জাতীয় সংবাদ

ফিরে দেখা ২০২৪: একতরফা নির্বাচন থেকে স্বৈরাচারের পতন, নতুন বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা

প্রবাহ রিপোর্ট: ২০২৪ বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি ঘটনাবহুল বছর। বছরটি ইতিহাসে জুলাই গণঅভ্যুত্থান এবং স্বৈরাচারের পতনের বছর হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে।
২০২৪ সাল, বাংলাদেশের ইতিহাসের অমর এক স্তম্ভ; দেশ ও মানুষের জন্য নতুন এক অভিযাত্রা। গৌরবোজ্জ্বল এ বছর শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্ব ইতিহাসের অংশ হয়ে থাকবে।
২০২৪ বাংলাদেশকে বিশ্বের বর্ষসেরা দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। ছাত্র-জনতার ঐক্যবদ্ধ লড়াই ও আত্মত্যাগের মাধ্যমে সমকালীন বিশ্বের বিরল এক গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে দেশ স্বৈরাচার ও আধিপত্যবাদী আগ্রাসন থেকে মুক্ত হয়। জনতার এ অভ্যুত্থান গোটা বিশ্বকে অবাক করেছে।
এ অভ্যুত্থান বাংলাদেশকে স্বাধীন, সার্বভৌম অস্তিত্ব নিয়ে আগামীতে টিকে থাকার প্রেরণা জোগাবে। অপশক্তির বিরুদ্ধে জাতীয় ঐক্য ও সংহতির এ দীক্ষা এদেশের জনগণের রক্তের মধ্যে সঞ্চালিত হয়েছে। যেকোনো বৈরিতার মোকাবিলায় এ শক্তির জাগরণ ঘটবে। নানা সম্প্রদায়, মত ও ধর্ম-বর্ণের সম্মিলিত শক্তি নিয়ে বাংলাদেশ নতুন সমৃদ্ধির অভিযাত্রায় এগিয়ে যাবে।
২০২৪ এর জুলাই-আগস্ট সেই ইতিহাসের সন্ধিক্ষণ, যা কখনো হারিয়ে যাবে না, শতাব্দীর পর শতাব্দী আমাদের জাতীয় ইতিহাসের গৌরবের স্মারক হয়ে থাকবে। এ বছর শেষহীন জুলাইয়ের মতো আমাদের স্মৃতি ও কর্মের মধ্যে উদ্ভাসিত হবে।
১৯৭১ সালের পরে ২০২৪ বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় একটি ঘটনাবহুল বছর। হত্যা, জুলুম, অত্যাচার আর সীমাহীন লুণ্ঠনে দেশ এক ভয়াবহ অন্ধকার গহ্বরে ঢুকে পড়েছিল। ১৫ বছর ধরে বিরোধী রাজনৈতিক দল থেকে সর্বস্তরের মানুষ গুম, হত্যা, নির্যাতন, লাখ লাখ মিথ্যা মামলা, বিনা বিচারে নৃশংস হত্যায় বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছিল।
২০২৪-এ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে জনগণ ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধের লড়াইয়ে নামে। ২০২৪ এর জুলাই-আগস্টে ইতিহাসের পাতায় হাজারো শহিদ আর আহত ছাত্র-জনতার রক্তের বিনিময়ে পতন হয় স্বৈরাচারের। বাংলাদেশের মুক্ত আকাশে উড়তে শুরু করে বিজয়ের পতাকা।
বছরের ঐতিহাসিক ঘটনা: জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থান
২০২৪ বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি ঘটনাবহুল বছর। বছরটি ইতিহাসে জুলাই গণঅভ্যুত্থান এবং স্বৈরাচারের পতনের বছর হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে। ১৫ বছরের স্বৈরাচার হটানোর এটি ছিল চূড়ান্ত পর্ব। ছাত্রদের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন ধাপে ধাপে স্বৈরাচার শেখ হাসিনার উৎখাতের একদফার আন্দোলনে পরিণত হয়।
২০২৪ সালের ৫ জুন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ কর্তৃক ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর বাংলাদেশ সরকারের জারি করা পরিপত্রকে অবৈধ ঘোষণার পর কোটা সংস্কার আন্দোলন নতুন করে শুরু হয়। জুলাইয়ে মাঝামাঝি থেকে এ আন্দোলন তীব্র হতে থাকে। ১৬ জুলাই রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ পুলিশের গুলিতে শহিদ হওয়ার পর সরকারি বেসরকারি সব বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজসহ দেশব্যাপী আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। ধারাবাহিক এ আন্দোলন ৩ আগস্ট শেখ হাসিনার পদত্যাগের একদফা দাবিতে পরিণত হয়।
এ আন্দোলনে তৎকালীন শেখ হাসিনার সরকার ভয়াবহ দমন-পীড়ন শুরু করলে এটি অসহযোগ আন্দোলনে রূপ নেয়। গণঅভ্যুত্থানের মুখে ৫ আগস্ট স্বৈরাচার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে ভারতে পালাতে বাধ্য হন। বাংলাদেশ এ সময় সাংবিধানিক সংকটে পড়ে এবং এর তিন দিন পরে নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে অন্তর্র্বতী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তার নেতৃত্বে গঠিত হয় উপদেষ্টা পরিষদ।
সিরিয়ায় নতুন এক সূর্যোদয়
বছর প্রায় শেষ হয়ে এসেছে, এমন এক সময়ে এসে সিরিয়ায় বইছে নতুন দিনের হাওয়া। মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যেই সিরিয়ার আলেপ্পো, হোমস, এবং দামাস্কের দখল নিয়ে নেয় বিদ্রোহী গোষ্ঠী। পিছু হঠতে বাধ্য হয় সরকারি সেনারা এবং ৮ ডিসেম্বর দেশ ছাড়েন প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ। জানা গেছে, আসাদকে আশ্রয় দিয়েছে রাশিয়া।
এ ঘটনার মধ্যে দিয়ে সিরিয়ায় আসাদ পরিবারের প্রায় ৫০ বছরের শাসনের অবসান ঘটে, সেই সঙ্গে শেষ হয় ১৩ বছরের গৃহযুদ্ধের। এই ক্ষমতা বদলের অগ্রভাগে ছিল হায়াত তাহরির আল-শামস (এইচটিএস) নামের গোষ্ঠীটি, যাকে জাতিসংঘ এবং যুক্তরাষ্ট্র উভয়েই সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে চিহ্নিত করে রেখেছে। তবে তা সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন স্বাগত জানিয়েছেন সিরিয়ার এই পরিবর্তনকে।
আসাদের পতনের পর পরই দামেস্কের সড়কে সড়কে নেমে আসেন উল্লসিত নাগরিকরা। প্রায় সঙ্গে সঙ্গে দেশে ফেরার তোড়জোড় শুরু করেন অন্যান্য দেশে থাকা সিরিয়ান উদ্বাস্তুরাও। কুখ্যাত সেদনায়া কারাগার থেকে বের করে আনা হয় বিপুল পরিমাণ বন্দীদের। তাদের অনেকেই ছিলেন বহির্জগৎ থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন। এমনকি অনেক বন্দীর পরিবার জানতেনও না তার বেঁচে আছেন না মৃত।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button