জাতীয় সংবাদ

স্কুলে ভর্তিতে মুক্তিযোদ্ধার নাতি-নাতনির কোটা বাতিল

প্রবাহ রিপোর্ট : ২০২৫ শিক্ষাবর্ষে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকপর্যায়ের দেশের সব সরকারি-বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি নীতিমালা ও ভর্তির নির্দেশনা প্রকাশ করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরগুলো। গতকাল মঙ্গলবার শিক্ষা মন্ত্রণালয় এ-সংক্রান্ত নীতিমালা প্রকাশ করে। নীতিমালায় বীর মুক্তিযোদ্ধার পুত্র-কন্যাদের জন্য ৫ শতাংশ কোটা রাখা হলেও নাতি-নাতনিদের জন্য কোটা বাদ দেওয়া হয়েছে। একইভাবে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির ক্ষেত্রেও বীর মুক্তিযোদ্ধার নাতি-নাতনিদের জন্য কোনো কোটা রাখা হয়নি। নীতিমালায় ভর্তির ক্ষেত্রে ‘মুক্তিযোদ্ধা কোটার’ বিষয়ে বলা হয়, বীর মুক্তিযোদ্ধা বা শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের পুত্র-কন্যার জন্য ৫ শতাংশ আসন সংরক্ষিত থাকবে। মুক্তিযোদ্ধা আসন নির্ধারণের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট প্রমাণপত্রের সত্যায়িত কপি আবেদনপত্রের সঙ্গে সংযুক্ত করতে হবে এবং ভর্তির সময় মূল কপি দেখাতে হবে। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির মুক্তিযোদ্ধা সনদ যথাযথভাবে যাচাই করে ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হবে। বীর মুক্তিযোদ্ধা বা শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের পুত্র-কন্যা না পাওয়া গেলে মেধা তালিকা থেকে ওই আসনে ভর্তি করতে হবে। কোনো অবস্থায় আসন শূন্য রাখা যাবে না। গত বছরের নীতিমালায় বলা ছিল- বীর মুক্তিযোদ্ধা-শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের পুত্র-ক্যনা এবং পুত্র-কন্যা না পাওয়া গেলে নাতি-নাতনিদের ভর্তির জন্য শূন্য আসনের ৫ শতাংশ কোটা সংরক্ষণ থাকবে। এবারের নীতিমালায় মুক্তিযোদ্ধা বা শহীদ মুক্তিযোদ্ধার নাতি-নাতনিদের জন্য কোটা বরাদ্দ নেই। এছাড়াও নীতিমালায় বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের শিক্ষার মূল ধারায় সম্পৃক্ত করার লক্ষ্যে নূন্যতম যোগ্যতা থাকা শর্তে ভর্তির ক্ষেত্রে ২ শতাংশ আসন সংরক্ষিত রাখা হয়েছে। তবে ওই আসনেও উপযুক্ত কোনো শিক্ষার্থী পাওয়া না গেলে অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে শূন্য আসন পূরণ করার কথা বলা হয়েছে। নীতিমালায় বলা হয়েছে, শিক্ষার মূলধারায় সম্পৃক্ত করার লক্ষ্যে সারা দেশে লিল্লাহ বোর্ডিংয়ে অবস্থানরত সব শিশুকে প্রত্যয়ন সাপেক্ষে নিকটস্থ প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করতে হবে। এ ক্ষেত্রে ১ শতাংশ আসন সংরক্ষণ থাকবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ দপ্তর বা সংস্থায় কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সন্তান ভর্তির জন্য নূন্যতম যোগ্যতা থাকা সাপেক্ষে ১ শতাংশ আসন সংরক্ষিত থাকবে। ঢাকা মহানগরীর বেসরকারি স্কুলগুলোয় ভর্তির ক্ষেত্রে স্কুল সংলগ্ন ক্যাচমেন্ট এরিয়ার শিক্ষার্থীদের জন্য ৪০ শতাংশ আসন সংরক্ষণ করতে হবে। অবশিষ্ট আসন সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে। একই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৫ম শ্রেণি থেকে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের ভর্তির ক্ষেত্রে ক্যাচমেন্ট এরিয়ার ৪০ শতাংশ আসন সংরক্ষণ প্রযোজ্য হবে না। কোন প্রতিষ্ঠানে আবেদনকারী