ভারতে গেল অনুমোদনের ২২ শতাংশ ইলিশ
প্রবাহ রিপোর্ট : মেয়াদ শেষ ও প্রজনন মৌসুম শুরু হওয়ায় ভারতে ইলিশ রপ্তানি বন্ধ হয়ে গেল। তবে সময় স্বল্পতা, ইলিশ সংকট ও অস্বাভাবিকভাবে মূল্য বৃদ্ধিতে এবার অনুমোদনের ২২ শতাংশ ইলিশ পাঠাতে পেরেছেন রপ্তানিকারকরা। এবার ২৬ সেপ্টেম্বর থেকে ১২ অক্টোবর রাত ৮টা পর্যন্ত অনুমোদন পাওয়া ২ হাজার ৪৫০ টনের বিপরীতে মাত্র ৫৩৩ টন ইলিশ ভারতে গেছে বলে জানিয়েছেন বেনাপোল বন্দরের মৎস্য কোয়ারেন্টাইন কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান। এসব মাছের রপ্তানি মূল্য ৫৩ লাখ ৩০ হাজার মার্কিন ডলার। এছাড়া রপ্তানির অনুমোদন পাওয়া ৪৯টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২৯টি প্রতিষ্ঠান কোনো ইলিশ রপ্তানিই করতে পারেনি বলে জানিয়েছেন বেনাপোল স্থলবন্দরের উপ-পরিচালক (ট্রাফিক) রাশেদুল সজীব নাজির। রপ্তানিকারকরা বলছেন, ইলিশ চেয়ে ভারতীয় ব্যবসায়ীদের অনুরোধ আর বাংলাদেশ সরকারের দেওয়া অনুমতির মেয়াদের মধ্যে সময় স্বল্পতার কারণে পুরো ইলিশ রপ্তানি করা যাচ্ছে না। দুর্গাপূজা শুরুর পর ভারতীয় অংশে আমদানি বন্ধ এবং রপ্তানির জন্য হাতেগোনা মাত্র কয়েকটা দিন থাকায় ইলিশ রপ্তানিতে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এ বছরই কেবল নয়, বিগত পাঁচ বছরেও রপ্তানির অনুমতি পাওয়া পুরো ইলিশ ভারতে পাঠানো যায়নি বলে জানান ব্যবসায়ীরা। ইলিশ রপ্তানিকারক বেনাপোলের সততা ফিসের ম্যানেজার রকি মাহামুদ বলেন, “সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবার বেনাপোল থেকে সড়ক পথে ভারতে সব ধরনের পণ্য রপ্তানি বন্ধ থাকে। তবে গত শনিবার খোলা থাকে। অন্যদিকে গতকাল রোববার আবার আমদানি বন্ধ রাখে ভারত। “সপ্তাহের এই দু’দিন বাদ দিলে ২৬ অক্টোবর থেকে ১২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মাত্র ১২দিন ভারতে ইলিশ পাঠানোর সুযোগ পেয়েছে ব্যবসায়ীরা।” বেনাপোল স্থলবন্দরের উপ-পরিচালক (ট্রাফিক) রাশেদুল সজীব নাজির বলেন, ভারতের ব্যবসায়ীদের অনুরোধেই এবার ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দেয় বাংলাদেশ সরকার। ২১ সেপ্টেম্বর অন্তবর্তীকালীন সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এক প্রজ্ঞাপনে প্রথমে তিন হাজার টন ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দেয়। পরে সেখান থেকে সরে এসে ২৫ সেপ্টেম্বর শেষ পর্যন্ত দুই হাজার ৪২০ টন ইলিশ রপ্তানির অনুমতির ছাড়পত্র দেয় মন্ত্রণালয়। তিনি বলেন, অনুমোদন পাওয়া বেশির ভাগ ইলিশ বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে রপ্তানি হয়। দুর্গোৎসবের কারণে ওপাশে বন্দর বন্ধ থাকলেও বিশেষ ব্যবস্থায় ইলিশ রপ্তানি চালু ছিল। এ বছর রপ্তানির শেষ দিন গত শনিবার রাত ৮টা পর্যন্ত ৫৩৩ টন ইলিশ গেছে ভারতে। তিনি আরও জানান, পদ্মার ইলিশ পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিদের কাছে প্রিয় হওয়ায় ২০১২ সালের আগে ভারতে ইলিশ রপ্তানি করা হত। তবে দেশের চাহিদা বিবেচনায় ও ইলিশের উৎপাদন কমে যাওয়ায় ২০১২ সালের পর ইলিশ রপ্তানি বন্ধ করে দেয় সরকার। তবে রপ্তানি বন্ধ থাকলেও দুর্গোৎসবে ভারতের বাঙালিদের এই মাছের স্বাদ দিতে বিশেষ বিবেচনায় কয়েক বছর ধরে ইলিশ রপ্তানির অনুমোদনের দেওয়া হচ্ছিল। এর মধ্যে গত বছর ২০২৩ সালে ৭৯ প্রতিষ্ঠানকে ৩ হাজার ৫০০ টন ইলিশ রপ্তানির অনুমোদন দেওয়া হলেও বেনাপোল দিয়ে রপ্তানি হয়েছিল মাত্র ৬৩১ দশমিক ২৪ টন। এর আগে ২০২২ সালে ৫৯ প্রতিষ্ঠানকে ২ হাজার ৯০০ টন ইলিশ রপ্তানির অনুমোদন দিলেও রপ্তানি হয়েছিল মাত্র ১ হাজার ৩০০ টন। ২০২১ সালে ১১৫ প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া ৪ হাজার ৬০০ টন অনুমোদনের বিপরীতে রপ্তানি হয়েছিল ১ হাজার ৬৯৯ টন। করোনা মহামারীর মধ্যে ২০২০ সালে দুর্গাপূজা উপলক্ষে এক হাজার ৪৫০ টন অনুমতি দিলেও তার সব পাঠাতে পারেনি ব্যবসায়ীরা। এবং ২০১৯ সালে ৫০০ টন ইলিশ রপ্তানির অনুমোদন দিয়েছিল সরকার, তবে রপ্তানি হয়েছিল ৪৭৬ মেট্রিক টন ইলিশ।