জাতীয় সংবাদ

আ. লীগের সঙ্গে কোনো সমঝোতা নেই: প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব

প্রবাহ রিপোর্ট : আওয়ামী লীগের সঙ্গে কোনো সমঝোতা নেই জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, আওয়ামী লীগ—যাদের হাতে রক্ত আছে, তাদের আগে বিচার করতে হবে। যার হাতে কোনো রক্ত আছে, তার সঙ্গে কোনো সমঝোতা নেই, তার বিচার অবশ্যই করতে হবে। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর জাতীয় জাদুঘরে ‘বেনার নিউজ বাংলা’ আয়োজিত ‘কী চাই নতুন বাংলাদেশে?’ শীর্ষক এক ফোরাম আলোচনায় তিনি এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন লেখক-বুদ্ধিজীবী অধ্যাপক ড. সলিমুল্লাহ খান, বিএনপির চেয়ারপারসনের পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা কমিটির সদস্য ড. মাহাদি আমিন, ‘মায়ের ডাক’র অন্যতম সমন্বয়ক সানজিদা ইসলাম তুলি, স্বৈরাচার আমলে গুমের শিকার শিক্ষক ড. মোবাশ্বার হাসান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ, স্বৈরাচার আমলে নির্যাতনের শিকার অভিনেত্রী নওশাবা আহমেদ প্রমুখ। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, আমরা এমন একটা বাংলাদেশ চাই যেখানে কারও কোনো ভয় থাকবে না। এমন একটা দেশ চাইব যেখানে কোন দূষণ থাকবে না। যেখানে বাংলাদেশের নিজস্ব রূপ থাকবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির বিচার হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করে অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান বলেন, তারা আমানতের খিয়ানত করেছে। তারা জুলাইয়ের ছাত্র আন্দোলনের বিপক্ষে ছিল। তাদের দাসত্ব ও প্রভু ভক্তি পুরো শিক্ষক সমাজকে কলুষিত করেছে। অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান বলেন, আমরা সমতাভিত্তিক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ চাই। সমতা অথবা ন্যায়। আমাদের লক্ষ্য হবে মানুষের মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করা। পশুকেও নির্যাতন করা অন্যায়। কোনও মানুষকে যদি আপনি মানুষ মনে করেন তাহলে আর অন্যায় করবেন না। নতুন বাংলাদেশে আমি চাই না কোনও ধর্মকে নিপিড়ন করা হোক। বাংলাদেশ ধর্ম-বর্ণ জাতি নির্বিশেষে সবার। তিনি বলেন, অনেকে বলেন ২০০৮ থেকে বা ২০১৪ থেকে ফ্যাসিবাদের সূচনা হয়েছে। আমি বলি ১৯৭২ থেকেই ফ্যাসিবাদীর সূচনা হয়েছে। বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদীর সূচনা হয়েছে যারা যুদ্ধ করে নাই তাদের জাতির জনক বানানো দিয়ে। অথচ যারা যুদ্ধ করেছে, ত্যাগ শিকার করেছে, তাদের অবমূল্যায়ন করা হয়েছে। আমরা তরুণদের কাছে চিরঋণী তারা আমাদের হারানো স্বাধীনতাকে ফিরিয়ে দিয়েছেন। এসময় তিনি ৫ আগস্টকে তৃতীয় স্বাধীনতা বলেও আখ্যায়িত করেছেন। সলিমুল্লাহ খান বলেন, ইতিহাসকে আসলে যারা ভুলিয়ে দেয় তারা ফ্যাসিবাদ। ইতিহাস মোটেও অতীত নয়। ইতিহাস হচ্ছে বর্তমান। চিন্তার ক্ষেত্রে, ধ্যান ধারণার ক্ষেত্রে, সবক্ষেত্রে আমাদের স্বাধীনতা থাকতে হবে। এদেশের শতকরা ২৬ জন লোক এখনও স্বাক্ষর করতে পারে না। শিক্ষার ক্ষেত্রে সর্বজনীনতা আনতে হবে। শিক্ষা হবে বিনামূল্যে, শিক্ষার জন্য কেন পয়সা লাগবে। আমাদের ছেলেমেয়েরা বিদেশে যায়, কারণ আমরা তাদের জন্য এখনও কোনও আশার প্রদীপ জ্বালাতে পারিনি। আমাদের মানবাধিকারের আগে নাগরিকদের অধিকারের কথা বলতে হবে। মানবাধিকার নিশ্চিতের প্রথম শর্ত সবাইকে আইনের অধীনে থাকতে হবে। বাংলা ভাষা সম্পর্কে তিনি বলেন, বাংলা ভাষা রাষ্ট্রের কোনও কাজেই ব্যবহার করা হয় না। বাংলা এখন আন্তর্জাতিক দিক থেকেও প্রায় বিলুপ্ত ভাষা। কিছুদিন আগে বিবিসি