জাতীয় সংবাদ

জনপ্রতিনিধি ছাড়া কেমন চলছে ডিএনসিসির কার্যক্রম?

প্রবাহ রিপোর্ট : অন্যান্য সিটি করপোরেশনের মতো ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনেও (ডিএনসিসি) এখন নেই কোনো জনপ্রতিনিধি। সিটি করপোরেশনের স্বাভাবিক কার্যক্রম চলমান রাখতে কাজ করছেন সরকারের নিয়োগ করা প্রশাসক। এ ছাড়া কাউন্সিলর অফিস থেকে নাগরিক সেবার কার্যক্রম সরিয়ে নিয়ে আসা হয়েছে আঞ্চলিক অফিসগুলোতে। এই রদবদলে অনেকটাই স্থবির হয়ে পড়েছে বিভিন্ন নাগরিক সেবা। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের ১৪ দিন পর, গত ১৯ আগস্ট ঢাকার দুটিসহ দেশের অন্যান্য সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার মেয়রকে অপসারণ করা হয়। সিটি করপোরেশনের স্বাভাবিক কার্যক্রম চলমান রাখতে একই দিন মেয়রের স্থলাভিষিক্ত হন স্থানীয় সরকার নিযুক্ত প্রশাসকরা। ২০ আগস্ট থেকে দ্বায়িত্ব নেন তারা। পরবর্তীতে ২৬ সেপ্টেম্বর ঢাকার সব ওয়ার্ড কাউন্সিলদেরও তাদের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। দ্বায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথম সংবাদ সম্মেলনে ডিএনসিসি’র সব সেবা নিরবচ্ছিন্নভাবে অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেন প্রশাসক মো. মাহমুদুল হাসান। বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয় মশক নিধন, খাল উদ্ধার, জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনসহ অন্যান্য সব নৈমিত্তিক সেবাগুলো অব্যাহত রাখার ওপর। চলমান উন্নয়ন প্রকল্পগুলো নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেষ করার আশ্বাসও দেন তিনি।
যেসব কাজে উদ্যোগী ডিএনসিসি
নতুন প্রশাসকের নেতৃত্বে ডিএনসিসিভুক্ত এলাকায় মশকনিধনে সপ্তাহব্যাপী বিশেষ অভিযান শুরু হয়। এই কার্যক্রম তদারকিতে বিভিন্ন কর্মকর্তাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এতে অনেকটাই সফল বলে দাবি ডিএনসিসি কর্তৃপক্ষের। ডিএনসিসি থেকে জানানো হয়, গত ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে ২৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলা সপ্তাহব্যাপী বিশেষ মশক নিধন কার্যক্রমে ১ লাখ ২১ হাজার ৮৮৬টি বাড়ি পরিদর্শন করে ৮ হাজার ৮৭৫টি মশার প্রজননস্থল ধ্বংস করা হয়েছে। লার্ভা পাওয়ায় নোটিশ দেওয়া হয়েছে ২৪০টি স্থানে। এছাড়া মাঠ পর্যায়ে মশকনিধন কাজ তদারকির জন্য ডিএনসিসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে প্রতিটি অঞ্চলের জন্য একটি করে মনিটরিং টিম গঠন করা হয়। ডিএনসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করেন। স্থানীয় সরকার বিভাগ, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা দুই সপ্তাহ ধরে মাঠ পর্যায়ে তদারকি করেন। কাউন্সিলরদের অপসারণ করার প্রায় দুই সপ্তাহ পর জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনসহ অন্যান্য সব নৈমিত্তিক সেবাও চালুর চেষ্টা করা হয়। গত ৯ অক্টোবর থেকে ডিএনসিসির সব ওয়ার্ডে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের মাধ্যমে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু হয়। এদিকে ডিএনসিসির সাবেক মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম চলতি বছরের শুরুতে আওতাধীন খালগুলো উদ্ধারকে প্রাধান্য দেওয়া হবে বলে জানিয়েছিলেন। খালের সীমানা নির্ধারণ, খাল পাড়ের খাস জমি খালের সীমানায় অন্তর্ভুক্ত করা, খালের পাড় বাঁধাই করা, খাল পাড়ে ওয়াকওয়ে, সাইকেল লেন নির্মাণ এবং গাছ লাগানোসহ নানা পরিকল্পনার কথা জানান তিনি। তবে নতুন প্রশাসক এখন পর্যন্ত খাল উদ্ধারে কোনো তৎপরতা শুরু করতে পারেননি। আপাতত খাল পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ চলমান রয়েছে বলে জানিয়েছে ডিএনসিসি কর্তৃপক্ষ। গত ৫ আগস্টের পর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কিছুটা থমকে গেলেও তা স্বাভাবিক করে নিয়ে আসা হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে।
