রাজনৈতিক দলকে শাস্তির আওতায় আনতে সংশোধন হচ্ছে আইন: আসিফ নজরুল
প্রবাহ রিপোর্ট : আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন সংশোধন করে রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে সচিবালয়ে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে ‘অন্তর্বর্তী সরকারের ১০০ দিন: আইন মন্ত্রণালয়ের কৈফিয়ত’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। আইন উপদেষ্টা বলেন, বুধবার (আজ) উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল অধ্যাদেশের খসড়া অনুমোদনের জন্য উত্থাপন করা হবে। এরপর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল অধ্যাদেশের খসড়া উপদেষ্টা পরিষদকে গ্রহণ করতে হবে। আমাদের প্রস্তাব আছে (রাজনৈতিক দলের সাজার সুপারিশ করতে) আদালতকে সরাসরি ক্ষমতা দেওয়া। তিনি বলেন, খসড়ায় বলা হয়েছে, আদালত যদি মনে করেন তারা রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কনসার্ন অথরিটির কাছে সুপারিশ করতে পারেন। কনসার্ন অথরিটি হিসেবে আদালত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, নির্বাচন কমিশনের কাছে সুপারিশ করতে পারেন জানিয়ে আইন উপদেষ্টা বলেন, তবে এসব বিষয় খসড়ায় বলা নেই। গত ১০০ দিন আইন মন্ত্রণালয়ে কী কী কাজ হয়েছে, সেসবের বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরে আইন উপদেষ্টা বলেন, গত ১ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত দায়ের হওয়া প্রায় সব ফৌজদারি মামলা প্রত্যাহার করা হয়েছে। ৯০ হাজার থেকে এক লাখ আবেদন যাচাই-বাছাই করে ৪৩০০ জন আইন কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছে। এসময় অতি প্রয়োজনীয় কিছু সংস্কার করে যত দ্রুত সম্ভ নির্বাচন দেওয়া হবে বলে জানান উপদেষ্টা। আসিফ নজরুল বলেন, আমরা অতি প্রয়োজনীয় কিছু সংস্কার করে যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন দেব। আমরা শুধু চাই না, আগের মতো কোনো ভুয়া নির্বাচন হোক। নির্বাচনে কেউ বিজয়ী হয়ে আগের মতো ভুয়া নির্বাচনের সুযোগ পাক। এটা ছাড়া আমাদের আর কোনো স্বার্থ নেই। তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারে যারা আছেন, তাদের অধিকাংশই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নিজের পেশায় ফিরে যেতে আগ্রহী। অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ চার বছর প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, চার বছর এ ধরনের কোনো কথাই বলা হয় নাই। তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীদের আন্দোলন প্রসঙ্গে আইন উপদেষ্টা বলেন, যে কেউ ভিন্নমত পোষণ করতে পারেন। কিন্তু এভাবে রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া, সাধারণ মানুষকে ভোগান্তির মধ্যে ফেলা, মানুষকে জিম্মি করা, অসহনীয় ট্রাফিক জ্যাম সৃষ্টি করা; আন্দোলনকারীরা এইসব জিনিস যদি অব্যাহত রাখেন, আমি মনে করি সাধারণ মানুষের পক্ষ থেকে প্রতিরোধ গড়ে তোলা উচিত। আপনি আন্দোলন করবেন, কিন্তু সাধারণ মানুষকে জিম্মি করতে পারেন না। কালকে ট্রেনে ইট মেরে নারী-শিশুকে আহত করা হয়েছে। এটা কী ধরনের আন্দোলন? তিনি আরও বলেন, আপনি রাতারাতি কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় বানিয়ে দিতে বলবেন, আপনি বলবেন- এইচএসসি পরীক্ষা দেব না, আমার পরীক্ষার রেজাল্ট বদলায় দিতে হবে; একটু কঠোর পদক্ষেপ নিলে সবাই সমালোচনা করবেন। আমার ধারণা এই ধরনের হয়রানিমূলক, জিম্মিমূলক আন্দোলনের বিপক্ষে সাধারণ জনমত অত্যন্ত শক্তিশালী হচ্ছে। এদিকে নিজের ১০০ দিনের কাজের মূল্যায়নের নিজেকে ১০ এ ৪ নম্বর দিতে চান আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল। তিনি বলেন, আমি আমার কাজের নম্বর দিলে ১০ এর মধ্যে ৪ দেবো। আসিফ নজরুল বলেন, আগে তিনটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করতাম, এখন দুটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করছি। ফলে আইন মন্ত্রণালয় শতভাগ সময় দিয়ে কাজ করতে পারিনি। তবে আপনাদের একটা কথা বলতে পারি, প্রতিদিন অন্তত ১২ ঘণ্টা কাজ করেছি। কোনও অন্যায় করিনি, ভুল করতে পারি। যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা আমার কম থাকতে পারে। কিন্তু প্রচেষ্টার কোনও কমতি ছিল না। নিজের কাজে সন্তুষ্ট নন উল্লেখ উপদেষ্টা বলেন, আমি ধর্মপ্রাণ মানুষ। রাতে যখন একা থাকি তখন আল্লাহর কাছে দোয়া করি, বলি যে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের বিনিময়ে তিনি আমাকে যে সুযোগটা দিয়েছেন, সেটা আমি যেন অনেস্টলি করে যেতে পারি। আমার কাজটা যেন আল্লাহ সহজ করে দেন।