মধ্যরাতে সচিবালয়ে ভয়াবহ আগুন

# সচিবালয়ে আগুনের ঘটনায় ৭ সদস্যের তদন্তে কমিটি গঠন
# কমিটি আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন প্রদান করবে
# গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র পুড়ে ছাই #
প্রবাহ রিপোর্ট : মধ্যরাতে বাংলাদেশ সচিবালয়ের একটি ভবনে ভয়াবহ আগুন লেগেছে। প্রায় ৬ ঘণ্টা জ্বলার পর বাংলাদেশ সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনে লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার কথা জানায় ফায়ার সার্ভিস। তবে আগুন পুরোপুরি নেভাতে প্রায় ১১ ঘন্টা সময় লাগে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা ৫ মিনিটে আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। এর আগে গত বুধবার দিবাগত রাত ১টা ৫২ মিনিটে সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনে আগুন ধরে যাওয়ায় খবর জানায় ফায়ার সার্ভিস। সংস্থাটি বলছে, খবর পেয়ে ১টা ৫৪ মিনিটে ঘটনাস্থলে পৌঁছান ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। রাতভর জ্বলা আগুনে ভবনটির ছয়, সাত, আট ও ৯ তলা আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের মহাপরিচালকের (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহাম্মদ জাহেদ কামাল সংবাদ সম্মেলন করে বিষয়টি জানান। ডিজি জানান, আগুন নিয়ন্ত্রণে তাদের ২০ ইউনিট ও ২১১ ফায়ারকর্মী কাজ করেছে। তবে জায়গা সংকটের কারণে ১০টি ইউনিট-ই সক্রিয়ভাবে কাজ করতে পেরেছে। এখন ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা ভেতরের বিভিন্ন কক্ষে প্রবেশ করে আগুন নেভানোর চেষ্টা করছে। মুহাম্মদ জাহেদ কামাল বলেন, ছয় তলা ও সাত তলা বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। তাছাড়া বেশিরভাগ তলায় ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। মূলত বিদ্যুৎ লাইন দিয়ে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছিল। আগুনের উৎস এখন পর্যন্ত নিশ্চিত হওয়া যায়নি উল্লেখ করে ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক জানান, সর্ট সার্কিট থেকে আগুন লাগতে পারে। তারপরও আমরা নিশ্চিত না হয়ে এ বিষয়ে কিছুই বলতে চাই না। ‘পানির কোনও সংকট ছিল না’ দাবি করে ডিজি বলেন, ৫ ঘণ্টার মতো আগুন নিয়ন্ত্রণের সময় লাগলেও এখানে পানির কোনও সংকট ছিল না। পাশেই ওসমানি মিলনায়তন থেকে পানি পেয়েছি। ওয়াসার গাড়ি এসে পানি দিয়ে গেছে। কিন্ত সচিবলায়ের কক্ষগুলো আবদ্ধ ও গ্লাস লাগানো থাকায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সময় লেগেছে। অপরদিকে, সচিবালয়ের সাত নম্বর ভবনে অগ্নিকা-ের ঘটনায় ৭ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে সরকার। গতকাল বৃহস্পতিবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত অফিস আদেশ জারি করা হয়েছে। আদেশে বলা হয়, গত বুধবার রাত আড়াইটায় সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনে অগ্নিকা-ে বিষয় তদন্তের জন্য তদন্ত কমিটি গঠন করা হলো। কমিটিতে জননিরাপত্তা বিভাগ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার বিভাগ এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের একজন করে প্রতিনিধিকে রাখা হয়েছে; যারা যুগ্মসচিব থেকে উপরের পদমর্যাদার হবেন বলে আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়াও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ এবং ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের একজন করে প্রতিনিধিও থাকবেন। কমিটির সদস্য সচিব হবে হবেন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি। তবে কমিটি প্রয়োজনে এক বা একাধিক সদস্য কো-অপ্ট করতে পারবে বলেও আদেশে বলা হয়েছে। কমিটির কার্যপরিধি উল্লেখ করে বলা হয়েছে, এই কমিটি সংঘটিত অগ্নিকা-ের ‘উৎস ও কারণ’ উদ্ঘাটন; অগ্নিদুর্ঘটনার পেছনে কারও ব্যক্তিগত বা পেশাগত দায়দায়িত্ব আছে কিনা, তা উদঘাটন এবং এ জাতীয় দুর্ঘটনা প্রতিরোধকল্পে সুপারিশ প্রণয়ন করবেন। কমিটি আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন প্রদান করবে বলে অফিস আদেশে জানানো হয়।
এদিকে ,গুরুত্বপূর্ণ নথি পুড়ে ছাই হয়েছে সচিবালয়ে। প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র বাংলাদেশ সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনে ভয়াবহ অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) রাত পৌনে দুইটার দিকে এই অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটে। আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে ফায়ার সার্ভিসের ১৯টি ইউনিট। প্রায় ৬ ঘণ্টা চেষ্টার পর সকাল ৮টা ৫ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। ধারণা করা হচ্ছে, ওই ভবনে থাকা মন্ত্রণালয়গুলোর বহু গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র এরই মধ্যে পুড়ে গেছে। বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবন ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী সচিবালয়ের সাত নম্বর ভবনে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়সহ বিভাগের অফিস রয়েছে। যে ভবনে আগুন লেগেছে সেই ভবনেই রয়েছে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়। সচিবালয়ের ৭ নং এ ভবনে এ মন্ত্রণালয়গুলো ছাড়াও রয়েছে অর্থ ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়।
এ ভবনের নয় তলায় রয়েছে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়, আট তলায় রয়েছে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় এবং অর্থ মন্ত্রণালয়। সাত তলা পুরোটা জুড়ে রয়েছে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়, ছয় তলায় রয়েছে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। ভবনের পাঁচ তলায় রয়েছে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয়। তিন তলায় রয়েছে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ, স্থানীয় সরকার বিভাগ, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়, সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়। ভবনের দুই তলায় রয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ, বিদ্যুৎ বিভাগ এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ। সর্বশেষ নিচতলায় রয়েছে কেয়ারটেকার অফিস, গণপূর্ত বিভাগ, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। সকালে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহাম্মদ জাহেদ কামাল বলেছেন, সচিবালয়ে আগুনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আট ও নয়তলা। সেখানে থাকা নথিপত্র পুড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকতে পারে বলে ধারণা হচ্ছে।