তিন কলেজের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষে রণক্ষেত্র যাত্রাবাড়ী, আহত অন্তত ৩০

প্রবাহ রিপোর্ট : রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর মাতুয়াইলের ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়েছেন সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও কবি নজরুল সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীরা। গতকাল সোমবার বেলা ১২টার দিকে মোল্লা কলেজের সামনে সংঘর্ষ ঘটে। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ায় রণক্ষেত্রে পরিণত হয় যাত্রাবাড়ীর ডেমরা এলাকা। সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হন। এর আগে সকাল ১০টার দিকে লাঠিসোঁটা হাতে সোহরাওয়ার্দী কলেজের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা খ- খ- মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাস প্রাঙ্গণে জড়ো হয়। পরে তারা মিছিল নিয়ে কবি নজরুল কলেজের সামনে আসেন। এসময় নজরুল কলেজের অধ্যক্ষ মাইকে শান্ত হওয়ার আহ্বান জানালে দুই কলেজের শিক্ষার্থীরা ‘ভুয়া, ভুয়া’ স্লোগান দিতে থাকেন। পরে তারা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে ডেমরা সড়ক সংলগ্ন মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজে হামলা চালায়। এসময় মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থীরা তাদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায়। এদিকে হামলায় দুই পক্ষের সংঘর্ষে অন্তত ৩০ থেকে ৩৫ জন আহত হয়েছে বলে জানা গেছে। গতকাল সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত হাসপাতালে মেডিকেল কলেজ চিকিৎসা নেন তারা। আহতদের মধ্যে তিন কলেজের ছাত্র ছাড়াও পথচারী ও সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালকও আছেন। গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্প ইনচার্জ (ইন্সপেক্টর) মো. ফারুক এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, ডেমরা-যাত্রাবাড়ী এলাকায় তিন কলেজের সংঘর্ষের ঘটনায় দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত আনুমানিক ৩০ থেকে ৩৫ জন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসেছেন। আহতদের মধ্যে দুই-একজন পথচারীও আছেন বলে জানা গেছে। তবে সর্বোচ্চ সংখ্যক আহত হয়েছেন কবি নজরুল ও সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থীরা। এ সংঘর্ষের ঘটনায় ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের মিয়া হোসেন নাফি নামে একজন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। এদিকে সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল কলেজ ও ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষে দুই জন নিহত হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়লেও তা সঠিক নয় বলে জানিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। সংস্থাটি জানায়, ওই তিন কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষে প্রায় ২৫ জন আহত হয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উল্লেখিত ঘটনায় দুই জন নিহত হয়েছেন বলে অনেকেই অপপ্রচার চালাচ্ছেন, যা সঠিক নয়। সংশ্লিষ্ট সবাইকে এই অপপ্রচার থেকে বিরত থাকার অনুরোধ করা হলো। গতকাল সোমবার বিকালে ডিএমপির উপ-কমিশনার (মিডিয়া) মোহাম্মদ তালেবুর রহমান সই করা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়। ঘটনার বর্ণনা দিয়ে ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গত ১৬ নভেম্বব ডেমরার ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থী অভিজিৎ হাওলাদার ডেঙ্গু নিয়ে ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ভর্তি হন। ১৮ নভেম্বর তার মৃত্যু হয়। ওই দিন রাতে তার পরিবার ও কলেজের কিছু শিক্ষার্থী ভুল চিকিৎসায় তার মৃত্যু হয়েছে অভিযোগে হাসপাতালে ভাঙচুর চালায়। ২০ নভেম্বর পুনরায় ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের ৫০০-৬০০ শিক্ষার্থী ওই হাসপাতালে ভাঙচুর করে। এক পর্যায়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। এ সময় প্রতিবাদকারীদের চাপে হাসপাতালের পরিচালক চার জন ডাক্তার এবং দুই জন শিক্ষার্থীকে নিয়ে অভিজিতের চিকিৎসা সংক্রান্তে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। সেই সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে হাসপাতাল চত্বরে অবস্থানরত শিক্ষার্থীরা। সন্ধ্যার পর স্থানীয় শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও কবি নজরুল কলেজের শিক্ষার্থীরা তাদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করতে আসে। এ সময় ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থীরা তা না মানায় উভয় পক্ষের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এতে শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের দুই ছাত্র আহত হন। পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, গত রোববার আনুমানিক ২টার দিকে ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে পুনরায় ভাঙচুর চালায় ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থীরা। এক পর্যায়ে তারা শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও কবি নজরুল কলেজে ভাঙচুর এবং লুটপাট চালায়। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে গতকাল সোমবার শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও কবি নজরুল কলেজের প্রায় ১২-১৫ হাজার শিক্ষার্থী শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও বাহাদুর শাহ পার্কে জমায়েত হয়। তারা আনুমানিক সকাল ১১টার দিকে ডেমরার ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের দিকে অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা করে। আগে থেকে পুলিশ ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল ও সোহরাওয়ার্দী কলেজের সামনে অবস্থান করে। কিন্তু উচ্ছৃঙ্খল শিক্ষার্থীরা পুলিশের বাধা প্রতিহত করে লাঠিসোঁটাসহ ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের দিকে অগ্রসর হলে যাত্রাবাড়ী মোড়ে পুলিশ পুনরায় বাধা দেয়। তারা বাধা অতিক্রম করে ওই কলেজে পৌঁছে ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়। ডিএমপি জানায়, ৩৫টি বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে ইউনাইটেড কলেজ অব বাংলাদেশ (ইউসিবি) নামে একটি ফোরাম গঠিত হয়। অপরপক্ষে রাজধানীর ঢাকা কলেজ, ইডেন কলেজ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, সরকারি তিতুমীর কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা কলেজ, মিরপুর বাংলা কলেজ ও সরকারি কবি নজরুল কলেজ মিলে সাত কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের একটি জোট রয়েছে। গত কয়েকদিন ধরে শিক্ষার্থী অভিজিতের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ৩৫ কলেজের ফোরাম ও সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও পরস্পরের প্রতি ঘৃণার মনোভাব সৃষ্টি হয়। ডিএমপি জানায়, পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য গতকাল সোমবার সকাল ৭টা থেকে রাজধানীর সূত্রাপুর ও ডেমরা এলাকায় পর্যাপ্ত জনবল মোতায়েন করা হয়। মোতায়েন করা পুলিশ সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। তবু উচ্ছৃঙ্খল শিক্ষার্থীরা পুলিশের বাধা অতিক্রম করে ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের দিকে অগ্রসর হয়ে ওই কলেজে হামলা চালায়। পুলিশ যেকোনও অপ্রীতিকর ঘটনা এড়ানোর জন্য অতিরিক্ত বল প্রয়োগ থেকে বিরত থাকে। পরিস্থিতি ভিন্ন খাতে চলে যাওয়ার আশঙ্কায় পুলিশ শান্তিপূর্ণভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। তা সত্ত্বেও উত্তেজিত শিক্ষার্থীরা ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও হামলায় জড়িয়ে পড়ে।