থমকে গেছে উন্নয়নকাজ
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের চলমান অধিকাংশ উন্নয়ন কার্যক্রম থেমে আছে। দলীয় ভিত্তিতে কাজ পাওয়া বিভিন্ন ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান প্রকল্প সম্পন্ন না করেই আত্মগোপনে চলে গেছে। ফলে এসব প্রকল্প শেষ করতে পুনরায় নতুন ঠিকাদারদের কাজ দেওয়া হচ্ছে। ডিএনসিসি থেকে জানানো হয়, অধিকাংশই কাজ ৭০ থেকে ৯০ শতাংশ সম্পন্ন আছে। চলমান উন্নয়ন প্রকল্পগুলো মাঝে দুই মাস দেশের অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে থেমে ছিল। এখন কাজ শেষ করতে নতুন ঠিকাদারদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তারা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছে।
নাগরিকরা যা বলছেন
ডিএনসিসি’র নাগরিক সেবা কেমন চলছে জানতে কথা হয় বিভিন্ন ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের সঙ্গে। তারা বলেন, মশক নিধন কার্যক্রম দৃশ্যমান। উন্নয়ন কার্যক্রম বেশ কিছুদিন থেমে থাকার পর আবারও চালু হয়েছে। তবে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে নাগরিক সনদ নিয়ে। মিরপুর-২ বড়বাগের বাসিন্দা মো. মুয়াজ বলেন, আমাদের এলাকার রাস্তার কাজের একাংশ ৫ আগস্টের আগে শেষ হয়েছে। কিন্তু আরেক অংশের কাজ বাকি। ফলে চলাফেরায় ভোগান্তি হচ্ছে। সম্প্রতি আবারও কাজ শুরু হয়েছে। বনানীর বাসিন্দা রবিউল আলম বলেন, বাবার মৃত্যুর সনদ নিয়ে সমস্যায় আছি। গত শুক্রবার নিউজে দেখলাম আবারও সনদ দেওয়ার কাজ চালু হয়েছে। এদিকে ভোগান্তিতে আছেন রাজধানীর দক্ষিণখানের বাসিন্দারা। সেখানের প্রধান সড়কটি দীর্ঘদিন ধরে বড় করার কাজ চলছে। সাবেক মেয়র নভেম্বরে এই সড়কের কাজ শেষ করার ঘোষণা দিলেও বর্তমানে নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ হওয়া নিয়ে শঙ্কায় স্থানীয় বাসিন্দারা। দক্ষিণখানের নদ্দা পাড়ার বাসিন্দা শাহারিয়া বলেন, উত্তরখান-দক্ষিণখানের রাস্তার অবস্থা খুবই খারাপ। অ্যাম্বুলেন্স যাওয়ার অবস্থাও নাই যে একজন রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যাবো। পায়ে হেঁটে যাওয়াও মুশকিল। রাস্তা চওড়া ও ড্রেনের কাজের জন্য দীর্ঘদিন এই এলাকার কাজ চলছে। কিন্তু সেই কাজের কোনো অগ্রগতি নাই। আন্দোলনের আগেও কাজ ধীরগতিতে চলছিল। আন্দোলনের পর তো কাজ থেমে আছে। বলে ঠিকাদার নাকি পালায়া গেছে।
যা বলছেন কর্মকর্তারা
কেমন চলছে সিটি করপোরেশনের কার্যক্রম- জানতে চাইলে ডিএনসিসির একাধিক কর্মকর্তা বলেন, জনপ্রতিনিধিদের জবাবদিহির জায়গা থাকে। জনগণের কল্যাণের কথা চিন্তা করতে হয়। আর আমাদের দ্বায়িত্ব থাকে কাজ সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়ন করা। সেক্ষেত্রে আমাদেরও জবাবদিহি থাকে মেয়র ও জনগণের কাছে। তবে বাস্তবতা হলো, অনেক সহজ কাজও বিভিন্ন জনপ্রতিনিধির কারণে জটিল হয়ে উঠে। এখন যেমন অনেক বিষয়ই মানুষ আমাদের আঞ্চলিক অফিসের কর্মকর্তাদের কাছে নির্ভয়ে জানতে চান, কাজ করে দিতে বলেন। আমরাও সেই কাজগুলো দ্বায়িত্ব নিয়ে করে দেই। কাজ করতে সমস্যা হচ্ছে না। ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মীর খায়রুল আলমবলেন, আমাদের কাজে কোনো বাধা হচ্ছে না। চলমান কাজগুলো যে যার দ্বায়িত্ব অনুযায়ী করছেন। উন্নয়ন কাজগুলো বৃষ্টির কারণে কিছুটা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তাছাড়া কিছু ঠিকাদার কাজ অসম্পন্ন রেখে চলে গিয়েছিল। সেই কাজ গুলো পুনরায় চালু রাখার ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। প্রশাসক স্যার প্রতিনিয়তই কাজের তদারকি করছেন। বিভিন্ন বিষয়ে উদ্যোগী হয়েছেন। আশা করি নাগরিকরা ডিএনসিসি থেকে তাদের সঠিক সেবা পেতে কোনো ভোগান্তির পোহাবেন না।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button