তার ডান পায়ের গোড়ালির কিছুটা ওপরে ব্যান্ডেজ করা। ওই অংশ গুলিবিদ্ধ হয়েছে। ফরিদের বাড়ি নোয়াখালীর সেনবাগে। দুই সন্তানের জনক ফরিদ পেশায় ইলেকট্রিক মিস্ত্রি। তিনি গুলিবিদ্ধ হন ঢাকার মহাখালী এলাকায়। ফরিদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, তার বড় ভাই রিয়াদ মাহমুদ তুহিন নির্মাণ খাতের একজন ঠিকাদার। গুলশান ১ নম্বর এলাকার একটি ভবনে তুহিনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অধীনে কাজ করতে ১৫ জুলাই তিনি ঢাকা গিয়েছিলেন। মহাখালীতে তুহিনের বাসায় থাকতেন। ১৯ জুলাই বিকালে ওই ভবনে কাজ করে বাসায় ফেরার পথে মূল সড়কে হঠাৎ গুলিবিদ্ধ হন। চট্টগ্রাম আসার কারণ জানতে চাইলে ফরিদ বলেন, ‘পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি রাখতে চায়নি। তারা বাসায় থেকে দুই দিন পর পর গিয়ে দেখিয়ে আসতে বলেছে। আমার তো সেখানে বাসা নেই। আরেকজনের বাসায় কে দেখবে। আমি চিকিৎসা শেষ করতে চেয়েছি। তাই গাড়ি নিয়ে নোয়াখালী চলে যাই। সেখানে অপারেশন করাতে চাইলেও কোনো বেসরকারি হাসপাতাল ভর্তি নেয়নি। পরে আবার নোয়াখালী থেকে চট্টগ্রাম আসি। শুধু গাড়ি ভাড়া গেছে ২০ হাজার। শুক্রবার অপারেশন হয়েছে।’ গাড়ি ভাড়া বাদেও চিকিৎসার প্রয়োজনে আরও ২০ হাজার টাকার মতো খরচ হয়েছে তাদের। গ্রামের আত্মীয়স্বজন থেকে ধার-দেনা করে চিকিৎসার খরচ চালাচ্ছেন তিনি। সামনের দিনগুলো নিয়ে গভীর চিন্তা তার। বলেন, ‘এখন বাড়িতে পাড়া-প্রতিবেশী চাল কিনে দিচ্ছে। সুস্থ হয়ে এসব ধার-দেনা শোধ করতে হবে। কীভাবে কী করব বুঝতে পারছি না।’ চট্টগ্রাম মেডিকেলে সংঘর্ষে আহত ১০ জন রোগী ভর্তি আছে। তাদের মধ্যে পাঁচজনই অর্থোপেডিক ওয়ার্ডে, চারজন আছে ক্যাজুয়াল্টি ওয়ার্ডে, ২০ নম্বর চক্ষু ওয়ার্ডে আছে একজন। চক্ষু ওয়ার্ডে থাকা সর্বশেষ রোগীটির নাম আমিনুল ইসলাম। তিনি কক্সবাজার থেকে এসেছেন। ১৯ জুলাই কক্সবাজার সদরে সংঘর্ষের সময় রাবার বুলেটে ডান চোখের কর্নিয়াতে আঘাতপ্রাপ্ত হওয়া আমিনুল গত শনিবার হাসপাতাল ছাড়েন।’ ওয়ার্ডে কর্তব্যরত নার্সদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কোটা সংস্কার আন্দোলনে আহতদের মধ্যে মোট ১২ জন এই ওয়ার্ডে ভর্তি হয়েছে। তাদের মধ্যে তিনজন পালিয়ে গেছে। বাকিরা চিকিৎসা শেষ করে গেছে। কারও আঘাত খুব গুরুতর ছিল না বলে জানান তারা। একই অবস্থা পাশের নাক-কান-গলা ওয়ার্ডে। ওই ওয়ার্ডে ১৬ ও ১৮ জুলাই মোট ১০ জন রোগী ভর্তি হয়েছে। তাদের সবাই চিকিৎসা শেষ করে বাসায় ফিরেছে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button