জাতীয় সংবাদ

উন্নত রাডারের নজরদারিতে দেশের পুরো আকাশপথ

প্রবাহ রিপোর্ট : প্রথমবারের মতো দেশের পুরো আকাশপথ নজরদারির আওতায় আসছে। ফলে আকাশপথ একদিকে যেমন আরো নিরাপদ হলো, অন্যদিকে সরকারেরও রাজস্ব বাড়বে। ওই লক্ষ্যে অত্যাধুনিক রাডার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বসানো হয়েছে। এরইমধ্যে রাডারটি চালু করা হলেও আরো কিছু কাজ বাকি রয়েছে। প্রায় শেষের পথে রাডার প্রকল্পের কাজ। আগামী এপ্রিলেই বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের কাছে রাডার প্রকল্পটি হস্তান্তর করবে ফ্রান্সের বিখ্যাত কোম্পানি থ্যালাস। তবে প্রকৃতপক্ষে গত বছরই নতুন রাডার দিয়ে অপারেশনাল কাজ শুরু হয়েছে। ওই রাডার দিয়েই বঙ্গোপসাগরের বিস্তীর্ণ সমুদ্রসীমাসহ বাংলাদেশের আকাশ নজরদারির কাজ চলছে। এখন শুধু এটিসি টাওয়ার ও সিস্টেম ইনস্টলেশানের কাজের অপেক্ষা চলছে। আগামী জুনের মধ্যে সব কাজ শেষ করে উদ্বোধনের সময়সীমা বেঁধে দেয়া হলেও এপ্রিলেই সেটা হস্তান্তর করা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন বেবিচক কর্তৃপক্ষ। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বেবিচকের একটি অত্যাধুনিক মানের রাডার বেবিচকের প্রয়োজন ছিল। অত্যাধুনিক রাডার ব্যবস্থা চালু হওয়ায় এখন উড়োজাহাজ চলাচল আরো নিরাপদ হয়েছে। একইসঙ্গে নজরদারির আওতায় এসেছে দেশের পুরো আকাশ। তাতে দেশে অবতরণ না করে যেসব উড়োজাহাজ বাংলাদেশের আকাশ ব্যবহার করে, সেগুলো থেকেও ফি আদায় করা যাচ্ছে। দেশ আর্থিকভাবে লাভবান হবে।
সূত্র জানায়, দেশে বর্তমানে ৪৪ বছরের পুরনো রাডার ও নেভিগেশন ব্যবস্থার কারণে বঙ্গোপসাগরের বড় একটি অংশের পাশাপাশি দেশের পুরো আকাশ নজরদারির আওতায় নেই। তাতে ওভারফ্লাইং ফি পুরোপুরি আদায় করা সম্ভব হচ্ছে না। অথচ একবার আকাশ ব্যবহারের জন্য ফ্লাইং ওভার ফি প্রায় ৫০০ ডলার। এতোদিন পূর্ণাঙ্গ রাডার সিস্টেম না থাকায় দেশ নিরাপত্তা ঝুঁকির পাশাপাশি আর্থিকভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাছাড়া সারাবিশ্বে এখন ড্রোন দিয়ে অন্য দেশের ওপর নজরদারির প্রবণতা বাড়ছে। শাহজালালে থাকা রাডারটি পুরনো প্রযুক্তির হওয়ায় দেশের আকাশসীমায় নিচু দিয়ে উড়ে যাওয়া কোনো আকাশযান বা ড্রোন শনাক্ত করা যাচ্ছিল না। এতে দেশের নিরাপত্তাও ঝুঁকির মুখে ছিল। এমন বাস্তবতায় বসানো হয়েছে ফ্রান্সের নির্মাতা প্রতিষ্ঠান থ্যালাসের অত্যাধুনিক রাডার। বিশ্বের অত্যাধুনিক এই রাডার সিস্টেমে রয়েছে হেলমেট, এডিএস-বি ও মাল্টিলেটারেশানের মতো সুবিধা, যা উড়োজাহাজের নিখুঁত অবস্থান শনাক্ত করতে সক্ষম। রাডারে ঢাকা থেকে ২৮০ নটিক্যাল কিমি পর্যন্ত দূরের আকাশসীমায় সবধরনের প্লেনের অবস্থান ও গতিপ্রকৃতির নির্ভুল চিত্র ধরা পড়বে।
সূত্র আরো জানায়, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বর্তমানে ব্যবহৃত সার্ভিলেন্স সিস্টেমটি প্রাইমারি ও সেকেন্ডারি রাডার সমন্বয়ে গঠিত, যা ১৯৮৪ ও ১৯৮৬ সালে সংস্থাপন করা হয়। মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে যাওয়ায় এবং বিভিন্ন কারিগরি ত্রুটি দেখা দেয়ায় বেশ কয়েক বার মেরামত করা হয়েছে। বর্তমানে মেয়াদোত্তীর্ণ রাডার অত্যন্ত জরাজীর্ণ অবস্থায় দেশের বাণিজ্যিক আকাশসীমা নিয়ন্ত্রণ করছে, যা ছিল দেশের নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। তাছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল এভিয়েশন অথরিটির মানদ-ে প্রথম শ্রেণির বিমানবন্দরে উত্তীর্ণ হবার জন্য মাল্টিমোড রাডার স্থাপনের কোনো বিকল্প নেই। সঙ্গত কারণেই উন্নত বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের সরাসরি যাত্রীবাহী এবং কার্গো বিমান চলাচল চালু করা সম্ভব হচ্ছে না। তাছাড়া আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান চলাচল সংস্থার নির্দেশনা মোতাবেক এবং বাংলাদেশের বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের পরামর্শক্রমে পিপিপি পদ্ধতির পরিবর্তে নিজস্ব অর্থায়নে বেবিচক মাল্টিমোড রাডার প্রকল্পটি বাস্তবায়নের উদ্যোগে কাজ শুরু করে। বেবিচকের আগ্রহের ভিত্তিতে বাংলাদেশস্থ ফ্রান্স দুতাবাস কর্তৃক ২০১৮ সালে আলোচ্য রাডার ব্যবস্থার আধুনিকায়নের কার্যক্রম ফ্রান্সের রাষ্ট্রীয় সংস্থা ‘থ্যালেস লাস ফ্রান্স’ এর মাধ্যমে বাস্তবায়নের প্রস্তাব করা হয়। থ্যালাস রাডার সিস্টেমের যন্ত্রপাতি উৎপাদন এবং সংস্থাপনে বিশ্বের অন্যতম স্বনামধন্য একটি প্রতিষ্ঠান। ১৯৮৪ সালে বাংলাদেশে সরবরাহকৃত রাডারটিও থ্যালেসের তৈরি ছিল। বেবিচকের অধিকতর অনুরোধের প্রেক্ষিতে থ্যালাস ফ্রান্স সম্পূর্ণ প্রকল্পের জন্য (টেকনিক্যাল এবং সিভিল কাজ) ৬৫৮ কোটি ৪০ লাখ ৩২ হাজার মোট ব্যয়ে সম্মত হয়। এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক নাসরিন সুলতানার মতে, প্রকল্পের নব্বই শতাংশেরও বেশি কাজ শেষ হয়েছে।

 

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button