বাংলা রেডিও বন্ধ করে দিয়েছে। আমাদের উচিত আগে বাংলাদেশের সব কাজ বাংলায় হবে, এটা নিশ্চিত করতে হবে। সবকিছুর নাম বাংলায় করতে হবে। রাষ্ট্রভাষা যেহেতু বাংলা, আমাদের সব কিছু বাংলা হতে হবে। শ্রমিকদের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, মজুরি সংস্কার কমিশন এখনও হয়নি, এটা করা দরকার। যারা আমাদের দেশের ভিত্তি তাদের মজুরি নিশ্চিত করতে হবে। আমরা দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ চাই। ১৮ হাজারের নিচে আয় যদি ধরা হয় তাহলে প্রকৃতপক্ষে ৮০ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করে। হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, আমি ৫ আগস্টের আগের মিডিয়া ও পরের মিডিয়ায় অনেক তফাত দেখছি। মিডিয়াকে বলব, আপনারা আর গণভবনমুখী হবেন না। সরকার যা শুনতে চায় এমন নিউজ করা হচ্ছে প্রেস রিলিজ, আর সরকার যা শুনতে চায় না তা হচ্ছে নিউজ। আপনারা সরকার যা শুনতে চায় না এমন নিউজ করুন। তাহলেই গণমাধ্যম বস্তুনিষ্ট সংবাদমাধ্যম হয়ে উঠবে। আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ অংশ নেবে কি নেবে না, সেটা প্রাসঙ্গিক নয় উল্লেখ করে হাসনাত বলেন, বর্তমান সরকার একটি বিপ্লবী সরকার হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কোনো না কোনোভাবে এটিকে কনস্টিটিউশনাল (সাংবিধানিক) করে ফেলা হয়েছে। এতে আমরা মনে করি, আমাদের সিনিয়ররা আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। এখন পর্যন্ত জুলাই বিপ্লবে শহীদ ও আহতদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হয়নি। ড. মোবাশ্বার হাসান বলেন, নতুন বাংলাদেশে সবাইকে প্রথমে মানবাধিকারের প্রতি সম্মান জানাতে হবে। আমরা এমন একটি মানবিক বাংলাদেশ দেখতে চাই যেখানে একটাও গুম ও খুনের ঘটনা দেখা যাবে না। যেখানেই গুমের ঘটনা হবে সেখানে জনগণ প্রতিরোধ গড়ে তুলবে। মোট কথা একটি মানবিক বাংলাদেশ আমাদের সবার আশা। ‘মায়ের ডাক’র সমন্বয়ক সানজিদা ইসলাম তুলি বলেন, আমি গুম হয়ে যাওয়া আমার ভাইয়ের হাতটা ধরতে চাই নতুন বাংলাদেশে। আমি এমন একটা বাংলাদেশ দেখতে চাই, যেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী একজন নাগরিককে কতটুকু তার কাস্টডিতে নিতে পারবে, এমন একটি সুনির্দিষ্ট বিধান থাকবে। এখন একটি কথা শোনা যায়, আওয়ামী লীগকে আবার মাঠে আসতে দেওয়া হোক। তবে আগে আওয়ামী লীগের বিচার করতে হবে। আওয়ামী লীগের প্রতিটি গুম-খুনের ন্যায়বিচার করতে হবে। এখনো গুম-খুন বিষয়ক আইন সংশোধন হয়নি। এগুলো সংশোধন করে এবং সংস্কার করার মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশ তৈরি করতে হবে। ড. মাহাদি আমিন বলেন, আমরা এমন বাংলাদেশ দেখতে চাই যেখানে সত্যিই আমরা মনে করবো আমরা স্বাধীন দেশের স্বাধীন নাগরিক। আমরা এমন একটি দেশ চাই যেখানে সরকারের জবাবদিহি থাকবে। এমন একটি বাংলাদেশ চাই যেখানে কারও কোনো একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দল করতে হবে না। এখানে কার কী রাজনৈতিক মতাদর্শ থাকবে, সেটা বিবেচনা করা হবে না। ক্ষমতার পরিবর্তন মানে কোনো রাজনৈতিক দলের পরিবর্তন না, এখানে ক্ষমতার পরিবর্তন মানে একটি আদর্শের পরিবর্তন। বিএনপির নেতাদের লাশের ওপর ১৬ বছর দাঁড়িয়ে আওয়ামী লীগ সরকার ফ্যাসিবাদী ট্যাগ পেয়েছে উল্লেখ করে ড. মাহাদি আমিন বলেন, যেহেতু ১৬ বছরে সবথেকে বেশি শহীদ বিএনপির হয়েছে, সেখানে সরকারের প্রতি আমাদের দাবি থাকবে এর বিচার যেন দ্রুত হয়। এই জুলাই আন্দোলনেও বিএনপির সাড়ে চার শতাধিক বেশি নেতা-কর্মী শহীদ হয়েছেন।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button