এইচএসসির ফল প্রকাশ আজ
প্রবাহ রিপোর্ট : এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল আজ মঙ্গলবার প্রকাশ করা হবে। আজ বেলা ১১টায় সব বোর্ডের ওয়েবসাইটে একযোগে পৃথকভাবে ফল প্রকাশিত হবে। শিক্ষার্থীরা ওয়েবসাইটে ঢুকে রোল ও রেজিস্ট্রেশন নম্বর দিয়ে ফল দেখতে পারবেন। পাশাপাশি মোবাইল ফোনে এসএমএসের মাধ্যমেও ফল জানা যাবে। তাছাড়া নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও ফলাফল টাঙিয়ে দেওয়া হবে। এদিকে, এবার সম্পূর্ণ ভিন্ন আঙ্গিকে এইচএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করতে যাচ্ছে শিক্ষা বোর্ডগুলো। যেখানে থাকছে না কোনো আনুষ্ঠানিকতা। সরকারপ্রধান বা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টাও ফলাফল প্রকাশের কোনো অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন না। সব প্রথা বা রীতি ভেঙে স্ব স্ব বোর্ড চেয়ারম্যানরা ফল ঘোষণা করবেন। আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি ও ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার বলেন, ‘এবার আগের সিস্টেমে ফল প্রকাশ হবে না। সম্পূর্ণ ভিন্নভাবে ফল প্রকাশ করা হবে। সরকারের কোনো ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ফল প্রকাশের অনুষ্ঠান করবেন না। আমরাও কোনো কথা বলবো না।’ তিনি বলেন, ‘ঠিক বেলা ১১টায় সব বোর্ডের ওয়েবসাইটে ফল প্রকাশ করা হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গেলেও শিক্ষার্থীরা ফল পাবেন। আর ১১টি বোর্ডের সমন্বিত যে ফল, তার সংক্ষিপ্তসার ঢাকা বোর্ড থেকে দেওয়া হবে। কোনো সংবাদ সম্মেলন বা ব্রিফিং করবো না আমরা। শুধু ফলাফলের সারসংক্ষেপটা আমরা সাংবাদিকদের দিয়ে দেবো।’ বিগত বছরগুলোতে সব শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর কাছে ফলাফলের সারসংক্ষেপ তুলে দিতেন। সেখান থেকে প্রধানমন্ত্রী ফল প্রকাশের ঘোষণা দিতেন। এরপর শিক্ষামন্ত্রী আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট অথবা সচিবালয় থেকে এইচএসসির ফলাফল বিস্তারিতভাবে গণমাধ্যমের সামনে তুলে ধরতেন। এ প্রক্রিয়া একরকম রীতি হয়ে উঠেছিল। এতে অনেক সময় ফল প্রকাশে দেরি হতো। এবার সেই ধারায় পরিবর্তন আনছে অন্তর্বর্তী সরকার।
সাবজেক্ট ম্যাপিং হলেও ফেল অনেক
এবার কোনো বিভাগের শিক্ষার্থীদের পাঁচটি, কারও ছয়টি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বাকি পরীক্ষাগুলো বাতিল হওয়ায় সেগুলোর ফল এসএসসির ফলাফলের ভিত্তিতে নির্ধারণ করা হয়েছে। বাতিল পরীক্ষাগুলোতে কেউ ফেল না করলেও যে পরীক্ষাগুলো অনুষ্ঠিত হয়েছে, সেগুলোতে অনেকে ফেল করেছেন বলে জানিয়েছে শিক্ষা বোর্ড সূত্র। ঢাকা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক শাখার একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে জানান, মূলত ইংরেজি, বাংলা, আইসিটি, পদার্থবিজ্ঞানসহ বেশিরভাগ তুলনামূলক কঠিন বিষয়গুলোর পরীক্ষা হয়ে গেছে। এগুলোতে বেশি ফেল করে। বিশেষ করে ইংরেজি ও আইসিটিতে ফেলের হার প্রতি বছর বেশি থাকে। তিনি বলেন, ‘কিছু পরীক্ষা বাতিল হলেও বিষয়টি এমন নয় যে সবাই পাস করবেন। অনেকে ফেল করেছেন। তাছাড়া অনুপস্থিত ও বহিষ্কার হওয়া শিক্ষার্থীরাও অকৃতকার্য বলে বিবেচিত হবেন। সেজন্য ফেল থাকবে অনেক।’ গত ৩০ জুন এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা শুরু হয়। এতে পরীক্ষার্থী ছিলেন ১৪ লাখ ৫০ হাজার ৭৯০ জন। প্রথম প্রকাশিত রুটিন অনুযায়ী-৮ দিন পরীক্ষা হওয়ার পর কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে ১৮ জুলাইয়ের সব পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। এরপর তিন দফায় পরীক্ষা স্থগিত করে সরকার। সূচি অনুযায়ী-মোট ৬১ বিষয়ের পরীক্ষা গ্রহণ বাকি ছিল। বিভিন্ন বিভাগের (বিজ্ঞান, মানবিক ও বাণিজ্য) বিভিন্ন বিষয় থাকায় এতগুলো পরীক্ষা স্থগিত এবং পরে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে তা বাতিল করা হয়। এতে কারও পাঁচ বিষয়, আবার কারও ছয় বিষয়ের পরীক্ষা বাতিল হয়েছে। সেগুলোতে এসএসসির ফলাফলের ভিত্তিতে গ্রেড পয়েন্ট নির্ধারণ করা হবে। আর যে বিষয়গুলোর পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে, সেগুলোর খাতা মূল্যায়ন করে নম্বর ও গ্রেড পয়েন্ট নির্ধারণ হবে।
আনুষ্ঠানিকতা থাকছে না
অতীতের মতো এবার এইচএসসির ফল প্রকাশে আনুষ্ঠানিকতা থাকছে না বলে জানিয়েছেন আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি অধ্যাপক তপন কুমার সরকার। গতকাল সোমবার তিনি বলেন, মঙ্গলবার (আজ) বেলা ১১টায় বোর্ড চেয়ারম্যানরা নিজেদের অফিসে বসে ফল প্রকাশ করবেন।” গত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে নির্ধারিত দিন সকালে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশের আনুষ্ঠানিকতা সারতেন সরকারপ্রধান। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে তার হাতে ফলের প্রতিবেদন তুলে দিতেন বোর্ডের চেয়ারম্যানরা। শিক্ষামন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা থাকতেন ওই অনুষ্ঠানে। সরকারপ্রধান আনুষ্ঠানিকতা সারার পর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ওয়েবসাইট ও মোবাইলে ফল জানার সুযোগ মিলত। এ ছাড়া শিক্ষামন্ত্রী সংবাদ সম্মেলন করে সারাদেশের বিস্তারিত ফলাফলের সারসংক্ষেপ তুলে ধরতেন। অধ্যাপক তপন কুমার সরকার বলেন, “এবার ওরকম ব্রিফ থাকবে না। গণমাধ্যমকর্মীরা পরিসংখ্যান নিয়ে যেতে পারবেন। “আনুষ্ঠানিকতা বলতে আগের মতো কিছু হবে না; শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে কিছু হবে না, কোথাও কোনো কিছু হবে না। সাংবাদিকদের পরিসংখ্যান দিয়ে দেবো আমরা (বোর্ড প্রধান)।” বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় মাঝপথে বন্ধ হয়ে যাওয়া পরীক্ষার ফল কীভাবে প্রকাশ করা হবে তা ঠিক করতে সময় লেগে যাওয়ায় এতোদিন ফল প্রকাশ হয়নি। সাড়ে ১৪ লাখ পরীক্ষার্থীর সেই অপেক্ষার অবসান হচ্ছে আজ মঙ্গলবার। ফল কীভাবে হচ্ছে, এ প্রশ্নের উত্তরে এর আগে অধ্যাপক তপন বলেছিলেন, “যে কয়টা বিষয়ের পরীক্ষা হয়েছে সেগুলোর উত্তরপত্র মূল্যায়নের মাধ্যমে হবে। যেগুলোর পরীক্ষা হয়নি, সেগুলোর এসএসসিতে যে নম্বর পেয়েছে- সেটাই সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ের মাধ্যমে মূল্যায়ন হবে।”
যেভাবে জানা যাবে ফল
অন্যান্যবারের মত এবারও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা বোর্ডগুলোর ওয়েবসাইটের পাশাপাশি যে কোনো মোবাইল থেকে এসএমএস করে উচ্চমাধ্যমিকের ফল জানা যাবে। ঢাকা বোর্ডের ওয়েবসাইট (িি.িফযধশধবফঁপধঃরড়হনড়ধৎফ.মড়া.নফ) ও বোর্ডগুলোর সমন্বিত ওয়েবসাইটে (িি.িবফঁপধঃরড়হনড়ধৎফৎবংঁষঃং.মড়া.নফ) ঢুকে রেজাল্ট কর্নারে ক্লিক করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এন্ট্রি সেরে প্রতিষ্ঠানভিত্তিক ফলাফল নামানো যাবে। এ ছাড়া পরীক্ষার্থীরা রোল ও রেজিস্ট্রেশন নম্বর টাইপ করে ফল জানতে পারবে। ফল প্রকাশের পর মোবাইল ফোনে এসএমএসের মাধ্যমেও তা জানা যাবে। এইচএসসির ফল জানতে ঐঝঈ লিখে স্পেস দিয়ে শিক্ষা বোর্ডের নামের প্রথম তিন অক্ষর লিখে স্পেস দিয়ে রোল নম্বর লিখে স্পেস দিয়ে ২০২৪ লিখে ১৬২২২ নম্বরে পাঠাতে হবে। ফিরতি এসএমএসে আসবে ফল।