জাতীয় সংবাদ

সংবিধান সংস্কার : কিভাবে গঠিত হবে উচ্চ ও নি¤œকক্ষ ঃ মেয়াদ ৪ বছর

প্রবাহ রিপোর্টঃ দ্বিকক্ষ-বিশিষ্ট আইনসভার প্রস্তাব করেছে সংবিধান সংস্কার কমিশন। এরমধ্যে একটি নি¤œকক্ষ বা জাতীয় সংসদ (ন্যাশনাল এসেম্বলি) এবং একটি উচ্চকক্ষ (সিনেট)। উভয় কক্ষের মেয়াদ হবে চার বছর। বুধবার (১৫ জানুয়ারি) প্রধান উপদেষ্টার কাছে সংবিধান সংস্কার কমিশন তাদের সুপারিশগুলো জমা দিয়েছে। কমিশনের সুপারিশগুলো এখানে তুলে ধরা হলো- নি¤œকক্ষ ঃ নি¤œকক্ষ গঠিত হবে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে সরাসরি নির্বাচিত সদস্যদের সমন্বয়ে। ৪০০ (চারশো) আসন নিয়ে নি¤œকক্ষ গঠিত হবে। ৩০০ জন সদস্য একক আঞ্চলিক নির্বাচনী এলাকা থেকে সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হবেন। আরো ১০০ জন নারী সদস্য সারা দেশের সকল জেলা থেকে এই মর্মে নির্ধারিত ১০০ নির্বাচনী এলাকা থেকে কেবল নারী প্রার্থীদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতার মাধ্যমে সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হবেন। রাজনৈতিক দলগুলো নি¤œকক্ষের মোট আসনের ন্যূনতম ১০৭% আসনে তরুণ-তরুণীদের মধ্য থেকে প্রার্থী মনোনীত করবে। সংসদীয় নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ন্যূনতম বয়স কমিয়ে ২১ বছর করা হবে। দুইজন ডেপুটি স্পিকার থাকবেন, যাদের মধ্যে একজন বিরোধী দল থেকে মনোনীত হবেন। একজন সংসদ সদস্য একই সাথে নি¤œলিখিত যেকোনো একটির বেশি, পদে অধিষ্ঠিত হবেন না: (ক) প্রধানমন্ত্রী, (খ) সংসদনেতা এবং (গ) রাজনৈতিক দলের প্রধান। অর্থবিল ব্যতীত নি¤œকক্ষের সদস্যদের তাদের মনোনয়নকারী দলের বিপক্ষে ভোট দেওয়ার পূর্ণ ক্ষমতা থাকবে। আইনসভার স্থায়ী কমিটিগুলোর সভাপতি সবসময় বিরোধীদলীয় সদস্যদের মধ্য থেকে মনোনীত হবেন। উচ্চকক্ষঃ উচ্চকক্ষ মোট ১০৫ জন সদস্যের সমন্বয়ে গঠিত হবে; এর মধ্যে ১০০ জন সদস্য জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রদত্ত মোট ভোটের সংখ্যানুপাতে নির্ধারিত হবেন। রাজনৈতিক দলগুলো সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতির ভিত্তিতে উচ্চকক্ষের মনোনয়ের জন্য সর্বোচ্চ ১০০ জন প্রার্থী মনোনয়ন দিতে পারবে। এই ১০০ জন প্রার্থীর মধ্যে কমপক্ষে ৫ জন আইন দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে – সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে অনগ্রসর সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব করবে। অবশিষ্ট ৫টি আসন পূরণের জন্য রাষ্ট্রপতি নাগরিকদের মধ্য থেকে (যারা কোনো কক্ষেরই সদস্য ও রাজনৈতিক দলের সদস্য নন) প্রার্থী মনোনীত করবেন। কোনো রাজনৈতিক দলকে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতির ভিত্তিতে উচ্চকক্ষে প্রতিনিধিত্বের যোগ্য হতে হলে- জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রদত্ত ভোটের অন্তত ১ শতাংশ নিশ্চিত করতে হবে। উচ্চকক্ষের স্পিকার সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে উচ্চকক্ষের সদস্যদের মধ্য থেকে নির্বাচিত হবেন। উচ্চকক্ষের একজন ডেপুটি স্পিকার থাকবেন যিনি সরকার দলীয় সদস্য ব্যতিত উচ্চকক্ষের অন্য সকল সদস্যের মধ্য থেকে নির্বাচিত হবেন। সংবিধান সংশোধনীঃ সংবিধানের যেকোনো সংশোধনী উভয কক্ষের দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার অনুমোদন প্রযোজন হবে। প্রস্তাবিত সংশোধনী উভয় কক্ষে পাস হলে, এটি গণভোটে উপস্থাপন করা হবে। গণভোটের ফলাফল সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে নির্ধারিত হবে। আন্তর্জাতিক চুক্তিঃ জাতীয় স্বার্থ বা রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা প্রভাবিত করে— এমন কোন আন্তর্জাতিক চুক্তি সম্পাদনের পূর্বে আইনসভার উভয় কক্ষের সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে অনুমোদন নিতে হবে।অভিশংসনঃ রাষ্ট্রদ্রোহ, গুরুতর অসদাচরণ বা সংবিধান লঙ্ঘনের জন্য রাষ্ট্রপতিকে অভিশংসন করা যাবে। নি¤œকক্ষ অভিশংসন প্রস্তাবটি পাস করার পর তা উচ্চকক্ষে যাবে, এবং সেখানে শুনানির মাধ্যমে অভিশংসন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে।নির্বাহী বিভাগঃ কমিশন সুপারিশ করছে যে আইনসভার নি¤œকক্ষে যে সদস্যের প্রতি সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যদের সমর্থন আছে, তিনি সরকার গঠন করবেন। নাগরিকতন্ত্রের নির্বাহী কর্তৃত্ব প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে মন্ত্রিসভা দ্বারা প্রয়োগ করা হবে। কমিশন রাষ্ট্রপতির কিছু সুনির্দিষ্ট দায়িত্বের কথা সুপারিশ করছে; এই বিশেষ কার্যাবলী কিংবা সংবিধানে উল্লেখিত বিষয় ছাড়া— অন্য সকল বিষয়ে রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শক্রমে কাজ করবেন। কমিশন রাষ্ট্রীয় কার্যাবলীতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা আনয়ন এবং রাষ্ট্রীয় অঙ্গ ও প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যে ভারসাম্য নিশ্চিত করার জন্য একটি জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) গঠনের সুপারিশ করছে।

 

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button