মাওলানা সাদকে আসার অনুমতি দিলে সরকার পতনের হুঁশিয়ারি
# সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহাসম্মেলন #
প্রবাহ রিপোর্ট : তাবলিগ জামাতের দিল্লির মাওলানা সাদ ও তার অনুসারীদের বাংলাদেশে আসার অনুমতি দেওয়া হলে অন্তর্বর্তী সরকার পতনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তাবলীগ জামাতের একপক্ষের নেতারা। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ইসলামি মহাসম্মেলন থেকে তারা এ হুঁশিয়ারি দেন। বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী বলেন, বিশ্ব ইজতেমাকে কেন্দ্র করে স্বঘোষিত আমির সাদ ও তার অনুসারীরা বিশৃঙ্খলা করার পরিকল্পনা নিয়েছে। আমরা কোনোভাবেই সেটি হতে দেবো না। তাদের সব ষড়যন্ত্র যে কোনো মূল্যে আমরা ব্যর্থ করে দেবো। তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারকে বলবো, আপনারা রাষ্ট্র পরিচালনা করবেন। আমরা আপনাদের সর্বোচ্চ সহযোগিতা করবো। আপনাদের মনে রাখতে হবে, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে অনেক ওলামায়ে কেরাম শাহাদাতবরণ করেছেন। আমরা শাপলা চত্বরে জীবন দিয়েছি। আওয়ামী জালিম সরকারের অনেক অত্যাচার নির্যাতনের শিকার হয়েছি। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে তাবলীগ জামায়াতের বিশ্ব ইজতেমা নিয়ে পূর্ব প্রস্তুতির অংশ হিসেবে ইসলামি মহাসম্মেলন করে তাবলীগের প্রয়াত মাওলানা জুবায়েরুল হাসানের অনুসারী ও কওমিপন্থী আলেম-উলামারা। তারা ৪ ঘণ্টার সম্মেলনে তিন ঘণ্টা ধরে দিল্লির মাওলানা মোহাম্মদ সাদ কান্ধলভিরকে নিয়ে সমালোচনা করেন। মহাসম্মেলনে যোগ দিতে ফজরের নামাজের পর থেকে পুরো দেশ থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জমায়েত হতে থাকেন মাওলানা জুবায়েরুল হাসানের অনুসারী আলেম-ওলামারা। সকাল থেকেই পুরো সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের আশপাশের পুরো মাঠ মুসল্লিতে কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে ওঠে। মহাসম্মেলনে যোগ দেওয়া তাবলীগের দুই গ্রুপের বিভক্তি নিয়ে অনুসারীদের মাঝে নানা বিবাদের বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করতে দেখা যায়। মহাসম্মেলনে মাওলানা জুবায়েরের অনুসারীরা মাওলানা সাদ ও তার অনুসারীদের ‘বাতিল’ বলে দাবি করেন। সমাবেশে ৪ ঘণ্টার আলোচনার মধ্যে বক্তারা দাওয়াত ও তাবলীগ, কওমি মাদ্রাসা ও দ্বীনের হেফাজতের বিষয় নিয়ে আলোচনা খুব বেশি না করে ৩ ঘণ্টার বেশি সময় মাওলানা সাদকে নিয়ে সমালোচনা করেন। আলেম-উলামারা অভিযোগ করে বলেন, সাদপন্থীরা হচ্ছে আওয়ামী লীগের দোসর ও ভারতের ‘র’ এজেন্ট। ইসলামকে বিভক্ত করার উদ্দেশ্যে আওয়ামী লীগ চলে গেলেও তারা এখন বর্তমান সরকারের উপদেষ্টাদের ভুল বোঝানোর চেষ্টা করছে। যদি মাওলানা সাদকে দেশে এনে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করা হয়, তাহলে এই দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমান সেটা মেনে নেবে না। পাশাপাশি কাদিয়ানীদের অমুসলিম ঘোষণা করে, এমন সম্মেলন আয়োজনের আহ্বান জানানো হয়। সমাবেশে মাওলানা নুরুল ইসলাম ওলীপুরী বলেন, তাবলীগের স্ব-ঘোষিত আমির সাদ কোরআন হাদিস, আলেম-উলামা, আল্লাহর অলি, নবী ও স্বয়ং আল্লাহর বিরুদ্ধে কুফরি বক্তব্য দিতে থাকেন। তাই সারা বিশ্বে তাবলীগের মূলধারা তাকে ‘অবাঞ্ছিত’ ঘোষণা করা হয়। সাদের অনুসারীরা হচ্ছে কাদিয়ানী গ্রুপ। তারা ইসলামের মূলধারায় বিভক্তি সৃষ্টি করছে। এই সরকারকে তাবলীগের নামে কাদিয়ানীদের সব কর্মকা- নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে হবে। কাদিয়ানীরা বাংলাদেশে অবাঞ্ছিত। জামিয়া মাদানিয়া বারিধারা মাদ্রাসার হোসেন কাসেমী বলেন, তাবলীগের সৃষ্টি দেওবন্দ থেকে। তাদের হাতেই লালিত-পালিত হচ্ছে। এই তাবলীগ নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে চাইলে আলেম-উলামারা বসে থাকবে না। এখানে অনেক সংগঠনের সবাই এসে উপস্থিত হয়েছেন। এটাই প্রমাণ করে আমরা আর যাই ভাগ করি না কেন আমরা ইসলামকে ভাগ করতে পারি না। উল্লেখ্য, তাবলীগ দীর্ঘ দিন ধরে দুটি অংশে বিভক্ত। দুটি অংশের একটি দিল্লির মাওলানা মোহাম্মদ সাদ কান্ধলভির ও আরেকটি অংশ প্রয়াত মাওলানা জুবায়েরুল হাসানের অনুসারীদের।