শিক্ষার্থীর যমজ ভাই/বোন যদি পূর্ব থেকে অধ্যয়নরত থাকে অথবা যে সব যমজ ভাই/বোন নতুন আবেদন করবে তাদের জন্য ৩ শতাংশ আসন সংরক্ষিত থাকবে। তবে এ সুবিধা কোন দম্পতির মোট তিন সন্তান পর্যন্ত প্রযোজ্য হবে। কোন প্রতিষ্ঠানে যমজ ভাই/বোন এর আবেদন পাওয়া না গেলে ওই ৩ শতাংশ সহদোর-সহদোরার জন্য উর্মুক্ত থাকবে। গতকাল মঙ্গলবার ভর্তিনীতিমালা জারি করে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর। নীমিতালায় বলা হয় শিক্ষামন্ত্রণালয়ের জারি করা ভর্তিনীতিমালা অনুসরণ করতে হবে। গত ৭ অক্টোবর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জারি করা নীতিমালায় ভর্তির ক্ষেত্রে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নীতিমালার আলোকে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর গতকাল মঙ্গলবার ভর্তির নির্দেশনা জারি করে। এতে বলা হয়, ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠানের শূন্য আসনসহ অন্যান্য তথ্যাদি ৩০ অক্টোবর থেকে ৮ নভেম্বরের মধ্যে টেলিটকের লিংক মংধ.ঃবষবঃধষশ.পড়স.নফ এ প্রবেশ করে টেলিটকের দেওয়া ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড দিয়ে প্রবেশ করতে হবে। সরকারি স্কুলের মতো এ বছর বেসরকারিতেও ডিজিটাল লটারির মাধ্যমে শিক্ষার্থী নির্বাচন ও ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে। এন্ট্রি শ্রেণিতে (প্রথম শ্রেণি) এবং আসন শূন্য থাকা সাপেক্ষে নবম শ্রেণি পর্যন্ত সব শ্রেণিতে শিক্ষার্থী ভর্তি করানো যাবে। নতুন শিক্ষাবর্ষ হবে ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। প্রতি শ্রেণি শাখায় শিক্ষার্থী সংখ্যা হবে ৫৫ জন। নীতিমালা অনুযায়ী, এবার রাজধানীর এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো সর্বোচ্চ ভর্তি ফি নিতে পারবে ৫ হাজার টাকা। আংশিক এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ভর্তি ফি নিতে পারবে ৮ হাজার টাকা। তবে ইংরেজি ভার্সনে ভর্তি ফি ১০ হাজার টাকা। আর রাজধানীর প্রতিষ্ঠানগুলো উন্নয়ন ফি ৩ হাজার টাকার বেশি আদায় করতে পারবে না। একই প্রতিষ্ঠানে বার্ষিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর প্রতি বছর সেশন চার্জ নেওয়া যাবে। তবে পুনঃভর্তি ফি নেওয়া যাবে না। নীতিমালায় বলা হয়েছে, ‘জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০’ অনুযায়ী ৬ বছরের বেশি বয়সী শিক্ষার্থীদের ভর্তি নিশ্চিত করতে হবে। কাক্সিক্ষত শিক্ষাবর্ষের ১ জানুয়ারি তারিখে শিক্ষার্থীর সর্বনিম্ন বয়স ৫ বছর এবং ৩১ ডিসেম্বর তারিখে সর্বোচ্চ ৭ বছর পর্যন্ত হবে। যেমন- ২০২৫ শিক্ষাবর্ষে ভর্তিকালে কোনো শিক্ষার্থীর বয়সসীমা সর্বনিম্ন ৫ বছর হবে। অর্থাৎ সর্বনিম্ন জন্ম তারিখ হবে ১ জানুয়ারি ২০২০ পর্যন্ত এবং সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৭ বছর পর্যন্ত, অর্থাৎ জন্মতারিখ ৩১ ডিসেম্বর ২০১৭ পর্যন্ত। পরবর্তী শ্রেণিগুলোতে বয়স নির্ধারণের বিষয়টি প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে ধারবাহিকভাবে প্রযোজ্য হবে। শিক্ষার্থীর বয়স নির্ধারণের জন্য ভর্তির আবেদন ফরমের সঙ্গে অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন সনদের সত্যায়িত কপি জমা দিতে হবে। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের বয়স নির্ধারণে সর্বোচ্চ ৫ বছরের অতিরিক্ত সুবিধা দেওয়া যাবে।

 

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button