জাতীয় সংবাদ

লুটপাটের কারণে দেশের সড়ক নির্মাণ ব্যয় অত্যাধিক বেশি

প্রবাহ রিপোর্ট : লুটপাটের কারণে দেশের সড়ক নির্মাণ ব্যয় অত্যাধিক বেশি পড়ছে। অথচ প্রতিবেশী দেশগুলো তারচেয়ে অনেক কম খরচে সড়ক নির্মাণ করছে। মূলত দরপত্র প্রক্রিয়ার ত্রুটির কারণে সড়ক ও জনপদ (সওজ) অধিদপ্তরের সড়ক ও মহাসড়ক উন্নয়ন প্রকল্পে বড় দুর্নীতির ঘটনা ঘটছে। পদ্ধতিগত ত্রুটির সুযোগ নিয়ে হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট করে নিচ্ছে রাজনীতিক, আমলা ও ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট। ফলে বাংলাদেশের সড়ক নির্মাণ ব্যয় প্রতিবেশী দেশগুলোর চেয়ে ২ থেকে ৯ গুণ বেশি। আর ইউরোপের চেয়েও ২ গুণ বেশি। বিশেষজ্ঞদের মতে, বিদ্যমান অবস্থার উত্তরণ ঘটাতে দরপত্র প্রক্রিয়ায় সংশোধন আনা জরুরি। সওজ অধিদপ্তর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দেশে সড়ক নির্মাণে প্রকল্পের প্রাক্কলন প্রণয়ন থেকে দুর্নীতির শুরু হয়। প্রাক্কলন করে ধাপে ধাপে ব্যয় ও মেয়াদ বাড়ানো হয়। এক্ষেত্রে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে রাজনীতিক ও আমলাদের যোগসাজশে বড় লেনদেন চলে। আর বেশি কাজ করলে দরপত্র মূল্যায়নে বেশি নম্বর দেয়ার পদ্ধতির কারণে একই ঠিকাদার বেশি কাজ পান। ওই ঠিকাদারের লাইসেন্সে দরপত্রে অংশ নিলে অন্যরা কাজ পান না। বিগত ১৫ বছরে সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের আওতাধীন প্রকল্প বাস্তবায়নে সর্বোচ্চ ৪০ শতাংশ অর্থ লোপাটের ঘটনা ঘটেছে। যার পরিমাণ ২৯-৫১ হাজার কোটি টাকা। তিন শ্রেণির সমন্বিত একটি চক্র এসব অর্থ লোপাট করেছে। এর মধ্যে মন্ত্রী, সংসদ-সদস্য ও প্রভাবশালী রাজনীতিক; আমলা ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সূত্র জানায়, সড়ক নির্মাণে দুর্নীতি রোধে একাধিক কাজ চলমান থাকারত ঠিকাদারকে কাজ না দেয়া উচিত নয়। পাশাপাশি প্রাক্কলন ও দরপত্রে ত্রুটি পেলে প্রকল্প পরিচালক বদলি এবং ত্রুটি ও অনিয়ম বারবার হলে সংস্থার প্রধানকে বদলিসহ শাস্তি নিশ্চিত করা জরুরি। তাহলেই ধাপে ধাপে পরিস্থিতির উন্নতি হবে। সবচেয়ে বড় কথা-রাজনীতিক, আমলা ও ব্যবসায়ীদের মানসিকতারও পরিবর্তন প্রয়োজন। তাছাড়া প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মেলবন্ধন ভেঙে দিতে হবে। দরপত্রের শর্তে একই প্রতিষ্ঠানের বারবার কাজ পাওয়ার সুযোগ বন্ধ করতে হবে। বর্তমান পদ্ধতিতে বেশি কাজ করলে বেশি নম্বর পেয়ে থাকে ওই প্রতিষ্ঠান; এই দুর্বলতাগুলো দূর করতে হবে। পাশাপাশি নতুন ঠিকাদারদের কাজে যোগদানের সুযোগ সৃষ্টিতে শর্তগুলো সহজ করতে হবে। সূত্র আরো জানায়, প্রাক্কলন দিয়ে প্রকল্পের শুরু হয়। আর শুরুতেই দুর্নীতির সুযোগ তৈরি করে রাখা হচ্ছে। বারবার ব্যয় ও মেয়াদ বাড়িয়ে দুর্নীতির সুযোগ সৃষ্টি করা হচ্ছে। এভাবে হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট করছে অসাধু চক্র। প্রাক্কলন তৈরির ক্ষেত্রে প্রাক-সমীক্ষা ও সমীক্ষার ওপর গুরুত্ব দেয়া হয় না। যদিও বাংলাদেশের কোনো সমীক্ষায় কোনো প্রকল্প অযৌক্তিক বিবেচনা করা হয় না। যেসব বিশেষজ্ঞ অযৌক্তিক প্রকল্পকে গ্রহণযোগ্য হিসাবে প্রতিবেদন দিয়ে থাকেন; তাদেরও জবাবদিহি ও শাস্তির আওতায় আনতে হবে। বর্তমান সংস্কৃতি হলো- সরকার যাদের কাজ দিতে চায়, তাদের বলে দেয়। গোপন দর ফাঁস করে দেয়। এ কারণে দরপত্রে অংশগ্রহণকারীরা কাছাকাছি দর দেয়। দরপত্রের দুর্নীতি নিরসনে পদ্ধতিগত সংস্কারের পাশাপাশি অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রমাণ পেলে তাদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। এদিকে এ প্রসঙ্গে সড়ক পরিবহণ ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান জানান, সড়ক সচিব ও সওজের প্রধান প্রকৌশলীর সঙ্গে সভা হয়েছে। দরপত্রের দুর্বলতাগুলো নিরসনে পরিকল্পনা উপদেষ্টার সঙ্গেও কথা হয়েছে। করণীয় নির্ধারণে সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের নিয়ে সভা করে পরবর্তী কার্যক্রম নেয়া হবে। ইতোমধ্যে সওজের সব ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নাম ও কাজের তালিকা করা হয়েছে। দুর্নীতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানগুলো চিহ্নিত করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে সওজের যারা যে পদে ৩ বছরের বেশি দায়িত্ব পালন করেছেন, সবাইকে বদলির নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এছাড়াও অনিয়ম ও দুর্নীতি বন্ধে যা যা করা দরকার, সে বিষয়ে কার্যকর উদ্যোগ নেয়া হবে।

 

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button