গাজীপুরে শিক্ষার্থীদের গণমিছিল থেকে পুলিশের গাড়ি ও বক্সে অগ্নিসংযোগ

প্রবাহ রিপোর্ট : দেশব্যাপী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা, গণহত্যার প্রতিবাদে এবং ৯ দফা বাস্তবায়নের দাবিতে গাজীপুরের শ্রীপুরের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা সকাল থেকে মাওনা চৌরাস্তা এলাকায় বিক্ষোভ করেন। বেলা সাড়ে ১১টা থেকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের শ্রীপুর উপজেলার গড়গড়িয়া মাস্টারবাড়ী থেকে জৈনা বাজার পর্যন্ত মহাসড়কে সকল ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। শনিবার বেলা সোয়া ১১টা থেকে শিক্ষার্থীরা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পল্লীবিদ্যুৎ মোড়ে অবস্থান নিতে থাকেন। দুপুরে আন্দোলনকারীরা পুনরায় জড়ো হয়ে মাওনা চৌরাস্তা উড়ালসেতুর দিকে আসতে থাকে। তারা শ্রীপুর সড়কের ভাই ভাই সিটির নিচে রাখা পুলিশের তিনটি গাড়িতে হামলা করে। একপর্যায়ে পুলিশের সব কটি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয় এবং উড়ালসেতুর নিচে হাইওয়ে পুলিশের দুটি বক্সে আগুন লাগিয়ে দেয়। এ সময় পুলিশ রাবার বুলেট ও টিয়ারশেল ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। সংঘর্ষে ইটপাটকেল ও দৌড় দিতে গিয়ে আনুমানিক ১৫ জন আহত হন। স্থানীয়রা জানান, শ্রীপুর মুক্তিযোদ্ধা রহমত আলী সরকারি কলেজ, আব্দুল আওয়াল ডিগ্রি কলেজ, মাওনা পিয়ার আলী ডিগ্রি কলেজসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের হাজার হাজার শিক্ষার্থী বেলা সাড়ে ১১টায় লাঠি হাতে মাওনা উড়ালসেতুর নিচ দিয়ে প্রদক্ষিণ করেন। এ সময় শ্রীপুর উপজেলা ও পৌর আওয়ামী লীগ এবং গাজীপুর জেলা যুবলীগের নেতাকর্মীরা উড়ালসেতুর নিচে শান্তিপূর্ণ অবস্থান নেয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে হাজার হাজার শিক্ষার্থীরা আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীদের দেখে ‘ভুয়া ভুয়া’ বলে স্লোগান দিতে থাকেন। ‘আমার ভাই মরলো কেন জবাব চাই, জবাব চাই’ বলে স্লোগান দেয়। এ সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা কোনও ধরনের বিশৃঙ্খলা এড়াতে মহাসড়কের উভয় পাশে সতর্ক অবস্থান নেয়। আন্দোলনকারীরা উড়ালসেতু প্রদক্ষিণ করে পুনরায় পল্লীবিদ্যুৎ মোড়ে গিয়ে মিছিল শেষ করেন। এ সময় পুলিশের ব্যাপক উপস্থিতি থাকলেও আন্দোলনকারীদের মিছিলে বাধা দিতে দেখা যায়নি। আন্দোলনকারীরা তাদের স্লোগানে নিহত ছাত্রদের হত্যাকারীদেরও বিচার দাবি করেন। তারা আরও জানান, মিছিলে থাকা শিক্ষার্থীদের লাঠিসোঁটা নিয়ে আসতে দেখে পুলিশ শ্রীপুর সড়কে অবস্থান নেয়। এর ফাঁকে উড়ালসেতুর নিচে রাখা হাইওয়ে পুলিশের দুটি বক্সে আগুন দেয়। তারা হামলা করে পুলিশ বক্সের জানালার গ্লাস ভাঙচুর করে। গাজীপুর জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী ও শ্রীপুর উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি জাহিদুল আলম রবিন জানান, শ্রীপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা সাবেক ভিপি আহসান উল্লাহ, শ্রীপুর পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি রফিকুল ইসলাম ম-ল এবং সাধারণ সম্পাদক সাবেক জিএস শেখ নজরুল ইসলাম, শ্রীপুর পৌর যুবলীগের সভাপতি হাসানুল ইসলাম আকন্দের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ও গাজীপুর জেলা যুবলীগের নেতাকর্মীরা উড়ালসেতুর নিচে শান্তিপূর্ণ অবস্থান নেয়। এ সময় আন্দোলনকারীরা তাদের মিছিল নিয়ে চলে যায়। পরে দুপুরের দিকে তারা আবার লাঠিসোঁটা নিয়ে উড়ালসেতুর দিকে আসতে থাকে। একপর্যায়ে তারা ভাঙচুর শুরু করে। শ্রীপুর থানার ওসি আকবর আলী খান বলেন, আমরা নিরস্ত্র হাতে শান্তিপূর্ণভাবে শ্রীপুর সড়কের ভাই ভাই সিটিতে অবস্থান করছিলাম। আন্দোলকারীরা হঠাৎ করে নিরস্ত্র পুলিশের ওপর হামলা করে। একপর্যায়ে তারা ভাই ভাই সিটির নিচে রাখা পুলিশের তিনটি গাড়িতে ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগ করে। পরে তারা উড়ালসেতুর নিচে হাইওয়ে পুলিশের দুটি বক্সেও আগুন দেয়।