জাতীয় সংবাদ

ঐক্যের মধ্যদিয়ে ভারতের আধিপত্য প্রতিহতের ঘোষণা

# ঢাকা টু আখাউড়া লংমার্চ #

প্রবাহ রিপোর্ট ঃ প্রবাহ রিপোর্ট ঃ ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ঢাকা টু আখাউড়া লংমার্চ করেছে বিএনপির তিন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন জাতীয়তাবাদী যুবদল, জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দল ও জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। কর্মসূচি থেকে লাখো নেতা-কর্মী ঐক্যের মধ্যদিয়ে ভারতের আধিপত্যকে প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়েছেন। তারা বলেন, বাংলাদেশের জনগণ কোনো দেশের প্রভুত্ব মেনে নেয়নি, ভারতের প্রভুত্বও মেনে নেবে না। দেশ নিয়ে কোনো ষড়যন্ত্র করতে চাইলে তা যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা প্রতিহত করবে।
ভারতের আগরতলায় বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনে হামলা, বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা অবমাননা, ভারতীয় মিডিয়ায় অপপ্রচার ও সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাঁধানোর ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে আজ বুধবার ঢাকা টু আখাউড়া লংমার্চ করে এ তিন সংগঠন। বুধ্বার (১১ ডিসেম্বর) রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে লংমার্চ শুরু হয়। এটি পল্টন-ফকিরাপুল-ইত্তেফাক মোড়-চিটাগাং রোড হয়ে বেলা সাড়ে ১২টায় ভৈরব পৌঁছায়। সেখানে সংক্ষিপ্ত পথসভা করে বিকাল সাড়ে ৩টায় লংমার্চের গাড়িবহর আখাউড়ায় পৌঁছায়। লংমার্চের গাড়ি বহর ঢাকা থেকে বের হওয়ার পর সড়কের দু’পাশে নেতাকর্মীদের সরব উপস্থিতি দেখা যায়। খাগড়াছড়ি, হবিগঞ্জ, সিলেট, ভৈরব, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া এবং আখাউড়াসহ আশপাশের বিভিন্ন জেলা থেকে তিন সংগঠনের নেতা-কর্মীরা পিকআপ, মোটরসাইকেলের বহর নিয়ে লংমার্চে অংশগ্রহণ করেন। এ সময় ‘দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা, ঢাকা’, ‘ভারতের দালালেরা, হুঁশিয়ার সাবধান’সহ ভারতবিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দেন তারা। কর্মসূচিকে ঘিরে গতকাল সকাল ৭টা থেকে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে খ- খ- মিছিল নিয়ে জড়ো হতে শুরু করেন যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা। সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের পর তারা লংমার্চ শুরু করেন। এর আগে উদ্বোধনী বক্তব্যে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘আজ দিল্লির যারা সাম্প্রদায়িক শাসকগোষ্ঠী, তারা মনে রেখ, তোমরা একজন ভয়ঙ্কর রক্তপিপাসুকে টিকিয়ে রাখার জন্য সমর্থন দিয়েছিলে। আজ ভারতের শাসকগোষ্ঠী গোটা পৃথিবীর গণতান্ত্রিক দেশগুলোর কাছে সমালোচিত। অথচ ভারত গণতান্ত্রিক দেশ। বাংলাদেশের মানুষের রক্তের যে তেজ, আত্মশক্তি, বীরত্ব- এটা দিল্লীর শাসকরা বুঝতে পারেননি। ভৈরবে পথসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এসএম জিলানী বলেন, ‘ভারতের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে আমরা লংমার্চ করছি। ভারত নিজেদের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র দাবি করে। