বিচার বিভাগ-জনপ্রশাসনে সংস্কার নাগরিকদের হেনস্তা থেকে মুক্তি দেবে: ড. ইউনূস
![](https://dailyprobaha.com.bd/wp-content/uploads/2023/11/post-fp.webp)
প্রবাহ রিপোর্ট : দেশের বিচার বিভাগ এবং জনপ্রশাসনে সংস্কার বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশের নাগরিকগণ বহু বছর ধরে যে হেনস্তা এবং অপমানের অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে তা থেকে মুক্তি পাবে বলে আশা করেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। গতকাল বুধবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন এবং জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন গ্রহণ অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন হস্তান্তর করেন কমিশন প্রধান আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মোমিনুর রহমানের নেতৃত্বে তার টিম এবং জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন হস্তান্তর করেন কমিশনের প্রধান আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরীর নেতৃত্বে তার টিম। বিচার বিভাগ সংস্কার এবং জনপ্রশাসন সংস্কারের গুরুত্ব তুলে ধরে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, দু কথা দিয়ে শুরু করলেন, (সারসংক্ষেপ) আমাদেরকে জানালেন এতে কত জনের মাথা নাড়ানো দেখলাম; তাতে বোঝা গেল কোন জায়গায় আপনারা হাত দিয়েছেন। অধ্যাপক ইউনূস বলেন, এই দুটি কমিশন সংস্কার হলে, এটা এমন জিনিস, বাংলাদেশের এমন কোনো নাগরিক নেই যে এটাতে টাচড (সম্পৃক্ত) হয়নি। অন্য কমিশনের অনেক বড় বড় জিনিস থাকে, কিন্তু সরাসরি টাচ (জড়িত) করে না, ইনডাইরেক্টলি হয়। তবে এটা সরাসরি। আপনি দরিদ্র বা ধনী হতে পারেন এই দুটি থেকে মুক্তি নাই। এই দুটিরর সঙ্গে সম্পৃক্ত হতেই হবে। ন্যায় বিচার ও সেবা পাওয়া নিয়ে বাংলাদেশের নাগরিকদের দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমাদের যে অভিজ্ঞতা, দেশের যে অভিজ্ঞতা, সেটা হলো হেনস্তার অভিজ্ঞতা। অপমান, অবমাননার অভিজ্ঞতা। আমরা নাগরিক হিসেবে যে আমাদের একটা দাবি আছে, অধিকার আছে, সেটা ভুলে যাওয়ার অভিজ্ঞতা। নতজানু হওয়ার অভিজ্ঞতা। ইউনূস বলেন, এখানে (সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন) যে আশার কথা শুনিয়েছেন, এই যে সংক্ষিপ্ত সার যেটা আমাদেরকে দিলেন, সেটাতেই এত আশা জাগায়। হয়তো আমরা এটা থেকে মুক্ত হবো। আমরা সত্যিকার ভাবে নাগরিক হিসেবে অধিকার ফিরে পাবো। আপনাদের এই রিপোর্টের মাধ্যমে সেই প্রত্যাশা পূরণ হোক। তিনি বলেন, এই রিপোর্ট সংস্কার কমিশনের রিপোর্ট হিসেবে জনগণের হাতে দিয়ে দেবো। রাজনৈতিক দলের হাতে দিয়ে দিবো। সিভিল সোসাইটি অর্গানাইজেশনের কাছে দিয়ে দেবো। যাতে করে তারা একমত হতে পারে যে এগুলো করে যাওয়া ভালো। আমরা মনে করছি, আমরা মাথা নাড়ছি, আমাদের ভালো লাগছে। সবাই যেন এভাবে মাথা নাড়ে, এ ঠিক কথা বলেছেন, আমাদের প্রাণের কথা বলেছেন, কারণ আমি তো ভুক্তভোগী। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমাদের তো প-িত হতে হবে না এ বিষয়ে। অন্য বিষয়ে প-িত হতে হবে। যখন সংবিধান নিয়ে বসি তখন প-িত হতে হবে। এটাতে প-িত হওয়ার দরকার নাই। এটা আমার সঙ্গে কথাবার্তা। আমাকে যে হেয়-প্রতিপন্ন করে প্রতিদিন, এটা থেকে আমাদের মুক্তি দেবে। আশা এটা সবাই গ্রহণ করবে এবং বাস্তবায়ন করবে। প্রতিবেদন তৈরির জন্য বিচার বিভাগ এবং জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, এটা বাংলাদেশের ইতিহাসের একটা স্মরণীয় পুস্তক। এটা থেকে যাবে। আমরা কী করলাম, না করলাম। ভবিষ্যত প্রজন্ম এটা নিয়ে আমাদের বিচার করবে। পেয়েছিলেন আপনারা করেন নাই কেন। এটা এমন নয় যে আপনারা জানতেন না বলেই করেন নাই। তিনি বলেন, এটা শুধু বাংলাদেশের জন্য অবদান না। বিশ্বের জন্য অবদান। সব জাতিকে এটা ফেস করতে হয়। এটার ইংরেজি অনুবাদ করার পরামর্শ দেন। আপনারা যেহেতু এত কষ্ট করেছেন এই কষ্টের ফসলটা সারা পৃথিবীর প্রাপ্য। এটা জাতির সম্পদ হিসেবে, পৃথিবীর সম্পদ হিসেবে গ্রহণ করলাম। এর আগে গত ৮ আগস্ট সরকার গঠন করার পর রাষ্ট্রের বিভিন্ন খাতের সংস্কারের জন্য ছয়টি কমিশন গঠন করা হয়। এর মধ্যে গত ১৫ জানুয়ারি নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন, পুলিশ এবং সংবিধান সংস্কারে গঠিত কমিশন প্রধান উপদেষ্টার কাছে রিপোর্ট জমা দেয়।