জাতীয় সংবাদ

জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেলো শেরপুরের ঐতিহ্যবাহী ছানার পায়েস

প্রবাহ রিপোর্ট ঃ শেরপুরে ভৌগোলিক নির্দেশক বা জিআই পণ্য হিসেবে তুলশীমালা চালের পর এবার ঐতিহ্যবাহী ছানার পায়েস স্বীকৃতি পেয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার শেরপুরের জেলা প্রশাসক তরফদার মাহমুদুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর শহরজুড়ে আনন্দ ছড়িয়ে পড়ে। এ উপলক্ষে সাধারণ মানুষের মাঝে ছানার পায়েস বিতরণ করেছে জেলা ব্র্যান্ডিং ওয়েবসাইট আওয়ার শেরপুর। আওয়ার শেরপুর-এর প্রতিষ্ঠাতা ও স্বত্বাধিকারী মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, ছানার পায়েস শেরপুরের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির অংশ। জিআই পণ্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় আমরা আনন্দিত। এটি শেরপুরে ব্র্যান্ডিং ও ঐতিহ্য আরও বহুদূর নিয়ে যাবে। তিনি আরও জানান, শেরপুরের ছানার পায়েস সারা দেশে বিখ্যাত। এটির জিআই স্বীকৃতি চেয়ে শিল্প মন্ত্রণালয়ের পেটেন্ট, শিল্প-নকশা ও ট্রেডমার্কস অধিদফতর (ডিপিডিটি) বরাবর আবেদন করেছে জেলা প্রশাসন শেরপুর। সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে জিআই স্বীকৃতি পেয়েছে গতকাল বৃহস্পতিবার। ডিপিডিটির মহাপরিচালক মুনিম চৌধুরীর স্বাক্ষরিত সনদের মাধ্যমে এই স্বীকৃতির কথা জানতে পারে শেরপুরবাসী। এতে সর্বস্তরের মানুষ উল্লসিত। ছানার পায়েস কীভাবে বানানো হয়, সেটা জানালেন শেরপুর শহরের গোয়ালপট্টি মহল্লার দুর্গাচরণ মিষ্টান্ন ভান্ডারের মিষ্টি তৈরির কারিগর রিপন চন্দ্র ভদ্র। তিনি বলেন, ছানার পায়েস তৈরি করতে দুধ, চিনি, ময়দা ও এলাচ লাগে। প্রথমে দুধ জ্বাল দিয়ে ক্ষীর করা হয়। এরপর আলাদাভাবে দুধ থেকে ছানা কেটে তাতে সামান্য ময়দা মিশিয়ে ছোট ছোট গুটি করা হয়। এই গুটি চিনিমিশ্রিত শিরায় ভিজিয়ে আগে তৈরি করা ক্ষীরে ছেড়ে হালকা আঁচে জ্বাল দেওয়া হয়। এভাবেই তৈরি হয় সুস্বাদু এই মিষ্টি। এক কেজি ছানার পায়েস তৈরি করার জন্য দুই কেজি দুধ, আধা কেজি চিনি, সামান্য পরিমাণ ময়দা ও ১০ থেকে ১৫ গ্রাম এলাচ লাগে। এ বিষয়ে শেরপুর শহরের রঘুনাথ বাজার মহল্লার অনুরাধা মিষ্টান্ন ভান্ডারের স্বত্বাধিকারী বাপ্পি দে বলেন, শেরপুরের প্রশাসন, সাংবাদিক, সুধীমহল থেকে শুরু করে সর্বমহলের সহযোগিতায় শেরপুরে তুলশীমালা চালের পর দ্বিতীয় জিআই পণ্য হিসেবে ঐতিহ্যবাহী ছানার পায়েস স্বীকৃতি পাওয়ায় শেরপুরের অর্থনৈতিক খাত চাঙ্গা হওয়ার পাশাপাশি দেশ ও দেশের বাইরে জেলার সুনাম ছড়িয়ে পড়বে বলে আমি মনে করি। জেলা প্রশাসক তরফদার মাহমুদুর রহমান বলেন, দেশের ৪৪তম জিআই পণ্যের মর্যাদা অর্জন করেছে শেরপুরের ছানার পায়েস। আমরা আজকেই (গতকাল বৃহস্পতিবার) সনদের কপি হাতে পেয়েছি। জিআই পণ্য হওয়ার কারণে তা সারা দেশে ছড়িয়ে যাবে। তিনি আরও বলেন, শেরপুরের সম্ভাবনায় অন্যান্য সকল পণ্যের জিআই স্বীকৃতি চেয়ে প্রস্তাব করা হবে শিগগিরই। উল্লেখ্য, শেরপুরের ছানার পায়েসের ঐতিহ্য শত বছরের পুরোনো। ব্রিটিশ আমলে এই মিষ্টি প্রথম তৈরি হয় শেরপুরের গোয়ালপট্টিতে। তখন হাতেগোনা দু-একটি দোকানে এই মিষ্টি হতো। এখন জেলা সদরেই অন্তত ২০টি দোকানে ছানার পায়েস হচ্ছে। এসব দোকানে প্রতিদিন গড়ে বিক্রি হয় প্রায় ২০০ থেকে ৩০০ কেজি ছানার পায়েস। শেরপুর শহরের বিভিন্ন মিষ্টির দোকানে প্রতিকেজি ছানার পায়েস প্রকারভেদে ৩৫০ থেকে ৭০০ টাকায় বিক্রি হয়। জেলার ঝিনাইগাতী, শ্রীবরদী, নকলা ও নালিতাবাড়ী উপজেলাতেও পাওয়া যায় এই মিষ্টি। এই ছানার পায়েস জেলা এবং জেলার বাইরের বিভিন্ন আত্মীয়স্বজনদের বাসায় বেড়াতে গেলে অথবা বিয়ে, জন্মদিন, ঈদুল ফিতর, ঈদুল আজহা, দুর্গাপূজাসহ বিভিন্ন ধর্মীয় উৎসব ও যেকোনও অনুষ্ঠানে আপ্যায়নের জন্য শেরপুরের মানুষের কাছে পছন্দের মিষ্টি ছানার পায়েস।

 

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button