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষের গণআন্দোলনে পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনা ও তার দোসরদের আশ্রয় দিয়েছে। আপনাদের (ভারত) জানিয়ে দিতে চাই, এ বাংলাদেশ শেখ হাসিনার বাংলাদেশ না। এই বাংলাদেশ সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, বেগম খালেদা জিয়ার ও তারেক রহমানের বাংলাদেশ।’ ভারতের বিভিন্ন কর্মকা-ের সমালোচনা করে জিলানী বলেন, ‘ভারত বাংলাদেশের বন্ধু না। বিশেষ করে সেখানে শেখ হাসিনা থাকে, বাংলাদেশের শত্রু থাকে, সেই ভারত বাংলাদেশের বন্ধু হতে পারে না।’ যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন বলেন, ‘আমরা বলেছি, ভারত বন্ধুরাষ্ট্র। কিন্তু সেখানে আমাদের হাইকমিশনে হামলা হয়েছে, পতাকা পোড়ানো হয়েছে। সীমন্তে আমাদের দেশের নাগরিকদের গুলি করে মারছে। ফেলানিকে হত্যা করে কাঁটাতারে ঝুঁলিয়ে রাখে। এটা কোনো বন্ধু রাষ্ট্রের কাজ হতে পারে না।’ তিনি বলেন, ‘ভারতের আশীর্বাদে এদেশে স্বৈরাচার প্রতিষ্ঠিতি হয়েছিল। এখন হাসিনাকে আশ্রয় দিয়েছে। দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।’ ভৈরব থেকে লংমার্চ নিয়ে বিকাল সাড়ে ৩টায় আখাউড়া সীমান্তে পৌঁছান নেতাকর্মীরা। সেখানে বিকাল সোয়া ৪টার দিকে আগরতলা সীমান্ত থেকে ১০০ মিটার দূরে স্থলবন্দর মাঠে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে যুবদলের সভাপতি মোনায়েম মুন্না বলেন, ‘বাংলাদেশের জনগণ অত্যন্ত স্বাধীনচেতা জাতি। আমরা বাংলাদেশকে নিয়ে ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সজাগ। তিনি বলেন, ‘ভারতে বাংলাদেশের হাইকমিশনের নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব ভারতের। তারা সেটা করতে ব্যর্থ হয়েছে। বাংলাদেশকে প্রতিবেশী রাষ্ট্র হিসেবে দেখতে হবে। আমাদের কোন প্রভু নেই। আমরা ভারতকে প্রতিবেশী রাষ্ট্র হিসেবে দেখি। আর শেখ হাসিনা সরকারকে ভারত আশ্রয় ও প্রশ্রয় দিয়েছে।’
স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসান বলেন, ‘দাসত্ব নয়, দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের জন্য জীবনকে বাজি রাখতে হবে। প্রয়োজনে দেশের সম্মান রক্ষায় আবারও রক্ত দেব, তবুও দিল্লির দাসত্ব মানবে না এদেশের জনগণ।’ ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, ‘এ লংমার্চের মাধ্যমে ভারতকে স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছি, শেখ হাসিনা আপনাদের পৃষ্ঠপোষকতায় হাজার হাজার নেতা-কর্মীকে গুম ও খুন করেছে। যতই ষড়যন্ত্র করুন না কেন, তা সফল হবে না।’
এদিকে এ কর্মসূচিতে ঘিরে নয়াপল্টন ও এর আশপাশের এলাকায় এবং লংমার্চের পথিমধ্যে কঠোর নিরাপত্তার বলয় গড়ে তুলেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। পাশপাশি সাদা পোশাকেও বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের দেখা গেছে। কর্মসূচিতে যুবদলের সিনিয়র সহ সভাপতি রেজাউল করিম পল, সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক বিল্লাল হোসেন তারেক, সাংগঠনিক কামরুজ্জামান জুয়েল, ঢাকা জেলা যুবদলের সভাপতি ইয়াসিন ফেরদৌস মুরাদ, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক নাজমুল হাসান, ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল, বর্তমান সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছির, সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক শ্যামল মালুম, সাংগঠনিক সম্পাদক আমান উল্লাহ আমান, দপ্তর সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন
Close
Back to top button