সাগর-রুনি হত্যা মামলায় রাষ্ট্রপক্ষকে সহায়তার অনুমতি পেলেন ৯ আইনজীবী

প্রবাহ রিপোর্ট : সাংবাদিক দম্পতি সাগর সারোয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলায় বাদীর ব্যক্তিগত খরচে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শিশির মনিরসহ ৯ আইনজীবীকে মামলা পরিচালনার আনুমতি দিয়েছেন আদালত। আইনজীবীদের মামলায় নথিভুক্ত করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার মামলার বাদী রুনির ভাই নওশের আলী রোমানের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুবুল হকের আদালত এ আদেশ দেন। এর আগে গত সোমবার একই আদালতে এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষকে সহযোগিতার জন্য ৯ আইনজীবীকে নিয়োগের আবেদন করেন বাদী। শুনানি শেষে আদালত বাদীর উপস্থিতিতে এ বিষয় শুনানির জন্য গতকাল মঙ্গলবার দিন ধার্য করেছিলেন। শিশির মনির ছাড়া অন্য আইনজীবীরা হলেন- অ্যাডভোকেট মুজাহিদুল ইসলাম, মিজানুল হক, মোস্তফা জামাল, আবু রাসেল, মহিউদ্দিন, আব্দুল্লাহ আল ফারুক, ইকবাল হোসেন ও মোত্তাকিন হোসাইন। আবেদনে বলা হয়, মামলার ভুক্তভোগী সাগর সরোয়ার ও মেহেরুন রুনিকে অজ্ঞাত আসামিরা ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি নিজ বাসায় হত্যা করে। দীর্ঘ ১২ বছর মামলাটির তদন্ত চলমান থাকলেও কোনো তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়নি। আবেদনে আরও বলা হয়, দীর্ঘ দিন পার হওয়ার পরও মামলায় কোনো ধরনের অগ্রগতি নেই। মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তির ও ন্যায় বিচারের স্বার্থে রাষ্ট্র পক্ষের পাবলিক প্রসিকিউটরকে সহায়তার জন্য বাদী পক্ষে নিজ খরচে আইনজীবী নিয়োগ করা আবশ্যক। সাংবাদিক মেহেরুন রুনির ভাই নওশের রোমান বলেছেন, আমরা বর্তমান সরকারের কর্মকা-ে আশাবাদী। র্যাবের হাত থেকে মামলাটি পিবিআইতে পাঠানোয় মামলাটির সুরাহা হবে বলে আশা করছি। সরকার আন্তরিক হলে সাগর-রুনি হত্যার বিচার সম্ভব। গতকাল মঙ্গলবার ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সাগর-রুনি হত্যা মামলায় নিজ খরচে ৯ জন আইনজীবীকে নিয়োগের জন্য এসে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন। নওশের রোমান বলেন, গত সাড়ে ১২ বছর আমরা হয়রানিতে ছিলাম। এ মামলা নিয়ে মিডিয়াতে অনেক আজগুবি কথা ছড়ানো হয়েছে। মৃত্যুর পরও তাদের বিরুদ্ধে কুৎসা রটানো বন্ধ হয়নি। মিথ্যা সংবাদ ছড়িয়ে আমাদের হয়রানি করা হয়েছে। তদন্তের নামেও হয়রানি করা হয়। মামলার বাদী রুনির ভাই নওশের আলী রোমানের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে রাষ্ট্রপক্ষকে সহযোগিতার জন্য ৯ আইনজীবীকে নিয়োগের আনুমতি দেন আদালত। আলোচিত এ হত্যা মামলায় রুনির বন্ধু তানভীর রহমানসহ মোট আসামি আট জন। অন্য আসামিরা হলেন- বাড়ির নিরাপত্তারক্ষী এনাম আহমেদ ওরফে হুমায়ুন কবির, রফিকুল ইসলাম, বকুল মিয়া, মিন্টু ওরফে বারগিরা মিন্টু ওরফে মাসুম মিন্টু, কামরুল হাসান অরুণ, পলাশ রুদ্র পাল ও আবু সাঈদ। আসামিদের প্রত্যেককে একাধিকবার রিমান্ডে নেওয়া হলেও তাদের কেউই স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেননি।২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাতে ঢাকার পশ্চিম রাজাবাজারে মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সারোয়ার ও এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেরুন রুনি নিজেদের ভাড়া বাসায় খুন হন। পরদিন ভোরে তাদের ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করা হয়। এরপর নিহত রুনির ভাই নওশের আলম রোমান রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। প্রথমে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন ওই থানার এক এসআই। চার দিন পর তদন্তভার ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কাছে হস্তান্তর করা হয়। দুই মাসেরও বেশি সময় তদন্ত করে রহস্য উদঘাটনে ব্যর্থ হয় ডিবি। পরে হাইকোর্টের নির্দেশে একই বছরের ১৮ এপ্রিল হত্যা মামলাটির তদন্তভার র্যাবের কাছে হস্তান্তর করা হয়। সেই থেকে দীর্ঘ সময় পেরিয়ে মোট ১১১ বারের মতো মামলার তদন্ত প্রতিবেদন পিছিয়েছে। এর মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে পারেনি সংস্থাটি। গত সোমবার সাগর সারওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলার তদন্তের দায়িত্ব থেকে র্যাবকে বাদ দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন টাস্কফোর্স গঠন করে এ তদন্ত কাজ সম্পন্ন করতে ছয় মাস বেঁধে দিয়েছেন হাইকোর্ট।